বাঘায় একদিকে ড্রেজিং কাজ, আরেক দিকে ভাঙ্গনে হাজার বিঘা ফসলি জমি বিলি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৩; সময়: ৬:৫৩ অপরাহ্ণ |
বাঘায় একদিকে ড্রেজিং কাজ, আরেক দিকে ভাঙ্গনে হাজার বিঘা ফসলি জমি বিলি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাঘা : পদ্মার ভাঙনে রাজশাহীর বাঘার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের দেড় কিলোমিটার ফসলি জমিসহ আমবাগান নদী গর্ভে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, নদী ড্রেজিংয়ের সময় দুটি জায়গায় স্পার নির্মাণের বালু স্তূপ করে রাখায় স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শিাল কর্মযজ্ঞে পদ্মা নদীর বাম তীরের স্থাপনাসমূহ নদী ভাঙন হতে রক্ষা প্রকল্পের নদী ড্রেজিং এর কাজ শুরু করা হয়েছে।

সাদি এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী, পাকুড়িয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম (ছানা) বলেন, পদ্মার তীর রক্ষার্থে খনন কাজ করা হচ্ছে। এই খনন কাজে উত্তোলন করা বালু স্তুপ করে রাখার কারণে পানির প্রবাহ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে আরেক দিকে ভাঙছে। কিন্ত তার আগেই যদি একটি স্পার নির্মাণ করে পানির প্রবাহটা বন্ধ করে দিত,তাহেল ভাঙতোনা। তার দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি বালু ফেলে স্পার নির্মাণ করে দেয়, তাহলে ভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন বলে জানান তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ‘পদ্মার তীর রক্ষার্থে প্রস্তাবিত স্থায়ী বাঁধ, স্পার (রাজশাহী টি বাঁধ ও আই বাঁধ সদৃশ্য) নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় আটটি প্যাকেজে পদ্মা নদী খননের জন্য ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সরোয়ার-ই-জাহান জানান,এই প্রকল্পের আওতায় বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর থেকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনগর পর্যন্ত ১২ দশমিক ১ কিলোমিটার নদী খনন করা হচ্ছে। নদীর তলায় ১২০ মিটার চওড়া করে খনন করতে হবে। প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর । চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে । গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে এই খনন কাজ শুরু হয়েছে।

সরেজমিন, পাকুড়িয়া বাজারের দক্ষিনে পদ্মার তীরবর্তী কামালদিয়াড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চাপ চাপ মাটি নদীতে ভেঙে পড়ছে। এই ভাঙনের কবলে পড়ে খেজুর গাছ কেটে অটোভ্যানে নিয়ে যাচ্ছিলেন পাকুড়িয়ার ওহিদুর রহমান। তার বাগানে প্রায় ২০ বছর বয়সের ৭০টি আমগাছ ও এক বিঘা জমির গম নদীতে ভেঙে গেছে।

একই গ্রামের সানিউল হক মালিথা জানান,ওই মাঠে ১০-১২ বছর বয়সী তার ১০০ আমগাছ ছিল। ভাঙনের কারণে সবগুলো কেটে নিয়েছেন। এই ড্রেজিং এর প্রভাবে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এই স্রোত বন্ধ করতে না পারলে এই জনপদই শেষ হয়ে যাবে ।

পাকুড়িয়া গ্রামের কৃষ্ণ ও সজল এর নয় বিঘা জমির মধ্যে অবশিষ্ট রয়েছে এক বিঘা। তাদের মতো আব্দুল খালেকের দেড় বিঘা গম আর আট কাঠা বেগুনের ক্ষেত, শাহিন উদ্দিনের এক জমির পেঁয়াজ, আমিরুল ইসলামের ১৬ বিঘা জমির ১৫ বছর বয়সের ৬০০ আমগাছ সব নদীতে ভেঙে গেছে।

সেখানেই কথা হলে, একটি প্যাকেজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স লিঃ এর প্রতিনিধি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ডিজাইন মোতাবেক নদী খনন করা হচ্ছে। এতে অপরদিকে ভাঙলে তাদের কিছু করার নেই।

উপজেলার পাকুড়িয়া ও চকরাজাপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে বলে জানান, ইউনিয়ন দু’টির চেয়ারম্যান মেরাজ সরকার ও ডিএম বাবুল মনোয়ার। এতে ১০০০(এক) হাজার বিঘা আবাদি জমি নদী গর্ভে গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ড্রেজিংয়ের সাময়িক প্রভাবে তার উপজেলার অনেক কৃষিজমির ক্ষতি হয়েছে। এর সুরক্ষা দেওয়া দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডেরই।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, বাঘা এলাকায় নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড মোট ৭২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখ ভাল করছেন। বিষয়টি তাদের অবগত করবো। তবে অপরিকল্পিত কিনা,তারাই বিষয়টি দেখবেন।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক সফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, এলাকা পরিদর্শন করে দেখেছি, অপরিকল্পিত ড্রেজিং এর কারণে নদী ভাঙছে-এটা সঠিক না। নদীর মূল প্রবাহের কারণেই নদী ভাঙছে । নিদিষ্ট সময়ের মধ্যেই ড্রেজিং এর স্তুপ করে রাখা বালু দিয়েই স্পার নির্মাণ করা হবে। তবে এতে সময় লাগতে পারে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে