বাগমারায় মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা-ছেলে

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২২; সময়: ১০:২৭ অপরাহ্ণ |
বাগমারায় মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা-ছেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক : মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি প্রভাবশালী ভাইদের কাছে না পেয়ে মামলাসহ বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করে নাবালক ছেলেসহ অতি কষ্টে জীবন যাপন করছেন সাথী বেগম নামের এক গৃহবধু। অভিযোগ উঠেছে মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া জমি, মুদি দোকান ও ওয়ার্কশপ জোরপুর্বক ভাসুর, দেবর, ননদের স্বামীসহ পরিবারের লোকজন জবর দখল করে নিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর বাগমারা থানা মোড়ের পুর্ব পাড়ায়।

এ ঘটনায় গৃহবধু সাথী বেগম নিরুপায় হয়ে রাজশাহীর বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। যাহার মামলা নাম্বার ২৭১ সি/২০২১ ইং (বাগমারা)। আদালতে দায়েরকৃত মামলাও এলাকাবাসি সুত্রে জানাগেছে, বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বাগমারা পুর্ব পাড়া গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে মৃত মাহাবুর রহমান থানা মোড়ে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত ধরে ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ মুদি দোকান, ওয়ার্কশপের দোকান করে আসছিলেন।

হঠাৎ তিনি গত ২৪/০৮/২০২০ ইং তারিখে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরন করেন। তার মৃত্যুর পর গৃহবুধ সাথীর উপর শুরু হয় মধ্যযুগীয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। যে স্বামীর ইনকামে চলতো গোটা পরিবার। সেই স্বামীর মৃত্যুর পর তার স্বামীর পরিবারের লোকজনদের কাছে সাথী বেগম যেন ঘৃণার পাত্রে পরিনত হয়েছে। তাকে আর এক মুহূর্ত সহ্য করতে পারছেনা ভাসুর, দেবর, ননদ ও সৎশ্বাশুড়ী। ভাসুর, দেবর, শ্বাশুড়ী ও ননদের স্বামী মিলে সাথীকে গৃহ ছাড়া করতে শুরু করে গভীর ষড়যন্ত্র ও নির্যাতন। তারা সাথীকে এক প্রকার জিম্মী করে তার কাছে থাকা ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ মুদি দোকান, ওয়ার্কশপের দোকান, স্বামীর লিজকৃত জমির কাগজপত্র ও স্বর্ণলংকারসহ সব কিছুই ছিনিয়ে নেয় একে পর এক।

গৃহবধু সাথী বেগম জানান, আমাকে তারা দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। সামান্য এক কাপড়ে ছেলেকে নিয়ে আমার বাবার বাড়িতে এসে এক মাস অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী ছিলাম। এবং আমি আমার বাবার টাকায় চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে উঠি। এরপর আমি সু বিচারের জন্য অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোথাও বিচার পায়নি। তাই নিরুপায় হয়ে ওই বছরই রাজশাহীর বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভাসুর সেনাবাহিনীর সদস্য মাসুদ রানা, ননদের স্বামী পুলিশ সদস্য আসাদ আলীও দেবর জাহিদ হাসানকে বিবাদি করে একটি মামলা দায়ের করি এবং নিরাপত্তার জন্য থানায় একটি সাধারন ডাইরী করেছি। তবে মামলা দায়ের করার পর থেকে সাথী বেগমকে নানান ভাবে অপবাদ ও প্রাননাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

তিনি আরও জানান, মামলা করে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছি। প্রথমে মামলা করতে বাগমারা থানায় গেলে দেবর সেনাবাহিনীর সদস্য, ননদের স্বামী পুলিশ সদস্য হওয়ায় বাগমারা থানা পুলিশ আমাকে ফিরিয়ে দেয়। পরে আদালতে মামলা দায়ের করলে সেটিরও তদন্ত আসে বাগমারা থানায়। এরপর থানার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল মালেক আমাকে চরম হতাশ করেন। তিনি আমার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে এবং সাক্ষীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ না করে গোপনে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে আমি আবারও আদালতে নারাজি দাখিল করে আমার নাবালক ছেলেকে নিয়ে মহামান্য আদালতে উপস্থিত হলে আদালত আমাদের উপর দয়া পরবশ হয়ে

মামলাটি পূনঃ তদন্তের জন্য বাগমারা উপজেলা সমাজ সেবা দপ্তরে পাঠায়। এবং সমাজ সেবা দপ্তর থেকে এখনো আদালতে পূনঃ তদন্তের প্রতিবেদন দেয়নি। বর্তমানে আমি সন্তানকে নিয়ে অতি কষ্টে জীবন জাপন করছি।

এ ব্যাপারে বাগমারা থানায় যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল মালেক থানায় না থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে থানার কর্তব্যরত এসআই ফরিদা ইয়াসমিন জানান, তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল মালেক স্যারকে থানা থেকে ডি. এসবিতে বদলী করা হয়েছে।

বাগমারায় অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকা সমাজ সেবা কর্মকর্তা রাকিবুল ইউসুফ জানান, রাজশাহীর আদালতের একটি নোটিশ এসেছে, বিষয়টি তদন্তের জন্য উভয় পক্ষকে নোটিশ জারির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে