জীবন যুদ্ধে জয়ী পদ্মাপাড়ের ফুচকা বিক্রেতা চামেলী

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২২; সময়: ২:০২ অপরাহ্ণ |
জীবন যুদ্ধে জয়ী পদ্মাপাড়ের ফুচকা বিক্রেতা চামেলী

মনীষা আক্তার : ফুচকা একটি অতি জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এই খাদ্যটির প্রচলন রয়েছে। অঞ্চলভেদে এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। গোটা বাংলাদেশে এর নাম ফুচকা, উত্তর ভারতে এটির পরিচিতি গোল-গাপ্পা হিসেবে , আবার পশ্চিম ভারতে, এই খাবারটির নামই পানি-পুরি। ইতোমধ্যে এই ফুচকা বিশ্বের স্ট্রীট ফুডের তালিকায় স্থানও করে নিয়েছে।

ফুচকা তৈরির ব্যবসা আগের থেকে এখন অনেক বেশি পরিমাণে লাভজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ আগেকার সময়ে সংখ্যায় অনেক বেশি উপরন্ত কম টাকায় ফুচকা পাওয়া যেতো কিন্তু বর্তমান সময়ে ফুচকার পরিমাণ কমে গেছে আর টাকার খরচ বেড়ে গেছে। তাই এখনকার সময়ে ফুচকা তৈরির ব্যবসা অত্যন্ত একটি লাভজনক ব্যবসা।

ফুচকা শুধু এখনকার মানুষের মুখরোচক পছন্দের খাবারের মধ্যে পড়ে তা নয়, কারণ ফুচকা বহু প্রাচীন সময় থেকে রাজ রাজাদের আমল থেকে চলে আসছে। ফুচকা তৈরির ব্যবসা বর্তমানে অল্প পুঁজির একটি ব্যবসার উদাহরণ। এছাড়াও ফুচকা তৈরীর ব্যবসা করে এখন অনেক গরীব মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমনই একজন রাজশাহী নগরীর দরগাপাড়া এলাকার বাসিন্দা চামেলী বেগম। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বিয়ের দেড় বছরের মাথায় স্বামীর কাছ থেকে বিতাড়িত হন তিনি। সেই সময় ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে জীবনের তাগিদে কিছু করার চেষ্টা করেছেন। অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে চেষ্টা করেছেন স্বাবলম্বী হওয়ার। কিন্তু সে সময়ে তার জন্য এই কাজটি মোটেও সহজ ছিলো না। কারণ সেই সময় রাজশাহী শহরে নারীদের জন্য সহজ কোনো কাজ ছিল না।

জীবিকার তাগিদে অল্প বয়সেই চ্যালেঞ্জ নিলেন চামেলী বেগম। পেশা হিসেবে বেছে নিলেন পদ্মার পাড়ে ফুচকা বিক্রির ব্যবসা। পরবতীতে চটপটি ও হালিম বিক্রিও শুরু করেন। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি বিউটিকে। শত বাধা বিপওি এলেও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ব্যবসাটাকে চালিয়ে নিয়েছেন তিনি।

দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি। সংগ্রাম করেই সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন পাশাপাশি মেয়েকে শিক্ষিত করেও তুলছেন। তার মেয়ে এখন রাজশাহী কলেজে পড়াশোনা করছে।

চামেলী বেগম বলেন, কাজ করেই ভাগ্যের পরিবর্তন করাতে আমি বিশ্বাসী। কিন্তু তার কাছে পুজি নাই। কেউ অর্থ দিয়ে সহায়তা করলে ব্যবসাটাকে আরো বড় করতে পারতাম। তার দোকানে কোন কর্মচারী নেই তিনিই একা দোকান সামলাচ্ছেন। সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ও বিকেল ৪টা থেকে রাত প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে।

তিনি আরও বলেন, খুব ইচ্ছে ছিল মেয়েকে রাজশাহী কলেজে পড়ানোর। মেয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে। সে এখন একাউন্টিং শেষ বর্ষের ছাত্রী। কিছুদিন পর মাস্টার্সও শেষ হবে। পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা চাকরি করবে। ব্যাংকার হয়ে আমার মনের আশা পূরণ করবে এটাই আমার প্রত্যাশা।

চামেলী বেগম জানান, তিনি একজন বৃক্ষ প্রেমী। ফুচকা দোকানের পাশে পদ্মার ধার দিয়ে লাগিয়েছেন অসংখ্য গাছও। পাশাপাশি পানি দেওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় পরিচর্যার কাজও করেছেন নিজ হাতে। ভালো লাগা থেকেই এসব বৃক্ষরোপণ বলেও জানান তিনি।

তার লাগানো কয়েক প্রজাতির লাগানো চারা রূপ নিয়েছে বড় গাছে। সবুজ পাতায় ছেঁয়ে গেছে আশপাশের এলাকা। বিশুদ্ধ অক্সিজেন পেতে অনেকেই ভিড় জমান এসব গাছ তলায়। সূর্যের প্রখর তাপ থেকে রক্ষা পেতে এই গাছের নীচে অনেকেই বসেন আবার বিকেল করে গাছগুলোকে ঘিরে দর্শনার্থীদের আড্ডার আসর জমতে দেখা যায়।

ফুচকা খেতে আসা রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী নাজিফা তাসনিম বলেন,আশেপাশে অনেক দোকান থাকলেও আমি মূলত এই দোকানেই ফুচকা খেতে আসি। কারণ এখানকার ফুচকা চটপটির স্বাদ বেশ ভালো। তাছাড়া খালার ব্যবহারও অনেক ভালো।

পদ্মাপাড়েই ঘুরতে এসেছেন মাহি ও তার দুই বান্ধবী। তাদের কাছে জানতে চাইলে মাহি বলেন, এর আগেও এখানে এসে ফুচকা খেয়েছি।কাজের ফাঁকে কিংবা বিনোদনের জন্য প্রায়শই আসা হয়। এখানে এলেই এখানকার ফুচকা খেয়ে থাকি। একজন নারী একা স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন এবং সংসারের সব খরচ সামাল দিচ্ছেন এটাই অনেক।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে