কলেজশিক্ষক যখন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : কিশোরগঞ্জে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অভিযানে আটক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মির্জা কাউসার (২৮) নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতা ও কোচিং ব্যবসার আড়ালে গোপনে চলত জঙ্গি তৎপরতা।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে অপর ৫ সদস্য নিয়ে সংগঠন চালাতেন তিনি। ব্যবহার করতেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যবহার করতেন অনলাইন প্রটেক্টর টেক্সট।
মির্জা কাউসারকে ঢাকার দক্ষিণখান থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববার (১৩ নভেম্বর) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটসহ একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ শহরের খরমপট্টি এলাকায় মেডিক্স কোচিং সেন্টার থেকে ডা. কাউসারকে আটক করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
একটি কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে পরিবার ও মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। রাতেই তাকে উদ্ধারে তৎপরতা চালায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। পরদিন জানা যায় তাকে জঙ্গি সম্পৃক্ততায় আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ডা. মির্জা কাউসার জেলার বাজিতপুর উপজেলার উজানচর গ্রামের মির্জা আবদুল হাকিমের ছেলে। তিনি প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রভাষক। শহরের খরমপট্টি এলাকায় মেডিক্স নামে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করতেন তিনি। থাকতেন খরমপট্টি বায়তুল আমান মসজিদের পেছনে একটি ভাড়া বাসায়।
গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রমতে গ্রেপ্তার ডা. মির্জা কাউসার নিজের পরিচয় গোপন করে নানা ছদ্মনামে জঙ্গি কার্যক্রম চালাতেন। কখনও মির্জা কাউসার আবার কখনও আবদুল কাদের এবং সোবাহান নাম ব্যবহার করতেন।
সূত্রমতে, প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের দক্ষিণ পাশে আনসার হাউস ভাড়া নিয়ে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন তিনি। সারা দেশে জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগের সময় ব্যবহার করতেন অনলাইন প্রটেক্টেড টেক্সট। আনসার আল ইসলাম তার সাংগঠনিক নাম হচ্ছে আবদুল কাদের। সংগঠনে যোগদানের সময় নাম ছিল সোবাহান।
দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত ডা. মির্জা কাউসার। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সংগঠনের বেশ কয়েকজন আটক হলে গ্রেপ্তার এড়াতে কিশোরগঞ্জ শহরে কোচিং ব্যবসা শুরু করেন তিনি। আর গোপনে চলে জঙ্গি কার্যক্রম।
গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অ্যান্টি ইলিগ্যাল আর্মস অ্যান্ড ক্যানাইন টিমের পরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম।
আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সোমবার (১৪ নভেম্বর) তার রিমান্ড শেষ হয়। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) তাকে আবারও আদালতে তোলা হবে। এদিকে একটি মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক গোপনে জঙ্গি সংগঠনে জড়িত থাকার ঘটনায় হতবাক স্থানীয়রা।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আ ন ম নওশাদ খান বলেন, বিষয়টি জেনে আমরা আশ্চর্য হয়েছি। ডা. মির্জা কাউসার এই মেডিকেল কলেজ থেকেই এসবিবিএস পাস করেছে। এখন তিনি প্রভাষক। তার মধ্যে কোনদিন তেমন কিছু লক্ষ করিনি।
তিনি তাবলিগ জামাত করত বলে জানতাম। যেহেতু তার বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে, তাকে প্রভাষকের চাকরি থেকে বরখাস্তের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।