বুড়িগঙ্গায় প্রতি ৯ দিনে পড়েছে একটি লাশ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২২; সময়: ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ |
বুড়িগঙ্গায় প্রতি ৯ দিনে পড়েছে একটি লাশ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক :  ‘লাশ গুমের নিরাপদ স্থান’ হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকার আশপাশের নদনদী। এক বছরে বুড়িগঙ্গা, বংশী, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা থেকে শতাধিক মানুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শুধু বুড়িগঙ্গা থেকেই উদ্ধার হয়েছে ৪১ লাশ। সে হিসাবে প্রতি ৯ দিনে নদীটিতে একটি করে লাশ ফেলা হয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্য কোনো স্থানে খুন করে লাশ এনে ফেলা হচ্ছে এসব নদীর নির্জন স্থানে। পরে উদ্ধার হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পচাগলা লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তাই অধিকাংশ সময় এসব লাশ বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করা হয়। তাছাড়া কিছু লাশ চিহ্নিত হলেও সঠিক তথ্যপ্রমাণের অভাবে অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

সম্প্রতি ঢাকার অদূরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে মাথা ও বুকে আঘাত করে হত্যা করা হয়। তার খুনের রহস্য এখনো উন্মোচন করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা। এর কয়েকদিন পর বুড়িগঙ্গার ফতুল্লা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুরন্ত বিল্পবের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে ১৭ জানুয়ারি অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয় একই নদী থেকে।

নৌপুলিশ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে ৪১ জন নারী, পুরুষ ও শিশুর বিকৃত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে। সে হিসাবে গড়ে প্রতি ৯ দিন অন্তর একটি করে লাশ পড়েছে এ নদীতে।

এছাড়া তুরাগ থেকে প্রায় ১৪টি, শীতলক্ষ্যা থেকে ২০টি এবং বাকি নদীগুলো থেকে আরও ২৫টির বেশি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর অধিকাংশই হত্যাকাণ্ডের শিকার। তবে এসব লাশের বেশির ভাগেরই পরিচয় না পাওয়া এবং তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা না দুর্ঘটনা, তা নিশ্চিত হতে না পারায় বিপাকে পড়েছে তদন্তকারী সংস্থা। কিছু লাশের ক্ষেত্রে শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশই হত্যা মামলা করেছে। হত্যার আলামত পাওয়া যায় না যেসব লাশের, সেগুলোর ক্ষেত্রে অপমৃত্যু মামলা হয়।

ময়নাতদন্ত শেষে বেশির ভাগ পরিচয়হীন লাশের ঠিকানা হয় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে। এসব হত্যা বা অপমৃত্যু মামলার মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি মামলার রহস্য পুলিশ উদ্ঘাটন করতে পারলেও বহু মামলা বছরের পর বছর তদন্তের বেড়াজালে আটকে আছে।

সূত্র বলছে, বুড়িগঙ্গা নদী লাশের ‘ডাম্পিং জোন’ হিসাবে প্রথম আলোচনায় আসে ২০০২ সালে। ওই বছরের ১০ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা নদীর চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর নিচে এক পিলারের ওপর থেকে মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই লাশের পরিচয়ও প্রথমে কারও জানা ছিল না। একপর্যায়ে পরিবারের লোকজন থানায় এসে লাশটি তিন্নির বলে শনাক্ত করে।

গত বছরের ৩১ জুলাই পুলিশ বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধার করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র আরিফুল ইসলামের লাশ। এটিও প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয় হিসাবে উদ্ধার করা হয়েছিল। একই বছরের ৫ আগস্ট বুড়িগঙ্গার পোস্তগোলা থেকে ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ মিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বোনজামাই সোহেল আহমেদ জানান, শাহনেওয়াজ লালবাগ এলাকায় ব্যবসা করতেন। সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়।

এছাড়া গত বছরের ১৩ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা থেকে ব্যবসায়ী নূরুল আমীন মন্টুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার ছেলে আমির হোসেন বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে সন্ত্রাসীরা তার বাবাকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ঢাকার ফরিদাবাদ আর্সিনগেট বরাবর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক তরুণীর (২০) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার জিভ কামড়ে ধরা ছিল। ধারণা করা হয়, তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জাফর ইকবাল বলেন, নদীতীরের অপরাধের স্থানগুলো চিহ্নিত করে ওইসব জায়গায় নজরদারি বাড়াতে হবে। এছাড়া কমিউনিটি পুলিশিংয়ের টহল জোরদার এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

ঢাকা জেলা নৌপুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, ঢাকার চারপাশের নদীপথ অনেক বিস্তৃত। নৌপুলিশ একটি নতুন ইউনিট। এখানে লোকবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট অনেক কম। এরপরও কিছু এরিয়া নির্বাচন করে সেখানে টহল ও নজরদারি জোরদার করেছি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে