বাগমারায় টাকা ছাড়া মিলছে না নলকূপ স্থাপনের ছাড়পত্র

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২২; সময়: ৫:০৮ অপরাহ্ণ |
বাগমারায় টাকা ছাড়া মিলছে না নলকূপ স্থাপনের ছাড়পত্র

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাগমারা : রাজশাহীর বাগমারায় কৃষকদের গভীর নলকূপ স্থাপনের ছাড়পত্র আটকিয়ে অবৈধভাবে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বাগমারায় বিএমডিএ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

ওই ঘটনায় মাড়িয়া ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বাদী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়নের নির্বাহী পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
তবে অবৈধ অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিএমডি’র সহকারী প্রকৌশলী ও সেচ কমিটির সদস্য শাহাদৎ হোসেন। অভিযোগের সত্যতা পেলে তিনি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাগমারায় গভীর নলকূপ স্থাপনের ছাড়পত্র আটকিয়ে অবৈধ অর্থ আদায় ও অসহায় কৃষকদের হয়রানীসহ নানা কালক্ষেপন করে আসছেন বাগমারা বিএমডিএর কর্মকর্তারা।

গভীর নলকূপ স্থাপনের একাধিক আবেদনকারী কৃষকরা জানান, বেশ কিছু দিন পূর্বে উপজেলা সেচ কমিটির মাধ্যমে প্রায় অর্ধশতাধিক গভীর নলকূপ স্থাপনের ছাড়পত্র অনুমোদন করা হয়। সেই মোতাবেক বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আবেদনের অনুমোদনকারীদের খবর দেওয়া হয়।

আবেদনকারী কৃষকেরা তাদের ছাড়পত্র নিতে বাগমারা বরেন্দ্র অফিসের উপসহকারি প্রকৌশলী শামসুল ইসলাম ও পরিদর্শক জামাল উদ্দিন কৃষকদের কাছে বিশ হাজার টাকা করে দাবী করেন।

কোন কোন কৃষক টাকা দিয়ে তাদের ছাড়পত্র বরেন্দ্র অফিস থেকে গ্রহন করলেও অনেকেই এখনো ঠাকার অভাবে তাদের ছাড়পত্র নিতে পারেননি। ছাড়পত্র গ্রহণ না করায় ইরি- বোরো চাষ নিয়ে ব্যাপক শংকার মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে এলাকার কৃষকেরা।

কৃষকদের অভিযোগ, নানা কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়। এরই মধ্যে দেলোয়ার হোসেন নামের এক কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিএমডিএ অফিসের এই দুই কর্মকর্তা কৃষকদের কাছ থেকে টাকা দাবী করে বলেন, তাদের বস অর্থ্যাৎ সহকারি প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন ও সেচ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সম্মানী বাবদ এই টাকা দিতে হয় ? তা না হলে তাদের নামে ইস্যুকৃত ছাড়পত্র বাতিল বা অন্যের নামে দেওয়া হবে বলে তারা জানিয়ে দেন।

ভটখালি, যোগিপাড়া ও হামিরকুৎসার ১০/১২ জন কৃষক জানান, তারা গভীর নলকুপ স্থাপনের জন্য বাগমারা বরেন্দ্র অফিসে আবেদনের পর থেকে পদে পদে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। ওই অফিসের পরিদর্শক জামাল উদ্দিন ইরিগেশন ফিল্ড পরিদর্শনে এসে দুই দফা মোটা অংকের টাকা নিয়ে গেছেন।

টাকা নেওয়ার আগে তিনি তার স্যার সহকারি প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন ও উপজেলা সেচ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের ভাগ দেওয়া লাগবে বলে জানিয়েছেন। এদিকে বিলের পানি নেমে যাওয়ায় ইরি বোরো মৌসুম শুরু হওয়ায় কৃষকরা নতুন গভীর নলকূপ স্থাপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই সুযোগে বরেন্দ্র অফিসের ঘুষখোর সিন্ডিকেট চক্র কৃষকদের পকেট কেটে তাদের সর্বশান্ত করতে ওঠেপড়ে লেগেছেন বলে জানান, ভুক্তভোগি কৃষকরা।

উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, বাগমারা সম্পর্ণভাবে কৃষি প্রধান এলাকা। কৃষক ও কৃষি আমাদের প্রাণ। এই কৃষকদের হয়রানী চরম অন্যায়। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের জোরালো অনুসন্ধান চালিয়ে প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটনের আহবান জানান।

জানতে চাইলে উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আব্দুল মুমিন জানান, গত মাসে তারা কিছু গভীর নলকূপ স্থাপনের ছাড়পত্রের অনুমোদন দিয়েছেন। তবে এর জন্য কোন টাকা পয়সার বিষয়ে আলোচনা হয়নি।

তবে সেচ কমিটির নাম করে কেউ টাকা পয়সা দাবী করলে বিষয়টি খুবই নিন্দনীয়। অপরদিকে বাগমারা বিএমডিএ’র সহকারি প্রকৌশলী সেচ কমিটির সদস্য সচিব শাহাদৎ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে এখনও তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তারপরও বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন এবং কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে যথাযত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সদ্যযোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এখনো বিএমডিএর কর্মকর্তাতের সাথে বসা হয়নি। যদি কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কঠোরভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে