মোহনপুরে আলুক্ষেতের যত্নে ব্যস্ত কৃষক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২২; সময়: ৮:৪১ অপরাহ্ণ |
খবর > কৃষি
মোহনপুরে আলুক্ষেতের যত্নে ব্যস্ত কৃষক

রায়হানুল হক রিফাত : রাজশাহীর মোহনপুরে আলুচাষিরা ক্ষেতের পরিচর্চা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ অঞ্চলে অর্থকরি ফসলের অন্যতম হচ্ছে পান চাষ ও আলুর আবাদ। বর্তমানে আলু আবাদ নিয়ে রঙ্গীণ স্বপ্ন বুনছে এ এলাকার চাষিরা।

সরজমিনে আলুর ক্ষেতে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আলু রাজশাহীর অর্থকরী ফসল। ধানের পরেই ব্যাপকভাবে আলুর আবাদ হয়ে থাকে। মৌসুমের প্রায় শেষে মজুতকৃত আলুর দাম ভাল পেয়েছে। এতে চাষিরাও খুশি। এরআগে বিগত ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে করোনা সংকট ও অতিবৃষ্টিকে পুঁজি করে আলু চাষির কাছ থেকে কম দামে কিনে ব্যবসায়ীরা অনেকটা অনাকাঙ্খিতভাবে বেশী দামে আলু বিক্রি করেছে। সরকারের হস্তক্ষেপেও দাম অনিয়ন্ত্রিত ছিলো। পরে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মজুতকৃত আলুতে প্রথম থেকে লোকসানের আশংকা থাকলেও শেষ পর্যন্ত মজুতদারদের লাভ হয়েছে। মাঝখানে দাম পড়ে যাওয়ার আশংকায় মোহনপুরের প্রান্তিক চাষিরা লোকসান করেই আলু বিক্রিতে বাধ্য হয়েছেন।

কৃষকরা বলছেন, আলু চাষে এবছর লাভ হলে আগামী বছর লোকসান। লাভ লোকসানের দুরাচলের মধ্যে দিয়েই আশায় বুকবেধে আলুর আবাদ করে চলেছেন চাষিরা। তবে বেশীরভাগ লাভ জমা হয়েছে আলু চাষি কাম ব্যবসায়ী অর্থাৎ হিমাগারে রক্ষিত আলু ব্যবসায়ীর ঝুলিতে। এরপরেও প্রান্তিক কৃষকরাও ব্যাপক জমিতে আলু চাষ করে থাকেন।

চাষিদের ভাষ্য মতে আরো জানা যায়, আলুতে যেমন ব্যাপক লাভ, তেমনি লোকসানের ধ্বসও কম নয়। আলুর আবাদে কারো কারো ভাগ্যে বৃহস্পতি দেখা দিলেও অনেকের ভাগ্যে জুটেছে মৃত্যু। বর্তমানে আলুর আবাদের উৎপাদন খরচ বেশী। এখন চাষি ছাড়াও কাম ব্যবসায়ীরাই আলুর আবাদ করছেন। লাভ লোকসান মাথায় নিয়ে প্রতিবছরই লাভের আশায় চাষে নামছেন তারাও।

উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্যিকভাবে ৩০ বিঘা জমিতে আলু চাষে যুক্ত হয়েছি, বর্তমানে প্রতি বিঘা জমিতে সব খরচ মিলিয়ে আলু উৎপাদন করতে ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হবে। তবে আমাদের এলাকায় অবৈধ ভাবে পুকুরের সংখ্যা বাড়ায় আলু চাষের জমি কমেছে। তাই এ বছর আলুর ভালদামসহ ব্যাপক চাহিদা থাকবে বলে আশা করছি।

কেশরহাট পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের আলু চাষী আফাজ উদ্দিন বলেন, আমি ১২৫ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছি। পানিসেচ সহ প্রতিবিঘা জমি ১৫ হাজার টাকা করে নিয়েছি কন্টাক্টে শুধুমাত্র আলুচাষের জন্য মানে প্রায় ১২০ দিনের জন্য। সব খরচ মিলে আমার প্রতিবিঘা জমিতে প্রায় ৪৫-৫০ হাজার টাকা করে খরচ পড়বে। আশা করছি আবহাওয়া ভাল থাকলে প্রতিবিঘা জমিতে প্রায় ১শত ১০/২০ মণ করে আলু পাবো। দাম ভাল থাকণে লাভবান হবো ইনশাল্লাহ্।

উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা সিরাজুল, মোজাম্মেল ও তোফায়েল নামের আলু চাষীরা বলেন, এই অঞ্চলের মাটি আলু চাষের উপযোগী বলে মনে করি। তাই আমরা আমাদের কৃষি জমিতে আলু চাষ করছি। আলু গাছ বড় হতে শুরু করেছে, তাই আমরা আলু জমির পরিচর্যা করছি ও কৃষি কর্মকতাদের সাথে যোগাযোগ করে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছি। এবার অনুকুল আবহাওয়া বিরাজ করায় উৎপাদন ভাল হবে আশা করছি। সব মিলিয়ে আলুর ফলন ভাল ও দাম বেশি পাইলে আমরা আর্থিক লাভবান হতে পারবো।

মোহনপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রহিমা খাতুন বলেন, প্রতিনিয়ত চাষিদের সাথে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ যোগাযোগ রাখছেন। আমরা কৃষি নিয়ে কাজ করি। কৃষকের স্বার্থই সরকারের স্বার্থ। কৃষকের সেবা ও দেখভালের জন্যই আমরা নিয়োজিত।

তিনি আরো বলেন, এবছরে উপজেলা জুড়ে ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, এরিস্টটল, ষাটে জাতের আলু ৩২৪ হেক্টর জমি চাষ হচ্ছে। আমাদের পরমার্শ ও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতি হেক্টর জমিতে ২৬ টন করে আলু উৎপাদন হবে বলেও জানান তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে