ঈশ্বরদীতে মোড়ে মোড়ে শীতের পিঠা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২২; সময়: ১:৫৫ অপরাহ্ণ |
ঈশ্বরদীতে মোড়ে মোড়ে শীতের পিঠা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঈশ্বরদী : ভোজনপ্রিয় বঙালির খাবার তালিকায় পিঠা-পুলির স্থান শীর্ষেই বলা চলে। শীত এলে তো কথাই নেই। বাসাবাড়ির পাশাপাশি বাজারে বসে পিঠা বিক্রির ধুম। প্রতিবারের মতো এবারও শীতের আমেজ প্রকৃতিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসছে পিঠার আসর।

‘এই সব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে, বাইরে হয়তো শিশির ঝরছে, কিংবা প্যাঁচার গান সেও শিশিরের মতো হলুদ পাতার মতো’।

বাংলার হেমন্তকাল ধূসর পাণ্ডুলিপির কবি জীবনানন্দ দাশেরই। হেমন্তের শুরু হতেই শীতের এমন আগমনী দিনের প্রভাব পড়ছে শহর জীবনেও। রাস্তার মোড়ে মোড়ে শীতের পিঠার দোকানে পসরা সাজতে শুরু করেছে। বিক্রিবাট্টাও চলছে বেশ।

গত কয়েক দিনে ঈশ্বরদী উপজেলা ও প্রধান বাজারের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে, মোড়ে, ফুটপাতে, পাড়া-মহল্লায় শীতের পিঠা বিক্রি হতে দেখা যায়। রাস্তার ধারে মাটি ও গ্যাসের চুলা নিয়ে বসে যান মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা।

এসব দোকানে মেলে চিতই, ভাপা পিঠা, ডিম পিঠা ও কুলি । গরম-গরম ধোঁয়া ওঠা চিতই পিঠার মূল আকর্ষণ ভর্তা। খেজুরের গুড় ও নারকেল দিয়ে তৈরি ভাপাও পাওয়া যাবে এসব অস্থায়ী পিঠার দোকানে।

দোকানিরা বললেন, চিতই পিঠার মূল আকর্ষণ কয়েক পদের ভর্তা। সরিষা, কালোজিরা, ধনেপাতা, শুঁটকি ভর্তার চাহিদা বেশি। একটি চিতই পিঠা বিক্রি হয় দশ টাকায়। ভাপা পিঠা বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা করে। শনিবার দেখা যায়, চিতই, ভাপার পাশাপাশি নারকেল, কলা, তাল দিয়েও তৈরি পিঠাও দেখা গেছে কিছু দোকানে।

ঈশ্বরদী পৌর সুপার মার্কেটের সামনে পিঠার দোকানে ধোঁয়া ওঠা চিতই পিঠা বিক্রি করছিলেন মোহাম্মদ শাজাহান দেওয়ান । কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, তিনি এখানে ১২ মাসই চিতই পিঠা বিক্রি করি। তবে অন্যান্য সময়ের চাইতে শীতে পিঠা বিক্রি অনেকগুণ বেড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন তিনি ১ হাজার ৫০০ টাকার মতো পিঠা বিক্রি করেন। লাভ থাকে ৫০০ টাকার মতো। তিনি দিনে ছয় কেজির মতো চালের গুঁড়া জোগাড় রাখেন। বিকেল চারটার দিকে শুরু হয় তার পিঠা বিক্রি। রাত ১০টার দিকে উপকরণ শেষ হলে দোকানও বন্ধ করে দেন তিনি।

বাজারে এসে পথের পাশে গরম পিঠা দেখে লোভ সামলাতে পারেননি হাসিব আহমেদ। গরম চিতই পিঠায় ফুঁ দিতে দিতে সরিষার ভর্তা লাগিয়ে খাচ্ছিলেন তিনি। বলেন, বাড়িতে যেসব পিঠা খাই, সেগুলোর স্বাদ একরকম। সেগুলো আবার রেখে রেখে খাই। ঠান্ডা হয়ে যায়। এখানে গরম-গরম খাওয়ার স্বাদ অন্যরকম।

রিক্সা স্ট্যান্ড এলাকার ভাপা পিঠার দোকানি আবুল হোসেন বলেন, চিতই পিঠার চেয়ে ভাপা পিঠার খরচ বেশি এবং বানানোর কৌশলও ভিন্ন। রুচি-চাহিদা অনুযায়ী শীতের সময় মানুষ বিভিন্ন ধরনের পিঠা খায়। তাই আমি ভাপা পিঠার দোকান বসিয়েছি।

তিনি বলেন, ভাপা পিঠা বানালে লাভ কম,কিন্তু কষ্ট বেশি। মূলত শীত পড়লে পিঠা বিক্রি বাড়বে।

ঈশ্বরদী এটিআই কলেজের শিক্ষার্থী তৌসিফ আহমদ ও সাকিবুল হাসান মিয়াজি থাকে কলেজ ছাত্রাবাসে। বাড়িতে থাকলে প্রতিদিনই শীতের পিঠা খেত তারা। এখনো অবশ্য তারা শীতের পিঠা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না। ছাত্রাবাস থেকে বেরিয়ে দুকদম হাঁটলেই পিঠার স্বাদ নিতে পারছে।

গৃহিণী মৌমিতা বিশ্বাস বলেন, ব্যস্ততার কারণে ঘরে পিঠা তৈরি করার সময় পাওয়া যায় না। শর্টকাটে এখানকার পিঠার দোকানগুলোই ভরসা। এতে সময়ও বাঁচে শীতের আমেজও পাওয়া যায়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে