হিমেল হাওয়ায় ছিন্নমুল মানুষের বেহাল দশা, শীত বস্ত্রের জন্য হাহাকার

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৩; সময়: ১:৪৭ অপরাহ্ণ |
হিমেল হাওয়ায় ছিন্নমুল মানুষের বেহাল দশা, শীত বস্ত্রের জন্য হাহাকার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী : নওগাঁর বদলগাছী ও পত্নীতলা উপজেলায় গত কয়েকদিন ধরেই চলছে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ। উত্তরের হীমেল হাওয়ায় ও কনকনে শীতের দাপটে মানুষ যেন প্রকৃতির কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সমাজের ছিন্নমুল ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। কনকনে শীতের কারণে শ্রমজীবি মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেনা। এ কারণে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে তারা জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

এ সকল পরিবারের প্রবীণ ও শিশুরা অমানবিক জীবন যাপন করছে। পাতলা ছেঁড়াকাঁথা ও কম্বল জড়িয়ে তাঁরা প্রচন্ত শীতে রাত্রী পার করছে। এ কারণে শীতজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। কনকনে শীতে ছিন্নমুল ও শ্রমজীবি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করলেও শীতবস্ত্র নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি বলে জানা গেছে।

জেলার ২টি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু শীতবস্ত্র কম্বল পরিষদের মাধ্যমে বিতরণ করা হলেও কোন স্থানীয় সংসদ সদস্য বা উপজেলা চেয়ারম্যানরা ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণের কোন খবর পাওয়া যায়নি।

সরেজমিনে বুধবার সকালে নজিপুর পৌর এলাকা বাঁদ পুঁইয়া দীঘি পাড়ে গিয়ে কথা হয় আদিবাসী কর্মকার সম্প্রদায়ের কয়েক জন নারী পুরুষের সাথে। তাঁরা চুলোর আগুনে শরীর গরম করার চেষ্টা করছিলেন।

এ সময় বেলী কর্মকার নামে এক নারী দীঘি পাড়ে বসবাসরত কয়েকটি বাড়ি ঘুরিয়ে দেখিয়ে জানান, এখানে ৩৫/৪০টি আদিবাসী কর্মকার সম্প্রদায়ের বসবাস। যারা সকলেই দিনমজুর। এখানকার বাড়ি ঘরের চেহারা দেখেই এখানকার মানুষের অবস্থা বিষয়ে সহজেই ধারণা পাওয়া যায়।

৬০ বছর বয়সী ভারতি কর্মকার জানান, তার স্বামী নেই। একমাত্র মেয়েকে বিবাহ দিয়েছেন। দিন মজুরী করে পেট চালান তিনি। তীব্র শীতের কারণে ৩ দিন ধরে কাজে যেতে পারেননি। ঘরে খাবার না থাকায় পাশের বাড়ি হতে চাল ধার করে নিয়ে এসে চুলায় চড়িয়েছেন। ঘরে শীতবস্ত্র না থাকায় ছেঁড়া একটি কাঁথা গায়ে জড়িয়ে রাত পার করছেন। ছোট একটি টিনের ঘরে তিনি একাই বসবাস করেন।

সুশীল কর্মকারজানান, তাঁর একমাত্র ছেলে পাগল। কাজ করতে পারেন না। ছেলের বউ অন্যের বাড়িতে দিন মজুরীর কাজ করে যে আয় করেন তা দিয়েই ৬ সদস্যর পরিবার কোন রকমে চলে। শীতের কারণে ছেলের বউ কাজে যেতে না পারায় ঘরে খাবার নেই। সকালে আধা কেজি চালের খিচুড়ি রান্না করে ভাগ করে খেয়েছেন। দুপুর ও রাতের খাবার কি হবে বা আদৌ হবেই কিনা তা জানা নেই। জীবণ ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অন্নের সংস্থান করতেই হিমশীম খেতে হয় বলে তীব্র শীত মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র ক্রয়ের সামর্থ্য তাদের নেই। বাধ্য হয়েই পাতলা কাঁথা আর কম্বল গায়ে জড়িয়ে রাত পার করতে হচ্ছে।

শুধু ভারতি আর সুশীলা কর্মকারই নয় এই দুটি উপজেলার আদিবাসী পল্লীতে বসবাসরত সকল পরিবারের অবস্থা প্রায় একই। শৈত্য প্রবাহ জনিত তীব্র শীতে ছিন্নমুল ও শ্রমজীবি এই মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করলেও তাদের জন্য কেউ শীতবস্ত্র নিয়ে এগিয়ে আসেনি এবং কোন খোঁজ খবরও নেয়নি বলে অভিযোগ করে জানান।

এ বিষয়ে নজিপুর পৌরসভার মেয়র মো. রেজাউলকবির চৌধুরীবলেন, সকলকে শীতবস্ত্র প্রদান করা সম্ভব নয়। আমি ৩ শ’ পিছ কম্বল ক্রয় করে পর্যাক্রমে বিতরণ করব।

এ বছর কম্বল বিতরণ করেছেন কিনা বলে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুল আলম বললে, আমাকে খোঁজ নিয়ে বলতে হবে। আর ব্যক্তিগতভাবে কোন কম্বল বিতরণ করা হয়নি।

বদলগাছী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত এই উপজেলায় মোট ৩ হাজার ৯২০টি কম্বল বরাদ্ধ পেয়ে ছিলাম। বরাদ্ধকৃত সব কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো কম্বলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এই পর্যন্ত ৫ হাজার ৩৯০টি কম্বল সরকারিভাবে বরাদ্ধ পেয়ে ছিলাম। সেই সব কম্বল বিতরণ করা শেষ হয়েছে। আরো কম্বল বরাদ্ধের জন্য চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ পেলেই আবারো বিতরণ করা হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে