রাবিতে জমে উঠেছে পিঠার আসর, মান নিয়ে সংশয় শিক্ষার্থীদের

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২২; সময়: ১:২৩ অপরাহ্ণ |
রাবিতে জমে উঠেছে পিঠার আসর, মান নিয়ে সংশয় শিক্ষার্থীদের

তানজিলা চৌধুরী : শীত মানেই উৎসব, শীত মানেই আমেজ। এই ঋতু যেন এক ভিন্ন রকম আবহ নিয়ে আসে প্রকৃতির পাশাপাশি জনসাধারণের যান্ত্রিক জীবনেও। শীতের পোশাক, নানান রকম পিঠাপুলির আসর সবমিলিয়ে যেন এক উৎসব মুখর পরিস্থিতি।

প্রতিবছরের মত এবছরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে জমে উঠেছে পিঠার পসরা সাজানো অস্থায়ী দোকান। হলের সামনে বিকেল থেকে ভিড় জমে থাকে পিঠার দোকানজুড়ে।

নানা রকম পিঠা নিয়ে ১২জন নারী সদস্যদের সাথে মাসুম আলী এই পিঠার অস্থায়ী দোকান সাজিয়েছেন। প্রতিবন্ধী মাসুম পেশায় অটোরিকশা চালক হলেও শীতের মৌসুমে তিনি পিঠার ব্যবসায় নিয়োজিত হন। আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে পুরো মৌসুম এই পিঠার পসরা নিয়ে হুলুস্থুলেই কেটে যায় তার। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।

রাবিতে ২০-২৫ দিন থেকে চলছে তার এই পিঠা ব্যবসা। পিঠার আইটেমে থাকছে ভাপা পিঠা, চিতাই পিঠা, তেলের পিঠা। চিতাই পিঠার সাথে থাকছে ৭ রকম ভর্তা দিয়ে সাজানো প্লেট।

প্রতি পিস চিতাই পিঠা বিক্রি হয় ৮ টাকা, ভাপা পিঠা ১৫ টাকা ও তেলের পিঠা ২০ টাকা দামে। ভর্তা ১০ টাকা প্লেট। ৭রকম ভর্তার মধ্যে থাকছে বেগুন ভর্তা, মরিচ ভর্তা, সরিষা ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা, চিংড়ি ভর্তা ও শুঁটকি ভর্তা।

তবে শিক্ষার্থীদের মতে পিঠার দাম আগের বারের চেয়ে বাড়লেও আকারে ছোট। মানেও আগের মত নেই।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া বলেন, ‘এখানে আগেরবারের চেয়ে পিঠার দাম চড়া। তাছাড়া এবার ক্যাম্পাসের বাইরে চিতই পিঠার দাম যেখানে পাঁচ টাকা এখানে তারা রাখছেন আট টাকা। ছোট্ট একটা তেলের পিঠা ২০ টাকা করে রাখছেন। ভাপা পিঠার দামও বেশি। দামের তুলনায় খাবারের মান আহামরি না।’

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রুনা ইসলাম জানান, ‘ক্যাম্পাসেই পুরো শীতে এমন পিঠার দোকান এক প্রকার উৎসবের আমেজ দেয়। কিন্তু এখানে পিঠার দাম অনেক বেশী। এটা বিশ্ববিদ্যালয়, তাদের গ্রাহক মূলত আমরা ছাত্র-ছাত্রীরা। সেক্ষেত্রে এমন বাড়তি দাম রাখাটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত।

তাছাড়া ক্যাম্পাসের মাঠে দোকান হওয়ায় তাদের কোনো ভাড়া দিতে হচ্ছে না। তবুও চড়া দাম রাখছে কেন, সেটা বোধগম্য না। বাইরের তুলনায় এখানে প্রতি পিঠায় রাখা হচ্ছে অতিরিক্ত দাম।’

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আয়েশা নাজনিন কেয়া বলেন, ‘গতবছর যেখানে পিঠার দাম ছিল অনেক কম। এবছর তার দিগুণ করা হয়েছে। চিতই পিঠায় চিনি তেল লাগছে না তবুও তারা আট টাকা করে বিক্রি করছেন। ভাপা পিঠা বাইরে যেখানে ৫-১০ টাকা সেখানে ক্যাম্পাসে বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। আমরা প্রশাসনে সুনজর চাই।’

এসব বিষয় জানতে চাইলে এক পিঠা বিক্রেতা মাসুম আলী জানান, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বাড়তি। আগেরবারের চেয়ে সবখানে সবকিছুর দাম বেশি, লাকড়ির দাম অনেকাংশে বেড়েছে তাই পিঠার দাম আগের থেকে কিছুটা বেড়েছে। পিঠার মধ্যে বিভিন্ন উপাদান দেওয়া হয় সেগুলাও বাড়িতি দামে কেনায় খরচ বেশি হচ্ছে।’

খাবারের মানের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমরা তো চাই শিক্ষার্থীদের ভালো, মানসম্মত পিঠা খাওয়াতে, আর চেষ্টাও করছি। মাঝে মাঝে অনেক ভিড়ে তাড়াহুড়ায় বা বাড়তি চাপে খারাপ হয়ে যায় তবুও চেষ্টা করি ভালো করতে।’

কতদিন পর্যন্ত এই পিঠা ব্যবসা চালাবেন জানতে চাইলে জানান, পুরো শীতেই এখানে শিক্ষার্থীদের পিঠা খাইয়ে উপার্জন করতে চান। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বলেছেন এখান থেকে উঠে যেতে। তাই আর কতদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পিঠা বিক্রি করতে পারবেন তার নিশ্চয়তা নেই।

হলের সামনে এমন ভ্রাম্যমাণ দোকান সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক জানান, ‘যারা পিঠা খেতে আসছেন বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে আসা ছেলে-মেয়ে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটছে, শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে যেহেতু এটা একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।’
তিনি আরো জানান, এই বিষয়ের মূল দায়িত্বে হলের প্রাধ্যক্ষরা। হলের পরিবেশের অবস্থা অনুযায়ী তারা দ্রুতই এই দোকানের বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে