সঠিক রোগ নির্ণয়ে ভেড়ার রক্তের ব্যবহার বাড়ছে

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২২; সময়: ১:২৮ অপরাহ্ণ |
সঠিক রোগ নির্ণয়ে ভেড়ার রক্তের ব্যবহার বাড়ছে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক :  আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে মানুষের রোগ শনাক্তকরণে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এর মধ্যে ভেড়ার রক্ত ব্যবহার করে ‘কালচার টেস্ট’ করা হচ্ছে। সঠিক রোগ নির্ণয়ে এ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বলে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।

দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও মাইক্রোবাইলজি ল্যাবরেটরিতে রোগ নির্ণয়ে ভেড়ার রক্তের ব্যবহার হচ্ছে। আর এ কারণে রীতিমতো ভেড়ার খামারও তৈরি করা হয়েছে। খামারগুলোর দেখভালের জন্য সরকারি কর্মচারী ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও পশু চিকিৎসকরা নিয়োজিত রয়েছেন।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) নির্বাহী পরিচালক অণুজীব বিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহা যুগান্তরকে বলেন, সাধারণত একজন মানুষ যখন ব্যাকটেরিয়া, মাইক্রো অর্গানিজম বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের কাছে যান, তখন চিকিৎসক ওই রোগীর রক্তে কোনো ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, মাইক্রো-অর্গানিজম বা ভাইরাস আছে সেটি শনাক্তে মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দেন।

রোগীর শরীর থেকে নেওয়া রক্তের ব্যাকটেরিয়াকে জীবিত রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ল্যাব সংশ্লিষ্টরা। রক্তে কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে এবং কোন রোগের জন্য দায়ী সেটি তারা শনাক্ত করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের এ পরীক্ষাকে ‘কালচার টেস্ট’ বলা হয়। আর এ পরীক্ষায় ভেড়ার রক্ত ব্যবহার করা হয়। তিনি আরও বলেন, কালচার টেস্টের মাধ্যমে রোগীর ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন যেমন-টাইফয়েড, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়াজনিত রোগ নির্ণয় করা হয়। এছাড়া শরীরে ফোড়া, কাটা বা ক্ষতস্থানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণজনিত রোগের চিকিৎসায়ও এ পরীক্ষা করা হয়।

ড. সমীর আরও জানান, শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে রক্ত, সিএসএফ, ইউরিন (প্রস্রাব), ফ্লুইড কালচার, বডি ফ্লুইড কালচার, স্টুল কালচার, পস কালচারসহ প্রায় ১০০ ধরনের স্যাম্পলের কালচার টেস্ট করা হয়। তাদের লক্ষ্য প্রতিদিন গড়ে ১৬০টি থেকে ১৮০টি কালচার টেস্ট করা হয়। স্যাম্পল প্রসেস করতে ল্যাবে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ কালচার মিডিয়া প্লেট প্রস্তুত করা হয়।

ভেড়ার রক্তের ব্যবহারের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সিএইচআরএফ সিনিয়র রিসার্চ টেকনোলজিস্ট ও ল্যাব ম্যানেজার হাফিজুর রহমান জানান, রোগীর রক্তসহ অন্যসব নমুনায় বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করার জন্য ভেড়া বা ঘোড়ার রক্তের সঙ্গে রোগীর নমুনা মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের কালচার মিডিয়ায় সংমিশ্রণ করা হয়।

ভেড়ার রক্তে থাকা পুষ্টি উপাদান খেয়ে ওই ব্যাকটেরিয়া (মানুষের) কয়েক কোটি ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দিতে পারে। তখন কালচার মিডিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণ সহজ হয় এবং তা নির্মূল করতে কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে তা জানা যায়। এছাড়া প্রয়োজনীয় চিকিৎসা কী হবে তাও নিশ্চিত হওয়া যায়।

কালচার মিডিয়ায় ভেড়ার রক্ত কেন ব্যবহার হয়-এমন প্রশ্নে ল্যাব টেকনিশিয়ানরা জানান, কালচার টেস্টের জন্য প্রতিদিন শতাধিক মানুষের রক্ত ও অন্যসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত মানুষের রক্তে থাকা বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন খেয়ে থাকে ব্যাকটেরিয়া। তাই রোগীর নমুনা নেওয়ার পর কালচার মিডিয়া ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে