ফুটবল দলের পরাজয়ে উল্লাস, ইরানে যুবককে গুলি করে হত্যা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২২; সময়: ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ |
ফুটবল দলের পরাজয়ে উল্লাস, ইরানে যুবককে গুলি করে হত্যা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ইরানের উত্তরাঞ্চলে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এক ইরানি যুবক নিহত হয়েছেন। চলমান কাতার বিশ্বকাপ থেকে ফুটবল দলের বাদ পড়ার পর দেশটির সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা প্রকাশ্যে আনন্দ উদযাপন শুরু করলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ওই যুবক প্রাণ হারান।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এর আগে নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে হারার পর বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েছিল ইরান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি ফুটবল দলের পরাজয়ে উল্লাস করায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারানো ওই যুবকের নাম মেহরান সামাক। কর্মীরা জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার রাতে ইরানের বন্দর আনজালিতে পরাজয় উদযাপনে নিজের গাড়ির হর্ন বাজানোর পর ২৭ বছর বয়সী মেহরান মাথায় গুলিবিদ্ধ হন।

এছাড়া অন্যান্য শহরের ভিডিওগুলোতেও ইরানের ফুটবল দলের পরাজয়ে ইরানি জনতাকে উল্লাস করতে এবং রাস্তায় নাচতে দেখা যায়। মূলত ইরানের বহু মানুষ কাতারে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া তাদের ফুটবল দলকে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে মনে করে সমর্থন দিতে অস্বীকার করেছিল।

এছাড়া গ্রুপ পর্বের সর্বশেষ খেলায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর খেলোয়াড়দের ওপর অন্যায্য চাপ সৃষ্টির জন্য ইরানের আভ্যন্তরীণ এবং বাইরের শত্রু শক্তিকে দায়ী করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সুবিধাপ্রাপ্ত মিডিয়া।

সংবাদমাধ্যম বলছে, কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকেই ইরানে সরকারবিরোধী যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা পৌঁছে যায় ফুটবল বিশ্বকাপের মঞ্চেও। গত মঙ্গলবার বিশ্বকাপ থেকে ইরান ছিটকে যাওয়ার পরই আনন্দে মেতেছিল ইরানিদের একাংশ।

তাদের যুক্তি, এই হার ফুটবল দলের নয়, বরং সরকারের। আর সেই কারণেই আনন্দ-উৎসবে মেতেছেন তারা। তবে সরকারের বিরোধিতা করার ফলও মিলল হাতেনাতে। ইরানের হার উদযাপন করার অপরাধে গুলি করে হত্যা করা হলো ওই যুবককে।

মঙ্গলবার রাতে কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে যুক্করাষ্ট্রের বিরুদ্ধে খেলতে নামে ইরান। সেই ম্যাচে পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে ইরান বিদায় জানায় বিশ্বকাপকেও। আর দেশের ফুটবল দলের হারের পরই উদযাপনে নামে ইরানি নাগরিকদের একাংশ।

ইরানের নাগরিকদের এই উদযাপন নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনাও হয়। সরকারের বিরোধিতা করতে ইরানের ফুটবল দলের হার উদযাপন করা নিয়েও সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরইমধ্যে বুধবার নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে একজনের মারা যাওয়ার খবর সামনে এলো।

অভিযোগ উঠেছে, ইরানের ফুটবল দলের হারের পর তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বন্দর আনজালি শহরে গাড়িতে হর্ন বাজিয়ে উদযাপনে মেতেছিল ২৭ বছর বয়সী মেহরান। তারই শাস্তি স্বরূপ গুলি চালিয়ে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী তাকে হত্যা করে বলে দাবি করেছে ডানপন্থি একটি মানবাধিকার সংগঠনের।

তারা জানিয়েছে, মেহরান সামাকের মাথায় গুলি করে নিরাপত্তা বাহিনী। তবে ইরান সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হত্যার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে।

মূলত গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বিক্ষোভে টালমাটাল ইরান। হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী কুর্দি ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় নেওয়া হয় এই তরুণীকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিনই মারা যায় মাহসা আমিনি।

সংবাদমাধ্যম বলছে, মাহসা আমিনিকে তেহরানে নৈতিকতা পুলিশ তার চুল সঠিকভাবে না ঢেকে রাখার অভিযোগে আটক করেছিল। ২২ বছর বয়সী ইরানি কুর্দি এই তরুণী গ্রেপ্তার হওয়ার তিন দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মারা যায়। তার মৃত্যুর পর থেকেই ইরানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে।

ইরানের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ওই তরুণী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তবে ভুক্তভোগীর পরিবার এই বিষয়ে বিরোধিতা করে বলেছে, তাকে নৈতিকতা পুলিশ মারধর করেছে।

নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপ ইরান হিউম্যান রাইটস বলেছে, ইরানে এই বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ৪৪৮ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৬০ জন শিশু।

তবে ইরানি জনগণের এই বিক্ষোভকে দেশটির কর্তৃপক্ষ বিদেশি-সমর্থিত ‘দাঙ্গা’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। বিক্ষোভ দমাতে আরও ১৮ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে