মহাদেবপুরে অবৈধ হাট বসিয়ে লাখ লাখ টাকা লুটপাট

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২২; সময়: ৩:৫৮ অপরাহ্ণ |
মহাদেবপুরে অবৈধ হাট বসিয়ে লাখ লাখ টাকা লুটপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক, মহাদেবপুর : নওগাঁর মহাদেবপুরে অবৈধ হাট বসিয়ে হাটুরেদের কাছ থেকে টোল আদায় করে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার । ১ যুগেরও অধিক সময় ধরে এই অবস্থা চললেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এই অবৈধ হাট বন্ধে কোনই ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার হাতুড় ইউনিয়নের গাহলী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স অদুরেই আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর ও রাস্তার পাশে বিশাল জায়গা জুড়ে বসানো হয়েছে ধানের হাট। এখানে মহাদেবপুরের সহ বিভিন্ন অটোবয়লার ব্যবসায়ীরা ধান কিনছেন। স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে কেনা এসব ধান হাটের মধ্যেই জড় করে রাখা হয়েছে। সেসব ধান হাজার হাজার বস্তায় ভরে সারি সারি ট্রাকযোগে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন অটো বয়লারে ও ব্যবসায়ীদের গোডাইনে।

স্থানীয় একজন কৃষক জানালেন প্রতি সপ্তাহের রোববার ও বৃহস্পতিবার দুদিন এখানে হাট বসে। ধান কেনার জন্য হাট কমিটির নিয়োগ করা আদায়কারীকে খাজনা দিতে হয়।

কয়েকজন হাটুরে জানালেন, দীর্ঘ ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে এখানে হাট লাগানো হচ্ছে। আগে শুধুমাত্র চাল-ডাল, মাছ-মাংস, তরি-তরকারি আর তৈজসপত্র বেচাকেনা হলেও গত কয়েক বছর ধরে বিশাল এলাকায় চলছে ধান কেনাবেচা।

এই হাটের মাত্র দুই কিলোমিটার পূর্বেই রয়েছে ছাতুনতলী হাট। এই হাটের ইজারাদার রাহেনুল হক লুসা অভিযোগ করেলেন, তিনি এ বছর সরকারী কোষাগারে ১৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়ে ছাতুনতলী হাটটি ইজারা নিয়েছেন। গাহলী বাজারে অবৈধ হাট লাগানোর ফলে ছাতুনতলী হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা কম আসছে। এতে যেমন সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি তারও ক্ষতি হচ্ছে। অবৈধ হাটটি বন্ধ করার জন্য তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও জানান।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র জানায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ হাটটির সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য হাতুড় ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১৮ ডিসেম্বর বিষয়টির তদন্তে সহযোগিতার জন্য উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার জিল্লুর রহমানও ঘটনাস্থলে যান। তিনি জানান, হাটটি অবৈধ। সরকার এখান থেকে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এই হাট লাগানোর ফলে ছাতুনতলী হাটের ইজারাদার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

জানতে চাইলে হাতুড় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, গাহলী হাট কমিটি হাটের নামে জমি লিখে দিয়েছেন। জেলা সায়রাত মহল ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন না নিয়ে হাটটি অবৈধভাবে লাগানো হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তার উত্তর দিতে চাননি। তিনি রিপোর্ট দিলে ইউএনও’র কাছ থেকে তা জেনে নেয়ার পরামর্শ দেন।

গাহলী হাট কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান জানান, সায়রাত মহল ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি। তবে হাটের জন্য জমি দান করা হয়েছে। হাটটি অবৈধ জেনেও এলাকার স্বার্থে সব মহলকে ম্যানেজ করে এটি চালানো হচ্ছে। হাট থেকে আদায় করা খাজনার টাকা দিয়ে হাটের উন্নয়ন করা হয়। এখান থেকে আদায় হওয়া টাকা আত্মসাত করা হয়না বলেও তিনি দাবী করেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে