‘হ্যাটট্রিকের পথে’ ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২২; সময়: ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ |
‘হ্যাটট্রিকের পথে’ ওবায়দুল কাদের

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন যতই ঘনিয়ে আসছে, দলটির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে আলোচনা ততই বাড়ছে। সভাপতি পদে পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই- এ বিষয়ে সবাই একমত।তবে সাধারণ সম্পাদক পদে কেউ কেউ পরিবর্তনের আভাস দেখলেও অনেকের মতে এ পদেও পরিবর্তন হচ্ছে না। যার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে দলটির সভাপতির সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে।

গত ২৬ নভেম্বর (শনিবার) চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের (কর্ণফুলী টানেল) দক্ষিণ সুড়ঙ্গের কাজ সমাপ্তির উদযাপন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ওবায়দুল কাদেরের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

ওবায়দুল কাদেরকে ‘ডায়নামিক’ আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একদিকে তিনি পার্টির সেক্রেটারি, আবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। তাকে পার্টির সেক্রেটারি করার পর আমার কাজের চাপ অনেক কমে গেছে।

এই বক্তব্যের পর অনেকেই ধারণা করছেন আগামী ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে না। তার মানে, ওবায়দুল কাদেরই হচ্ছেন দলটির ‘হ্যাটট্রিক’ সাধারণ সম্পাদক। ২০১৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। ওই বছর ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দলের নবম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। এরপর ২০১৯ সালে ২১তম সম্মেলনে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।

মাঝে বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকলেও বর্তমানে পুরোপুরি সুস্থ ওবায়দুল কাদের। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পাশাপাশি সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দুই পদই সমানতালে সামাল দিচ্ছেন তিনি।

সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, আগামীবারও দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। অবশ্য ওবায়দুল কাদের ছাড়াও বেশ কয়েকজনের নাম সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আলোচনায় আছে।

অনেকে মনে করেন, জ্যেষ্ঠতার বিচারে দলটির সাধারণ সম্পাদকের পদের দাবিদার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। ২০০১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০১৬ সাল থেকে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকও। ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা এই নেতা ঢাকা-১৩ আসনের দুইবারের সংসদ সদস্য। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তবে ২০১৮ সাল থেকে সংসদের বাইরে নানক।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানও রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আলোচনায়। তিনি ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। অনেকেই হাছান মাহমুদকে আগামী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখতে চান। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফও রয়েছেন আলোচনায়। এছাড়া আলোচনায় আছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক বি এম মোজাম্মেল হকও।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কেউই সরাসরি কথা বলতে চান না। তাদের মতে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীই তাদের অভিভাবক। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটিই চূড়ান্ত। শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখছেন সবাই।

আওয়ামী লীগের যত সাধারণ সম্পাদক-

আওয়ামী লীগ গঠনের পর ১৯৪৯ সালে দলের প্রথম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক। এরপর ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দলের দ্বিতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরপর দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক হন আবদুর রাজ্জাক। ১৯৮৭ সালে সাধারণ সম্পাদক হন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, ছিলেন ১৯৯২ সাল পর্যন্ত। এরপর জিল্লুর রহমান আবারও দুই মেয়াদে ২০০২ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

২০০২ সালের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হন আবদুল জলিল, ছিলেন ২০০৯ সাল পর্যন্ত। ওই বছর দলের ১৮তম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করেন ২০১৬ সাল পর্যন্ত। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে দলের নবম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। ২০১৯ সালে ২১তম সম্মেলনেও একই পদে বহাল থাকেন তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে