বাঘায় ভাতার টাকা আত্নসাতের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দিঘা পশ্চিম পাড়া গ্রামের আলমাস হোসেনের স্ত্রী মোসাঃ নাসরিন খাতুনের মাতৃত্বকালীন ভাতা তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হরিনা গ্রামের মোঃ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মোসাঃ নাসরিন খাতুনের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পিতা-মাতা ও উপজেলা,ইউনিয়নের নাম ঠিক রেখে, জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি, গ্রাম, ওয়ার্ড ও বিকাশ নম্বর পরিবর্তন করে ভাতার টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। মোসাঃ নাসরিন খাতুনের বিকাশ নম্বর (০১৮৩০৫১১৬১০) পরিবর্তন করে ভাতার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে- ০১৭৭৩২৮৫৬৩৫ বিকাশ নম্বরে।
জানা যায়, অন্তঃসত্তা থাকাকালিন সময়ে ২০১৯ সালে বাউসা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমানের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র (নম্বর ৭৩৫৩৫৫৪৭৭২) সহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র জমা দিয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করেন, বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দিঘা পশ্চিম পাড়া গ্রামের আলমাস হোসেনের স্ত্রী মোসাঃ নাসরিন খাতুন । তার বিকাশ নম্বর দেওয়া ছিল ০১৮৩০৫১১৬১০। জাতীয় পরিচয় পত্রে তার জন্ম তারিখ ১০-৬-১৯৯৫, পিতা-মোঃ আফজাল হোসেন, মাতা-মোসাঃ নাসিমা বেগমের নাম রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৩ বছরের সর্বমোট টাকা প্রদান করা হয়েছে ২৮,৮০০’শ টাকা। সমস্ত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে,এই বিকাশ ০১৭৭৩২৮৫৬৩৫ নম্বরে।
মহিলা অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচির আওতায় তিন বছরের জন্য প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে ভাতা প্রদান করা হয়। চলতি বছরের জুন মাসে ভাতা প্রাপ্তির সময় শেষ হয়েছে।
নাসরিন খাতুনের স্বামী আলমাস হোসেন জানান,বিষয়টি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগও করেছেন বলে জানান আলমাস হোসেন। এর আগেও মহিলা বিষয়ক দপ্তরে যোগাযোগ করলে তাকে জানানো হয়, নামের তালিকা পাঠানোর কথা। কিন্তু পরে ভাতার টাকা পাননি।
সরাসরি কথা হলে মিজানুর রহমান বলেন, আমি লেখা পড়া জানিনা,কিভাবে করেছে তাও বলতে পারবোনা। তার ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর তুহিন হোসেন স্বপনের মাধ্যমে অনামিকা নামের এক মেয়ের কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন। তার বিকাশ নম্বর দেওয়া ছিল-০১৭৭৩২৮৫৬৩৫। এই নম্বরে টাকা পেয়েছেন।
সাবেক মেম্বর তুহিন হোসেন স্বপন বলেন, মিজানুর রহমানের মেয়ে অনামিকার জাতীয় পরিচয়পত্র উপজেলা মহিলা অধিদপ্তরে জমা দিয়েছিলেন। তার দাবি,কোন ভ’ল করলে অফিস করেছে। তাদের কাছে অনামিকার জাতীয় পরিচয় পত্র দেখতে চাইলে,তারা দেখাতে পারেননি।
ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিক জানান,আলমাস হোসেনের স্ত্রী মোসাঃ নাসরিন খাতুনের মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য যে কাগজ পত্র আমাকে দিয়েছিল,সেই কাগজপত্র মহিলা দপ্তরে জমা দেওয়া ছিল। সেই মোতাবেক তার ভাতার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও পরে জেনেছেন তিনি ভাতার টাকা পাননা। বাঘা থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) প্রজ্ঞাময় জানান,অভিযোগ পেয়েছি। চেয়ারম্যান সময় নিয়েছেন। ব্যবস্থা না নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বর্তমান চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ তুফানের সাথে মুঠোফোনে বিষয়টি তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আরে ভাই রাখেন তো ভাতা টাতা। এর পর কথা বলতে রাজি হননি। এর আগে কার্যালয়ে না পেয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বাউসা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নুর মোহাম্মদ তুফান। নির্বাচিত হওয়ার পরে তার কাছে এ বিষয়ে অভিযোগও করা হয়েছে। তবে আলমাস হোসেনের স্ত্রী মোসাঃ নাসরিন খাতুন মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করেছিলেন, নুর মোহাম্মদ তুফান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে ।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন আকতারের কার্যালয়ে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তবে বিষয়টি আমার যোগদানের আগে। এখন আমার কিছুই করার নেই। উপজেলা নির্বাহি অফিসার শারমিন আখতার জানান,বিষয়টি আমার যোগদানের আগে। তবে কিভাবে হয়েছে,তা খতিয়ে দেখবেন।