তাড়াশে বেহুলার স্মৃতি চিহ্নর সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ নেই

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২২; সময়: ৬:০৯ অপরাহ্ণ |
তাড়াশে বেহুলার স্মৃতি চিহ্নর সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ নেই

নূর ইসলাম রোমান, চলনবিল : সূর্য অস্ত যেতে বসেছে। তখনও দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন বেহুলার জীয়নকূপ দেখতে। তাড়াহুড়ো করে তারা কূপ দেখা শেষ করে চলে গেলেন কূপ থেকে কয়েক গজ দূরে বেহুলার খারী দেখতে। কথিত আছে, বেহুলার সোনার নৌকাটি ঐ খারীতেই ডুবে যায়।

বেহুলার খারীর মধ্যে মাটির নৌকার মতো দেখতে ঐ স্থানটিতে তারা কিছু সময় অবস্থান করে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হোন। মঙ্গলবার বগুড়া জেলার সাজাহানপুর উপজেলার খরনা গ্রাম থেকে ও সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার মাহমুদপুর গ্রাম থেকে ঐ সকল দর্শনার্থীরা এসেছিলেন বেহুলার জীয়নকূপ দেখতে।

খরনা গ্রামের মনিরুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম, সম্পা খাতুন ও মাহমুদপুর গ্রামের ময়না খাতুন জান্নাতী পারভীন, টিটু মিঞা বলেন, বগুড়ার গোকূলে ঐতিহাসিক বেহুলা লক্ষিন্দরের লোহার বাসরঘড় তাদের আকৃষ্ট করে। কিন্তু কুমারী বেহুলার জন্মস্থানের ইতিহাস সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না।

দেশের বেশীরভাগ মানুষের এখনও অজানা যে, ষোলশ শতাব্দীর প্রাচীন লোককাহিনীর বিশ্বনন্দিত সতী সাবিত্রী কিংবদন্তীর নায়িকা বেহুলা সুন্দরীর জন্মস্থান সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রামে। বেহুলার পিতার নাম বাছোবানিয়া ওরফে সায় সওদাগার। এখানে বিদ্যমান বেহুলার জীয়নকূপ, বেহুলার খারী ও খারীর মধ্যে মাটির নৌকা আকৃতির একটি স্থান, বটবৃক্ষ আঙিনা, মহল পুস্করণিসহ আরো কিছু স্মৃতিচিহ্ন।

স্থানীয় আব্দুল ওয়াহাব, আফজাল হোসেন ও ইউনুছ আলী বলেন, জঙ্গলের মধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো বেহুলার জীয়নকূপটি। ঐ সময় গরু-ছাগল কূপের মধ্যে পড়ে মরে থাকতো। কিন্তু সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান স.ম. আব্দুল জলিল বেহলার কূপ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষে এক জনসভা করে পঁচিশমণ গম বরাদ্দ করেন। সে সময়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রী জ্ঞানেন্দ্র চক্রবর্তীও একটন চাল অনুদান দেন। এসব অর্থ দ্বারা প্রথমবার ১৯৮৭ সালে, দ্বিতীয়বার ২০১৪ সালে শরীফ রায়হান কবির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন বিনসাড়া বেহুলার জীয়নকূপটি উপজেলা প্রসাশন কর্তৃক সংস্কারের মাধ্যমে দর্শনীয় করে তোলা হয়। বেহুলার জীয়নকূপ সংস্কার ও কূপের আশেপাশে মাটি খননের সময় আশর্য্য রকমের পুতুল, কলস, জগ, ঘটি ও থালা-বাসন পাওয়া যায়।

স্থানীয়রা আরো বলেন, কাছে ও দূর থেকে প্রতিদিনই মানুষজন বেহুলার জীয়নকূপ দেখতে আসেন। কিন্তু যথাযথ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে তার স্মৃতিচিহ্ন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সংস্কারের সময় জীয়নকূপের মুখ লোহার গ্রীল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কূপের ভেতরে চোখে পড়ে অল্প পানির সাথে ময়লার স্তুপ। জীয়নকূপ দেখতে ভেতরে যাওয়ার প্রবেশ দরজাটিও ভেঙে গেছে। সেটি পাশের একটি ঘরে ফেলে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কূপের আশপাশ আগাছা আর বাঁশঝাড়ে ঢেকে গেছে। এসব কারণে ব্যহত হচ্ছে সৌন্দর্য।

এদিকে জীয়নকূপের পাশে বেহুলার খারীর মধ্যে চোখে পড়ে মাটির নৌকা আকৃতির একটি স্থান। শুকনো খারীর চারদিকে ধানের আবাদ করা হয়েছে। কিন্তু দৃশ্যমান হয়ে রয়েছে মাটির নৌকার মতো দেখতে ঐ স্থানটি।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম বলেন, আগামীতে এডিপির বরাদ্দ থেকে বেহুলার জীয়নকূপ পুন:সস্কার ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে