ফের সয়াবিন-চিনির দাম বাড়াল সরকার

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২২; সময়: ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ |
ফের সয়াবিন-চিনির দাম বাড়াল সরকার

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : আবারও সয়াবিন তেল ও চিনির দাম বাড়াল সরকার। যদিও আগে থেকেই এ দুটি পণ্য বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে। বরং সরকারের এমন ঘোষণায় অসাধু ব্যবসায়ীরা এর দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারে-এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

তাদের মতে, ঘোষিত দর কখনোই বাজারে প্রতিফলিত হয় না। সব সময়েই এই দরের তুলনায় নির্বিঘ্নে বেশিতে বিক্রি হয়। কারণ এগুলো তদরকি করার তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। ফলে সবসময়েই ক্রেতাদের একরকম জিম্মি করে অধিক মুনাফা লুটে নিচ্ছে অসাধুদের সিন্ডিকেট।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি মাসের ১ তারিখ লিটারপ্রতি ১৫ টাকা দাম বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মোল্লা।

তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকার অস্বাভাবিক দরপতনের ফলে সংগঠনভুক্ত সদস্যরা বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯৩ টাকা করার প্রস্তাব করেছে।

এর পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তুলনা করে ট্যারিফ কমিশন মূল্য পর্যালোচনা করে। পরে বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিবের সম্মতিতে নতুন দর কার্যকর করা হয়।

এদিন ভোগ্যপণ্য বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তেল ও চিনির নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। আমাদের মৌখিকভাবে বিষয়টি মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই এ দাম কার্যকর হয়েছে।

নতুন দর অনুযায়ী, প্রতিলিটার সয়াবিন সর্বোচ্চ ১৪ টাকা এবং চিনি কেজিতে ১৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন মূল্যে ক্রেতাকে এক লিটার খোলা সয়াবিন ১৭২ টাকা এবং বোতলজাত ১৯০ টাকায় কিনতে হবে। পাশাপাশি প্রতিকেজি খোলা চিনি ১০২ টাকা এবং প্যাকেট ১০৮ টাকা বিক্রি হবে। এটি ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হয়েছে।

তবে খুচরা বাজারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বাজারে খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা। এটি সরকারের বেধে দেওয়া দরের তুলনায় ৮ টাকা বেশি। এ ছাড়া খুচরা বাজারে খোলা চিনি এক রকম উধাও। এক কেজি চিনি কিনতে ক্রেতাকে কয়েক দোকান ঘুরতে হয়েছে।

এরপর পাওয়া গেলেও কেজিতে গুনতে হচ্ছে ১১৫ টাকা। অর্থাৎ সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্য থেকে প্রতিকেজি এখনই বাজারে ১৩ টাকা বেশি। ফলে ক্রেতাদের আগে থেকেই এই দুটি পণ্য বাড়তি দরে কিনতে হয়েছে।

বিক্রেতার মতে, নতুন মূল্যে সয়াবিন ও চিনি আসতে আরও ২ থেকে ৩ দিন লাগবে। বর্তমান মিলগুলোতে এ দুটি পণ্যের সংকট আছে। সরবরাহ পেতে অনেক অপেক্ষা করতে হয়। এখন আরেক দফা মূল্য বাড়ানোর ফলে মিলগুলোতে পণ্য পেতে আরও কালক্ষেপণ হবে বলে তাদের আশঙ্কা।

অপর দিকে ক্রেতাদের মাথায় বড় ধরনের আঘাত নেমে এসেছে সয়াবিন ও চিনির মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণায়। রাজধানীর কাওরান বাজারে নিত্যপণ্যের ক্রেতা মো. শাকিল আক্ষেপ করে বলেন, বোতলজাত সয়াবিন ১৮০ টাকায় সয়াবিন কেনা কঠিন ছিল। এখন কিনতে হবে ১৯০ টাকায়। এটি সম্ভব নয়। আমরা ক্রেতারা জিম্মি হয়ে পড়েছি। বাজারের বিক্রেতারা বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি করে না।

তিনি আরও বলেন, বাজারে আজও চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। একাধিক দোকান ঘুরে এক কেজি চিনি কিনতে পেরেছি। আর সয়াবিন নিয়ে কথা বলতেই চাই না। গত কয়েক মাস থেকেই তেলের বাজারে মূল্যের অস্থিরতা চলছে।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বিশ্বজুড়ে পণ্যের দামে টালমাটাল অবস্থায় আছে। মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সব ধরনের আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়েছে। সেই প্রভাব দেশেও পড়ছে। তবে কেউ দাম নিয়ে অসাধুতা বা কারসাজি করতে না পারে সেদিকে তদারকি করা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম পেলেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যতবার পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ঠিক ততবার আমরা বাজারে কঠোর মনিটরিং করেছি। যাতে নির্ধারিত দামের চেয়ে কেউ বেশি আদায় করতে না পারে। যে দামে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই দামেই বিক্রি করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম ঠিক করে, আর সেটি সরকার কার্যকর করে। কয়েক দফা ভোজ্যতেলের মূল্য কমানো ও বাড়ানো হয়। এটি একটি ‘আই ওয়াশ’। কারণ যতবার দাম কমানো বা বাড়ানো হয় বাজারে এটি কার্যকর হতে দেখা যায় না। বরং নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশিতে বিক্রি হয়েছে। যা কাম্য নয়।

তিনি আরও বলেন, বাজার তদারকি সংস্থাগুলো যে কোনো কাজ করেনি তাও বলা যাবে না। তারা যথেষ্ট কাজ করেছে। অভিযান পরিচালনা করেছে। মূল্য কারসাজিতে প্রতিযোগিতা কমিশন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিজ আইনে মামলা করেছে। এর সঙ্গে বাজার তদারকি আরও কঠোরভাবে করা দরকার।

ভোজ্যতেল : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত ২৬ জুন প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিনের মূল্য ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে বিশ্ববাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গত ২৮ আগস্ট এক দফা মূল্য কমানো হয় ভোজ্যতেলে। ওই সময় প্রতিলিটার ১৭৫ ও বোতলজাত সয়াবিন ১৯২ টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

ধারাবাহিক বিশ্ববাজারে দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ অক্টোবর লুজ সয়াবিনের লিটার ১৫৮ টাকা ও বোতেল সয়াবিনের মূল্য ১৭৮ টাকায় নামানো হয়। তবে কিছু দিন বাজারে সরকার ঘোষিত মূল্য কার্যক্রর থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে বিক্রেতারা কারসাজি করে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৭০ ও বোতল ১৮০ টাকায় বিক্রি করে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার নতুনভাবে দাম বাড়ানো হয় ভোজ্যতেলের। এক লাফে লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়িয়ে খোলা সয়াবিনের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৭২ টাকা এবং বোতল। এছাড়া বোতল সয়াবিন তেল প্রতিলিটারের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৯০ টাকা।

চিনির বাজার : জানা গেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতিকেজি খোলা চিনির দাম ৮৪ টাকা ও প্যাকেট চিনি ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে বিশ্ববাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ৬ অক্টোবর প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ছয় টাকা বাড়িয়ে ৯০ ও প্যাকেট চিনি ৯৫ টাকা করা হয়।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়। নতুন মূল্য হচ্ছে প্রতি কেজি ১০২ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ১০৮ টাকা। এ ক্ষেত্রে খোলা চিনির কেজিতে ১২ টাকা এবং প্যাকেট চিনিতে বাড়ানো হয় ১৩ টাকা। তবে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি খোলা চিনি এখনই বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে