পুলিশ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট প্রকাশের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২৩; সময়: ১:৪১ অপরাহ্ণ |
পুলিশ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট প্রকাশের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের গেজেট প্রকাশের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাদপড়া অবসর প্রাপ্ত পুলিশ মুক্তিযোদ্ধারা।

বুধবার (৪ জানুয়ারী) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অবসর প্রাপ্ত পুর্লিশ সদস্যদের মধ্যে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন রাজশাহী মহানগরীর হড়গ্রাম পূর্বপাড়া গ্রামের অবসর প্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পুলিশ বাহিনীর অগ্রণী ভূমিকা এক গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ডাকে ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ পুলিশ বাহিনীর বীর বাঙালিরা সর্বপ্রথম ঝাঁপিয়ে পড়ে, পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, চাকুরী ও জীবন বাজি রেখে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে পাক হানাদার বাহিনী কে উপর্যপরি আক্রমণ করে পরাস্তের মধ্য দিয়ে ছিনিয়ে আনি মহান বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এই স্বাধীনতার সুফল বাঙালি জাতি পেলেও আমরা পুলিশ বাহিনী হতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও আমরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাইনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২২ নভেম্বর ২০১৭ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে নির্দেশনা দেন। একাত্তরের পর বাহিনীতে ফেরা মুক্তিযোদ্ধারাও পাবেন ভাতা। যাহা ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এই ভাতা প্রযোজ্য হবে। আমাদের সেই স্বীকৃতির প্রস্তাব বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকারর নথিতে লাল ফিতায় বাধা। আমরা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে যোগাযোগ করলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির গেজেট প্রকাশের বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৪০০০ পুলিশ সদস্য অংশগ্রহণ করি, তার মধ্যে ১৫০০ জন যুদ্ধে শহীদ হন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকা থেকে পুলিশ সদস্য মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করে যাচাই-বাছাই অন্তে উক্ত তালিকা জামুকায় প্রেরিত হলে ২০২১ সাল থেকে পড়ে রয়েছে। সেখান থেকে গেজেট প্রকাশের কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কালবিলম্ব করছে। পুলিশ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়টি স্ব-স্ব চাকরি বইতে লিপিবদ্ধ থাকার পরেও দীর্ঘ ৫২ বছর পরেও স্বীকৃতি মেলেনি।

১৯৯৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা লাল মুক্তিবার্তায় প্রকাশ করলেও আমাদের মতই অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পুলিশ সদস্যের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পরবর্তীতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করে যাচাই-বাছাইঅন্তে নাম গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে অদ্যবধি সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, বি জি বি ও আনসারসহ বেসামরিক ব্যক্তি, বিরাঙ্গাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেট হলেও পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের (আমাদের) আমলাতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণ দেখিয়ে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের ২০১৭ সালের নির্দেশনা উপেক্ষা করে জামুকায় ফাইল বন্দি করে রাখা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ বাহিনীর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের নামের তালিকা বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অবসর প্রাপ্ত পুলিশ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, পুলিশ সদস্য আলমগীর আলীর ছেলে ডা: মোজাম্মেল হক ও পুলিশ সদস্য মতিয়র রহমানের ছেলে আব্দুল খালেক বকুল।

অবসর প্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ আরো বলেন, আমি পুলিশ বাহিনীতে চাকরী করা অবস্থায় ৭ নং সেক্টরের অধীন দিনাজপুর, ফুলবাড়ী এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ করি। ১৯৯৮ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করে তখন আমি আবেদন করেও তালিকাভূক্ত হতে পারিনি। এই বিষয়টি তখন এসপিকে জানালে তিনি বলেন, ভূল হয়ে গেছে আবার আবেদন করেন। পরে আবেদন করি। এর পর ২০০৩ সালের দিকে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকে। আমি আওয়ামী লীগের চেতান হওয়ায় সেই সময় বাধ্যতামূলক আমাকে অবসরে পাঠিয়ে দেয়। আমি এই অন্যায়ের প্রতিবাদে হাইকোর্টে মামলা করেলে এক বছর পর চাকরী ফিরে পেয়ে ২০০৮ সালে অবসর গ্রহণ করি।

মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, সেই সময় আমি পুলিশ বাহিনী থেকে রাজশাহী পুলিশ লাইন্সও পবা মোহনপুর এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। যুদ্ধপরবর্তি সময়ে চাকরী ছেড়ে নিজ বাড়ীতে থাকতে শুরু করে। পরে মাইকিং করে জানালো হলো যারা চাকরিতে চিলো তাদের যোগদিতে। আমরা যোগ করি। বিভিন্ন সময়ে অনেকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছে আমরা একাধিকবার আবেদেন করলেও এখনো গেজেট ভূক্তহতে পারিনি তাই সরকারের নিকট গেজেট ভূক্ত হওয়ার আবেদন জানান তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে