হজরত ঈসা আ. সম্পর্কে কোরআনে যা বলা হয়েছে

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২২; সময়: ১২:২৪ অপরাহ্ণ |
খবর > ধর্ম
হজরত ঈসা আ. সম্পর্কে কোরআনে যা বলা হয়েছে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : হজরত ঈসা (আ.) আল্লাহ তায়ালার বান্দা ও তাঁর প্রেরিত রাসুল। তিনি বনী ইসরাইলের সর্বশেষ রাসুল। ২ হাজারেরও বেশি বছর আগে ফিলিস্তিনে তিনি জন্মলাভ করেন তিনি। আল্লাহর কুদরতে পৈতৃক সম্পর্ক ছাড়াই কুমারী মায়ের গর্ভে জন্মলাভ করেন এ নবী।

আসমানি প্রসিদ্ধ চার কিতার মধ্যে ইনজিল তার ওপর নাজিল হয়। হজরত ঈসা (আ.) আগের সব নবী ও আসমানি কিতাবের সত্যায়নকারী এবং সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের সুসংবাদ দান করেন।

আল্লাহ তায়ালা হজরত ঈসা আ. সম্পর্কে বলেন, ‘যখন ফেরেশতাগণ বলল, হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বাণীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ-ঈসা ইবনে মারইয়াম; দুনিয়া ও আখিরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।

যখন তিনি মায়ের কোলে থাকবেন এবং পূর্ণ বয়স্ক হবেন, তখন তিনি মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। আর তিনি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। তিনি বললেন, পরওয়ারদেগার! কেমন করে আমার সন্তান হবে; আমাকে তো কোনো পুরুষ-মানুষ স্পর্শ করেনি। বললেন, এভাবেই। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোনো কাজ করার জন্য ইচ্ছা করেন তখন বলেন যে, ‘হয়ে যাও’, অমনি তা হয়ে যায়। ‘ (সুরা আলে ইমরান : ৪৫-৪৭)

হজরত ঈসা (আ.) মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান করেছেন। তাদের মহান রবের একনিষ্ঠ পথ অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ঈসা যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ আগমন করল, তখন বলল, আমি তোমাদের কাছে প্রজ্ঞা নিয়ে এসেছি এবং তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছ, তা ব্যক্ত করার জন্য এসেছি। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার কথা মানো। নিশ্চয়ই আল্লাহই আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক। অতএব, তাঁর এবাদত করো। এটা হলো সরল পথ। ‘ (সুরা আয যুখরূফ : ৬৩-৬৪)

আল্লাহ তায়ালা তার এই নবীকে বিশেষ কিছু মুজিজা (অলৌকিক ক্ষমতা) দান করছিলেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তুমি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে, দোলনায় এবং পরিণত বয়সেও এবং যখন আমি তোমাকে গ্রন্থ, প্রগাঢ় জ্ঞান, তাওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দিয়েছিলাম এবং যখন তুমি কাদামাটি দিয়ে পাখির প্রতিকৃতির মতো প্রতিকৃতি নির্মাণ করতে আমার আদেশে। অতঃপর তুমি তাতে ফুঁ দিতে; ফলে তা আমার আদেশে পাখি হয়ে যেত এবং তুমি আমার আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করে দিতে এবং যখন তুমি আমার আদেশে মৃতদের বের করে দাঁড় করিয়ে দিতে এবং যখন আমি বনি-ইসরাঈলকে তোমাদের থেকে নিবৃত্ত রেখেছিলাম, যখন তুমি তাদের কাছে প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে। অতঃপর তাদের মধ্যে যারা কাফির ছিল, তারা বলল, এটা প্রকাশ্য জাদু ছাড়া কিছুই নয়।

আর যখন আমি হাওয়ারিদের মনে জাগ্রত করলাম যে আমার প্রতি এবং আমার রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো, তখন তারা বলতে লাগল, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে আমরা আনুগত্যশীল। ‘ (সুরা আল-মায়েদা : ১১০-১১

হজরত ঈসা আ. যখন তার যুগের মানুষদের আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান করছিলেন তখন ইহুদিরা তাঁর উপর খুব ক্ষিপ্ত হয় এবং তাঁকে অনেক কষ্ট দেয়। পাশাপাশি হত্যার ষড়যন্ত্রও করে। এ হীন উদ্দেশ্যে তারা হযরত ঈসা (আ.)-এর ঘর অবরোধ করে এবং তাঁকে হত্যা করার জন্য তাইতালানুস’ নামক জনৈক নরাধমকে পাঠায়।

কিন্তু মহান আল্লাহ হজরত ঈসা (আ.)-কে জীবিত অবস্থায় আসমানে তুলে নেন। আর তাইতালানুস’ নামক ঐ ব্যক্তিকে হযরত ঈসা (আ.)-এর আকৃতি দান করেন। সে হজরত ঈসা (আ.)-কে কিছু করতে না পেরে বাইরে চলে আসে। অপেক্ষমান লোকজন তাকে হজরত ঈসা (আ.) মনে করে পাকড়াও করে। এক তাকে ক্রুশ বিদ্ধ করে হত্যা করে। এরপর তারা হজরত ঈসা আ.কে হত্যা করেছে বলে প্রচার করে। বর্তমানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মাঝেও এই ধারণা প্রচলিত রয়েছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা এই ধারণাকে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে- ‘আর তাদের এ কথা বলার কারণে যে আমরা মারইয়াম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি, যিনি ছিলেন আল্লাহর রাসুল। অথচ তারা না তাকে হত্যা করেছে, আর না শূলীতে চড়িয়েছে, বরং তারা এক রকম ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুত তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে, তারা এ ক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধু অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোনো খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তারা তাকে হত্যা করেনি, বরং আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নিয়েছেন নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। ‘ (সুরা নিসা : ১৫৭-১৫৮)

ঈসা (আ.)-কে অনেকে ‘আল্লাহ’র আসনেই বসিয়ে থাকেন এবং তার উপাসনা করেন। এমন করা উচিত নয়, তা আল্লাহ তায়ালা নিজেই কোরআনে কারিমে বলেন- ‘তারা কাফির, যারা বলে যে মরিয়ম- তনয় মসীহ-ই-আল্লাহ; অথচ মসীহ বলেন, হে বনি-ইসরাইল, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, যিনি আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই। ‘ (সুরা মায়েদা : ৭২)

অসংখ্য হাদিসের আলোকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে কিয়ামতের আগে ঈসা (আ.) আবার পৃথিবীতে আসবেন। আল কোরআনেও এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আহলে কিতাবের যত শ্রেণি রয়েছে, তারা সবাই (কিয়ামতের আগে) ঈসার ওপর ইমান আনবে, ঈসার মৃত্যুর আগে। ‘- (সুরা নিসা, আয়াত : ১৫৯)। এ আয়াতের দু’টি ব্যাখ্যা রয়েছে।

প্রথম ব্যাখ্যা হলো, প্রত্যেক ইহুদিই তার অন্তিম মুহূর্তে যখন পরকালের দৃশ্যাবলি অবলোকন করবে, তখন ঈসা (আ.)-এর নবুয়তের সত্যতা উপলব্ধি করবে। কিন্তু তখনকার ইমান তাদের আদৌ কোনো উপকারে আসবে না। এর দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হলো, কিয়ামতের নিকটবর্তী যুগে ঈসা (আ.) আবার পৃথিবীতে আগমন করবেন। তখন ইহুদি-খ্রিস্টানরা মুসলমানদের মতো বিশুদ্ধ বিশ্বাস নিয়ে ইমানদার হবে। আর যারা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে, তাদের নিশ্চিহ্ন করা হবে। – (মা’আরেফুল কোরআন)

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে