দুঃসময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২২; সময়: ১০:২২ পূর্বাহ্ণ |
দুঃসময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিদ্যুতের দাম ফের বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ যখন দিশেহারা, ঠিক সেই মুহূর্তে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আজ সোমবার পাইকারি দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিতে যাচ্ছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এদিকে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রস্তাব তৈরি করছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়লে পণ্যমূল্য আরও বেড়ে যাবে এবং জনগণের জীবনে দুর্গতি নেমে আসবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানো। সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। ৩৮ দিন আগে এ ধরনের প্রস্তাব নাকচ করেছিল বিইআরসি। সে সময় দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো না থাকায় এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকারের ওপর মহল আগ্রহ না দেখানোয় দাম বাড়েনি। এখন বিদ্যুতের লোডশেডিং নেই। পাশাপাশি আইএমএফের চাপ রয়েছে। তাই দাম বাড়ানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়তে পারে।

বিদ্যুতের দাম বাড়লে সব ধরনের পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর আগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় পণ্যমূল্য দফায় দফায় বেড়েছে। এতে খেটে খাওয়া মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। জ্বালানি সংকটের কারণে কলকারখানায়ও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম বাড়লে কৃষি ও কলকারখানায় উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এতে টালমাটাল হতে পারে গোটা বাজার ব্যবস্থা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) গত ১২ জানুয়ারি বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৬৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর আবেদন করে। ১৮ মে তাদের প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়। শুনানিতে বিইআরসির কারিগরি কমিটি ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করে। প্রায় ৫ মাস পর গত ১৩ অক্টোবর এক ঘোষণায় বিইআরসি জানায়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ও যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় পিডিবির আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।

গত ২ নভেম্বর পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগ এবং ৬ নভেম্বর বিইআরসির সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা সফরকারী আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এ সময় বিদ্যুতের দাম, ভর্তুকি ও পিডিবির লোকসান নিয়ে আলোচনা হয়। এর পর কমিশনের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করে পিডিবি। সংস্থাটির আবেদন বিবেচনায় নিয়ে নতুন আদেশ দিতে যাচ্ছে কমিশন। এ বিষয়ে বিইআরসি সদস্য (বিদ্যুৎ) বজলুর রহমান বলেন, যেসব ঘাটতির কারণে পিডিবির প্রস্তাব নাকচ হয়েছিল, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা ও তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করেছে পিডিবি। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। কতটুকু বাড়ছে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, পিডিবি যতটুকু চেয়েছে তত বাড়বে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়তে পারে চলতি অর্থবছরের জন্য বিদ্যুৎ খাতে ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বিবেচনা করে। কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, গণশুনানি ছাড়া বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আদেশ আইনসম্মত হবে না। তবে এ বিষয়ে বজলুর রহমান বলেন, শুনানি করেই তো আদেশ দেওয়া হয়েছিল। সে আদেশের ওপর আপিল করেছে পিডিবি। তাই শুনানির প্রয়োজন নেই।

বাড়বে খুচরা মূল্যও: পাইকারি দাম বাড়ানো হচ্ছে- এমন খবরে বিতরণ কোম্পানিগুলোও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন তৈরি করছে। পাইকারি বিদ্যুতের দর কতটুকু বাড়বে, তা ধরেই গ্রাহক পর্যায়ে মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে ৬ বিতরণ কোম্পানি। এসব প্রস্তাবের ওপর শুনানি করে নতুন মূল্য ঘোষণা করবে বিইআরসি।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, পাইকারি মূল্য যে হারে বাড়বে, সে অনুসারে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হবে। এ বিষয়ে কাজ চলছে। ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) জানিয়েছে, তারা প্রস্তাব তৈরি করছে।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে বলেছেন, জ্বালানি সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়লে কারখানা চালানোই মুশকিল হবে। অর্থনীতিবিদ ড. এ.বি. মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, দ্রব্যমূল্য নাগালের বাইরে। এর মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়লে পণ্যমূল্য আরও বেড়ে যাবে। জনগণের খরচ বাড়বে। শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।

লোকসান বাড়ছে পিডিবির: বিইআরসি সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করে। বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবির ১৪-১৫ টাকা খরচ হচ্ছে। তাই দিন দিন লোকসান বাড়ছে। পিডিবি জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে তাদের লোকসান ছিল ১১ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরে আর্থিক ক্ষতি ৩১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা লোকসান হতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই লোকসান হয়েছে আট হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ ভর্তুকির অর্থ ছাড় না করায় বেসরাকরি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় ৫ মাসের বিল বকেয়া পড়েছে। গত মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেন্টাল-কুইক রেন্টাল ও আইপিপিগুলো পিডিবির কাছে ৩৩ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা পাবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে