সুজানগরে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্যমে জীবন যুদ্ধে সুমি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২২; সময়: ৮:৪৮ অপরাহ্ণ |
সুজানগরে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্যমে জীবন যুদ্ধে সুমি

এম এ আলিম রিপন, সুজানগর : সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় ১৯৯৬ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় পাবনার সুজানগর উপজেলার ভবানীপুর এলাকার মোছা.শামীমা ফেরদৌস সুমির। সংসার জীবনের সংসার থেকেই পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় সুমিকে সইতে হয়েছিলো স্বামীর নির্যাতন।

এক মেয়ে সন্তান জন্মের পর ২০০৫ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। এমতাবস্থায় সন্তানের ভরণ পোষণ দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন শামীমা ফেরদৌস সুমি। কিন্তু অভাব অনটন থেমে রাখতে পারেনি তাকে।স্থানীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এখন তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। একজন সফল নারী হিসেবে বেশ কয়েকটি শ্রেষ্ঠ জয়িতার খেতাবও পেয়েছেন এই উদ্যোক্তা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিবাহ বিচ্ছেদের পর পিতা হারুনর রশীদের বাড়িতে অবস্থান করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সুমি গ্রহণ করেন কারিগরি প্রশিক্ষণ। নিজেকে যুক্ত করেন সেলাই এমব্র্রয়ডারি, জরিক, বাটিকসহ নানান কাজে। একটু একটু করে সুমির জীবনে বয়ে আনে সফলতা। নিজের পাশাপাশি অবহেলিত নারীদের সফলতা বয়ে আনতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রশিক্ষক হিসেবে। প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও খুলে বসেছেন পৌর বাজারের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সুমি বিউটি পার্লার নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

সুমির প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে বেশ কয়েকজন বেকার নারীর। শুধু তাতে থেমে নেই তিনি। নিজেকে সুশিক্ষিত করতে ২০০৬ সালে ভর্তি হয়েছিলেন স্থানীয় মধুপুর হাজী অজেল আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে। পরবর্তীতে এসএসসি পাশের পর ভর্তি হন সুজানগর মহিলা কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি পাশ করে পাবনা কলেজ থেকে স্নাতক অর্জন করেন। এবং বর্তমানে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের উপর মাস্টার্সে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবং তার একমাত্র মেয়ে পড়াশুনা করছেন ঢাকার উত্তরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে গড়ে ওঠা ভুক্তভোগী এই নারী উদ্যোক্তা এখন বিরোধিতা করছেন বাল্যবিবাহের।

মোছা.শামীমা ফেরদৌস সুমি বলেন, ‘জীবনটা অনেক কষ্টের। হাজারও কষ্ট উপেক্ষা করে আজ আমি এই পর্যায়ে। তবে ভালো লাগে যখন একজন অবহেলিত নারীর পাশে দাঁড়িয়ে তাকে দক্ষ করতে পেরে। তবে সব বাবা মায়ের উচিত নিজেদের মেয়েকে শিক্ষার পাশাপাশি কোন একটা কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া। যাতে স্বামীর সংসারে গিয়ে তারা নিজেরাও কোন কিছু করতে পারে। স্বামীর উপর নির্ভরশীল হতে না হয়। তবে সকল বাবা-মার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, যেন তাদের ছেলে কিংবা মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত না করে কেউ বিয়ে না দেয়।

অল্প বয়সে বিয়ে হলে অনেকে সংসার কি বুঝে উঠতে পারে না।উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো.আফজাল হোসেন বলেন, সুমি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রথমে ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এরপরে তিনি সেলাই মেশিন কিনে বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করেন। বর্তমানে সে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন । অর্জন করেছেন অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার।

উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার মো.নাজমুল হোসেন বলেন, সুমি আমাদের এখানে একটা উন্নয়নের পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করছে। তাকে দেখে অন্যান্য বেকার যুব মহিলারা উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.তরিকুল ইসলাম বলেন, শামীমা ফেরদৌস সুমি তার দুঃখটাকে পরশ পাথর হিসেবে গ্রহণ করে আজকে সে স্বাবলম্বী হয়েছে। তাকে দেখে সুজানগরের পিছিয়ে পড়া নারীরা এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে