রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে আশ্রয় চেয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীর চিঠি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৩; সময়: ৭:০৭ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে আশ্রয় চেয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীর চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক : কিশোরী মেয়েটি (১৫) এখন হাসপাতালে। তার বাবা ফোন ধরছেন না। মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। নানা-নানি তাকে আর নিতে চায় না। সে গৃহকর্মী হিসেবে রাজশাহী নগরের একটি বাসায় ছিল। গৃহকর্তার নির্যাতনের শিকার হয়ে সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাই সে আর সেখানে ফিরতে চায় না। গৃহকর্তা তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তখন সে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে আশ্রয় চেয়ে চিঠি পাঠায়।

মেয়েটি এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। তার কাগজে লেখা রয়েছে ‘রিপিটেড সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট।

গত সোমবার এই চিঠি পান জেলা প্রশাসক। এরপর তিনি সেটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক হাসিনা মমতাজের কাছে পাঠান। চিঠির ওপরে লিখে দেন, জরুরি আলোচনা প্রয়োজন। চিঠি পেয়েই সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক হাসিনা মমতাজ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করেন। এরপর তিনি মেয়েটিকে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ড থেকে ওসিসিতে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ওই কিশোরীকে সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত এক অধ্যাপকের বাড়িতে গত বছরের ১২ আগস্ট গৃহকর্মীর কাজে রেখে যান তার এক আত্মীয়। ওই গৃহকর্তার বিরুদ্ধেই যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে ওই কিশোরী।

ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়ি নওগাঁয়। ১০ বছর আগে তার মা–বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এরপর তাঁরা দুজনেই আবার অন্য জায়গায় বিয়ে করেছেন। মা-বাবার কেউই মেয়েকে তাঁদের সঙ্গে নেননি। অনেক দিন নানির বাড়িতেই থেকেছে এই কিশোরী। গত বছরের ১২ আগস্ট রাজশাহী নগরের এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজে রেখে যান তার এক আত্মীয়। এই গৃহকর্তার বিরুদ্ধেই যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে ওই কিশোরী। অভিযুক্ত ব্যক্তি (৮০) একটি সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপ পরিচালক হাসিনা মমতাজ জানান, ওই কিশোরী যে বাসায় থেকে গৃহকর্মীর কাজ করত, সে বাসায় একজন নার্স ভাড়া থাকতেন। তিনিই নির্যাতনের শিকার এই কিশোরীকে উদ্ধার করে ৫ জানুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে দেন। এরপর গৃহকর্তা তাকে বাসায় আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই ওই কিশোরী তার সঙ্গে যায়নি। সে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের যুববিষয়ক ক্লাবের এক সদস্যের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে আশ্রয় চেয়ে চিঠি দেয়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা পেয়ে তিনি শিশুবিষয়ক পুলিশ ও সমাজসেবার প্রবেশন কর্মকর্তাকে পাঠান। তারা মেয়েটিকে ওসিসিতে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।

এখন এই কিশোরীর এ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। তিনি বলেন, মেয়েটি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ওই গৃহকর্তাকে দেখলেই সে ভয় পাচ্ছে। তার চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর হাসপাতাল তাদের কাছে কিশোরীকে হস্তান্তর করবে। তার যাওয়ার জায়গা নেই বলে তাকে সরকারি সেফ হোমে রাখা হবে।

যোগাযোগ করা হলে ওই গৃহকর্তার পুত্রবধূ দাবি করেন, মেয়েটিকে তারা মেয়ের মতোই আদর করতেন। রাতে তার সন্তানের সঙ্গে নিয়েই ঘুমাতেন। শারীরিক নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তার এসব অভিযোগ শুনে তারা বিস্মিত।

রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান জানান, যেদিন কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেদিন হাসপাতালে থাকা পুলিশের মাধ্যমেই খবর পেয়েছিলেন। তখন শুনেছিলেন তাকে মারধর করা হয়েছে। যৌন নির্যাতনের বিষয়টি শোনেননি। সমাজসেবা অধিদপ্তর কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কিছু জানানো হয়নি। তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে