বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে প্রথম জয় চায় আ.লীগ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২২; সময়: ২:৫০ অপরাহ্ণ |
বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে প্রথম জয় চায় আ.লীগ

অদ্বৈত কুমার আকাশ, নন্দীগ্রাম : নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা ও কাহালু উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন গঠিত।

আসনটিতে ২০১৮ সালে হিসেবে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৮ হাজার ৬৪৪ জন। এর মধ্যে নন্দীগ্রাম উপজেলার ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪১০ জন ও কাহালু উপজেলার ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৩৪ জন।

সীমানা পরিবর্তনের পর ১৯৮৬-২০১৮ সাল পর্যন্ত ৮টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১টি জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামায়াত ও বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা কখনও জয় পায়নি। যদিও জোটের কারণে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল।

এখন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেনের পদত্যাগের মধ্যে দিয়ে বগুড়া-৪ আসনটি শূন্য হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী বগুড়া-৪ আসনে ভোট হবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগাতে চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সরব হয়ে উঠেছে। তবে অতিতে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের নির্বাচনি ফলাফল আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলনা।

১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহীদুল আলম দুদুকে পরাজিত করে জাতীয় পার্টির মামদুদুর রহমান চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হন। তবে আওয়ামী লীগের দাবি ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহীদুল আলম দুদু ভোটে এমপি হয়েছিল। পরের দিন জাতীয় পার্টির মামদুদুর রহমান চৌধুরীকে এমপি ঘোষনা দেওয়া হয়।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী আব্দুর রহমান ফকির ৩৪,৩৭২ ভোট পান। তাকে পরাজিত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থী আজিজুল হক মোল্লা ৪৩,২৪৭ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহীদুল আলম দুদু পায় ৩১,১৯২ ভোট। আজিজুল হক মোল্লার মৃত্যুর পর ১৯৯৪ সালের উপনির্বাচনে তার ছেলে জিয়াউল হক মোল্লা এমপি নির্বাচিত হয়।

১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে জিয়াউল হক মোল্লা আবারও এমপি নির্বাচিত হয়। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে সব দলের অংশগ্রহনের নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থী জিয়াউল হক মোল্লা ৬৪,১৪১ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহীদুল আলম দুদু পায় ৩৮,৩৯৫ ভোট। এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী নাজির আহমেদ মন্ডল পায় ৩২,৬২৫ ভোট।

২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জিয়াউল হক মোল্লা ১,১৪,৮১৪ ভোট পেয়ে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহীদুল আলম দুদু পায় ৭২,৪৬৪ ভোট।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জেড. আই. এম. মোস্তফা আলী ১,৩১,৪১৪ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনের মহাজোট প্রার্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন পায় ৭৫,৯৯১ ভোট। জোটের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলনা।

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন না করায় মহাজোট প্রার্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন ২২,২০৩ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। নির্বাচনের জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন বাচ্চু পান ১৩,৪৮৯ ভোট। এ নির্বাচনে জোটের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলনা।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থী মোশারফ হোসেন ১,২৬,৭২২ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মহাজোট প্রার্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন ৮৪,৬৭৯ ভোট পান। ওই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলনা।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন পদত্যাগ করেছে। তাই বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায়না আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। মোশারফ হোসেনের পদত্যাগের ঘোষনার পড়েই নির্বাচনের জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে ভোটার ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে।

বগুড়া-৪ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত যাদের নাম বেশি শোনা যাচ্ছেন তারা হলেন-জাসদের বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল করিম তানসেন, নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ, নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা, কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন কবিরাজ, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আহছানুল হক ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন মোস্তফা ফারুক, নন্দীগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত-সমালোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম প্রমুখ।

নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা বলেন, আমি এলাকার মানুষের সুখেদুখে পাশে আছি। কাহালু-নন্দীগ্রাম এলাকার মানুষের পাশে থাকতে চাই। তিনি আরও বলেন, উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আবেদন করবেন।

নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ বলেন, আমার বাবা ও চাচা আওয়ামী লীগ এবং কাহালু-নন্দীগ্রামের মানুষের জন্য কাজ করেছে। আমার ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য জীবন দিয়েছে। আমি দ্বিতীয় বারের মত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হয়েছি। আসন্ন উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইব।

বগুড়া জেলা জাসদের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল করিম তানসেন জানিয়েছেন, তিনি উপনির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। তার সময়ে এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আহছানুল হক বলেন, আমি এলাকার মানুষের সুখেদুখে পাশে আছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও মনোনয়ন বোর্ডের কাছে মনোনয়ন চাইব।

কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন কবিরাজ জানান, উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য সে আবেদন করবে। তার আশা দল তাকে মনোনয়ন দিবে।

নন্দীগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এ উপনির্বাচনে অংশগ্রহনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন মোস্তফা ফারুক বলেন, বগুড়া-৪ আসনে দলের পক্ষ থেকে আমাকে আগাম মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

হিরো আলম জানান, ২০১৮ সালে বগুড়া-৪ আসন থেকে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। এবারও উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে