রাজশাহীতে শীত অনুভূত, নিম্ন আয়ের মানুষদের ফুটপাতই ভরসা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২২; সময়: ১২:২৬ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে শীত অনুভূত, নিম্ন আয়ের মানুষদের ফুটপাতই ভরসা

মনীষা আক্তার : ধীরে ধীরে শীত পরতে শুরু করেছে। কার্তিক মাসের শেষ ভাগেই দেশের উত্তরের জেলাগুলোকে স্পর্শ করেছে শীতের আগমনী হিমেল হাওয়া। মধ্য রাত থেকে কুয়াশা পরতে শুরু করেছে। দিন শেষে সন্ধ্যা নামতেই কমছে তাপমাত্রা। সন্ধ্যার পর থেকেই একটু একটু করে শীত অনুভূত হচ্ছে।

শীত মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে নানান প্রস্তুতি। বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতের কাপড়। রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন জায়গায় জমে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ ও ফুটপাতের অস্থায়ী শীতবস্ত্রের দোকান।
তবে গত বছরের তুলনায় এবার শীতের শুরুতেই এসব শীতবস্ত্রের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব দোকানে গরম কাপড় কিনতে ভিড় করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বেশির ভাগই নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষের ভিড় বাড়ছে ফুটপাতের দোকান গুলোতে। রাজশাহীর জিরো পয়েন্ট, সাহেব বাজার, রেল স্টেশন, অলোকার মোড়, লক্ষীপুর ও বিনোদপুর বাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। শিশু, নারী, পুরুষসহ সব বয়সের মানুষের শীতের পোশাক রয়েছে এই দোকান গুলোতে। এছাড়া ভ্যানে করে কাপড়ের দেখা মিলছে শহরের বিভিন্ন জায়গায়।

তবে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ক্রেতারা যেমন আসছেন তেমনি স্বল্প আয়ের মানুষেরাও অল্প দামে শীতবস্ত্র কিনতে ফুটপাতের দোকান গুলোতে ভিড় করছেন। শীতের চাদর, জ্যাকেট, সোয়েটার, কোট, মোটা কাপড়ের গেঞ্জি, হুডি, মাফলার, হাতমোজা, কানটুপিসহ সবধরনের শীতবস্ত্রই মিলছে এসব দোকানে। কোনো কোনো দোকানী আবার পসরা সাজিয়ে বসেছেন শুধুই শিশুদের শীতের কাপড়।

নগরীর কুমারপাড়া থেকে পরিবার নিয়ে শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন মাহাবুব আলম। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে শীতের আমেজ পড়তে শুরু করেছে। বিকেল থেকেই হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। তাই কাপড় কিনতে ছেলে মেয়েকে নিয়ে শীতবস্তের দোকানে এসেছি। এখান থেকে কিছু কাপড় কিনেছি। আরও দেখছি, ভালো লাগলে নিবো।

তিনি আরও বলেন, বড় মার্কেটের দোকানে শীতের কাপড়ের দাম তুলনামূলক বেশি। যে কাপড় এখানে ২০০ টাকায় কিনেছি, সেই কাপড় মার্কেটে নিতে গেলে লাগতো প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা। তাই কম দামে কাপড় পাওয়া যায় বলে এখান থেকে কাপড় কেনা।

ফুটপাতের দোকানদার সুসমান বলেন, এখনো তেমন একটা শীত পড়েনি। তারপরও বিক্রি ভালোই হচ্ছে। শীতের তীব্রতা বাড়লে আরো ভিড় হবে বলে আশা করা যায় । গত শীতে মানুষ যে মূল্যে গরম কাপড় কিনেছে এবার সেই দামে পাবে না। কারণ গতবারের চেয়ে কাপড়ের দাম বেশি ধরছে পাইকাররা।

করোনার পর থেকে সবকিছুর দাম বেড়েছে। একইসাথে এর প্রভাব পরেছে গরম কাপড়ের ওপর। তবে মূল্য যাইহোক না কেন নামীদামি দোকানের চেয়ে ফুটপাতে অনেক কম মূল্যে গরম কাপড় পাওয়া যায়।

শিশুর জন্য সোয়েটার কিনতে আসা রিকশাচালক মতিন বলেন, বড় বড় মার্কেটে কাপড়ের দাম অনেক বেশি হওয়ায় সেখানে গিয়ে কাপড় কিনতে পারিনা তাই ফুটপাতে এসে বাচ্চাদের শীত নিবারনের কাপড় কিনছি। তিনি আরো বলেন, বড় বড় মার্কেটে পোশাকের যে দাম তাতে আমাদের মত গরীব মানুষের শীত নিবারন করা কঠিন। ফুটপাতের এই দোকানগুলো আছে বলেই আমার মত অনেক গরীব মানুষ শীত নিবারণের কাপড় কিনতে সক্ষম হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তীব্র শীত পরার আগেই কাপড় কিনতে এসেছি যাতে কিছুটা কম দামে পাওয়া যায়। কারণ শীত যত বাড়বে কাপড়ের চাহিদাও তত বাড়বে। সেই সাথে কাপড়ের দাম নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে। এখন তবুও দাম-দর করে কেনা যাচ্ছে কিন্তু কিছুদিন পরে এই সুযোগটাও থাকবে না। শীত বাড়লে বিক্রেতারা এতোই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে তাদের বাড়তি কথা বলার সময় থাকে না।

শহরের চৌরাস্তায় ভ্রাম্যমাণ ভ্যান গাড়িতে করে শীতবস্ত্র বিক্রয় করছিলেন শামীম হাসান। তিনি বলেন, শীতের শুরু থেকেই বেচা বিক্রি ভালোই চলছে। ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সোয়েটার ও হুডি। একরেটে অল্প দামে ভালো মানের পোশাক বিক্রি করছি। মার্কেটের ভেতরের দোকানগুলোতে ক্রেতারা বেশি দামে জিনিস কিনে আর ফুটপাতে এলেই দামাদামি শুরু করে। সেজন্যেই আমি এক দামে বিক্রি করছি।

অন্যদিকে ফুটপাত ছাড়াও নামিদামী মার্কেটগুলোতেও শীতের পোশাক বিক্রি হওয়া শুরু হয়েছে। নগরীর জিরো পয়েন্টে অবস্থিত রিয়ম গ্যালারীর ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম বলেন, এখনও তেমনভাবে শীতের ক্রেতা আসতে শুরু করেনি। তারা বেশ নতুনত্ব চায়, যে কারণে নতুন ধরনের আইটেমের জন্য অপেক্ষা করছে সবাই। তবে গত বছরের কিছু কালেকশন এখন চলছে। চামড়ার তৈরি জ্যাকেট ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ভালো মানের সুয়েটার বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায়। সামনে আরও ভালো ভালো কালেকশন আসবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে