মেয়ের অবশিষ্ট দেহাবশেষের আশায় দিন গুনছে আয়াতের পরিবার

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২২; সময়: ১২:২১ অপরাহ্ণ |
মেয়ের অবশিষ্ট দেহাবশেষের আশায় দিন গুনছে আয়াতের পরিবার

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : চট্টগ্রামে পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতের অবশিষ্ট দেহাবশেষ পাওয়ার আশায় প্রহর গুনছেন পরিবারের সদস্যরা। শ্বাসরোধ করে হত্যার পর শিশুটির নিথর দেহটিকে ছয় টুকরো করে সাগরে ফেলে দিয়েছিল অপহরণকারী আবীর আলী। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী দুই দফায় অভিযান চালিয়ে শিশু আয়াতের দুটি পা এবং মাথা উদ্ধার করে পুলিশ

বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় নামাজে জানাজার মাধ্যমে আয়াতের খণ্ডিত দেহ দাফন করা হয়। এখনো তার শরীর এবং দুটি হাত উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা। তবে শুক্রবার দিনভর অভিযান চালিয়েও কিছুই পায়নি পিবিআই।

এদিকে সন্তান হারানোর শোক না কাটতেই শিশু আয়াতের বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে আয়াতের বাবা সোহেল রানা এই অভিযোগ করেন।

সূত্র জানায়, ১৫ নভেম্বর বিকালে মাদ্রাসায় পড়তে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা এলাকার সোহেল রানার মেয়ে আলিনা ইসলাম আয়াত। আয়াতকে না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে ইপিজেড থানায় নিখোঁজ ডায়রি করা হয়। এরই মধ্যে এ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। গ্রেপ্তার করা হয় আয়াতের খুনি আবীর আলীকে।

নিখোঁজের ১০ দিন পর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, তাদের আদরের পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং হত্যা করে ছয় টুকরো করা হয়। তার শরীরের খণ্ডিত অংশ কয়েকটি প্যাকেট করে সাগরে ফেলে দেয় আবীর আলী। এরপর থেকে দুই দফায় আবীর আলী এবং এক দফায় আবীরের বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয় পিবিআই।

আবীরের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে গত বুধবার শিশু আয়াতের দুটি পা উদ্ধার করে পিবিআই। নগরীর বন্দরটিলার আকমল আলী ঘাটসংলগ্ন স্লুইসগেটের খাল থেকে উদ্ধার হওয়া দুটি পা একটি প্যাকেটের ভেতর ছিল। পরদিন বৃহস্পতিবার একই স্থানের আশপাশ থেকে অপর একটি প্যাকেট উদ্ধার হয়, যেখানে ছিল আয়াতের মাথা। তবে এখনো আয়াতের শরীর এবং দুটি হাত পাওয়ার আশায় উন্মুখ হয়ে আছে তার পরিবার। যদিও লাশের খণ্ডিত অংশ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পিবিআই।

আকুল আর্তনাদ করে আয়াতের বাবা সোহেল রানা বলেন, ‘আমার মেয়ের মতো একটি নিষ্পাপ শিশুকে কেউ হত্যা করতে পারে, তা কল্পনাও করিনি। কেমন করে তার নিথর দেহটিকে ছয় টুকরো করা হলো? মেয়ের শরীরটা যদি পেতাম, তাহলে শেষবারের মতো বুকে জড়িয়ে নিতাম। হাত দু’খানি যদি পেতাম! কেউ পারবে না আমার মেয়ের খণ্ডিত দেহাবশেষ ফিরিয়ে দিতে?’

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বন্দরটিলার আকমল আলী ঘাটসংলগ্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালায় পিবিআই। এতে সংস্থাটির ২৫ সদস্য অংশ নেয়। তবে সর্বশেষ খালি হাতেই ফিরতে হয়।

অভিযানে অংশ নেওয়া চট্টগ্রাম পিবিআই পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, অভিযুক্ত আবিরের তথ্যানুযায়ী আয়াতের ছয় টুকরোর মধ্যে গত দুদিন স্লইসগেট এলাকা থেকে তার পা ও মাথা উদ্ধার করা হয়। বাকি তিন টুকরো উদ্ধারে শুক্রবার সকাল থেকে অনুসন্ধান শুরু হয়। কিন্তু প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অনুসন্ধানের পরও কোনো ধরনের আলামত পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রে জোয়ারের কারণে খণ্ডিত দেহের অংশগুলো অন্য কোথাও ভেসে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে খুনি আবীরের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে আয়াতের বাবা-মা, দাদা-দাদি, পরিবারের সদস্যসহ দুই শতাধিক এলাকাবাসী অংশ নেয়।

এ সময় আয়াতের বাবা সোহেল বলেন, ‘কে বা কারা বৃহস্পতিবার তার মোবাইলে কল করে হত্যার হুমকি দিয়েছে। বলেছে, আয়াতকে তার নির্দেশেই ছয় টুকরো করে সাগরে ফেলে দেয়া হয়েছে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাদেরও হত্যা করে বারো টুকরো করা হবে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিবিআই কর্মকর্তা নাইমা সুলতানা বলেন, ‘আবীরকে জিজ্ঞাসাবাদে নিয়ে আয়াত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অন্য কারও সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে এবং খোঁজখবর নিয়ে এমন কারও সম্পৃক্ততা পাইনি। তবে আয়াতের পরিবারকে যদি এমন কোনো হুমকি দেওয়া হয় তাহলে বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করব।’

বাবা-মা’র কাছ থেকে নতুন তথ্য পায়নি পিবিআই : আবীরের বাবা ভ্যানচালক আজহারুল ইসলাম আয়াতদের বাসায় ভাড়া থাকেন। তার মা আলো বেগম পোশাক কারখানার শ্রমিক। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ায় তিনি ইপিজেড এলাকার আকমল আলী রোডে পৃথক বাসা নিয়ে থাকেন। মা ও বাবার দুটি বাসায় যাতায়াত ছিল আবীরের।

এ কারণে মা-বাবাকে গ্রেপ্তার করে গত মঙ্গলবার মহানগর হাকিম অলি উল্লাহর আদালতে তাদের হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পরে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। শুক্রবার আবীরের বাবা-মায়ের রিমান্ড শেষ হয়েছে। তবে তাদের কাছ থেকে আয়াত হত্যাকাণ্ডের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি- জানিয়েছে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে