রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ৮৯ জনের পদোন্নতি অবৈধ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২২; সময়: ২:০৬ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ৮৯ জনের পদোন্নতি অবৈধ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের জনবল কাঠামো ও অর্গানোগ্রাম প্রণয়নে গঠিত কমিটি সম্প্রতি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। তাতে ২০১০ সালে দেয়া ৮৯ জনকে পদোন্নতি ছিল অবৈধ।

এই ৮৯ জনের মধ্যে বর্তমানে ১২ জন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত আছেন। তারা এখন সপ্তম গ্রেডে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। তারা এখন পঞ্চম গ্রেড পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

২০১০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ৪৪নং সংস্থাপন স্মারকে একটি বিশেষ অফিস আদেশ জারি করা হয়।

ওই আদেশে শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন শাখার শাখা সহকারী, নিম্নমান ও উচ্চমান সহকারী, হিসাব সহকারী, সাঁট মুদ্রাক্ষরিক, সাঁটলিপিকার এবং সমমানের পদে কর্মরত ৮৯ জন কর্মচারীকে একযোগে ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ নামে একটি অস্তিত্বহীন পদে পদোন্নতিসহ জ্যেষ্ঠতা প্রদান করা হয়।

এ সুযোগ তারাই লাভ করেন; শিক্ষা বোর্ডে যাদের চাকরি ১৫ বছর পূর্ণ হয়েছিল ওই সময়। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এত বিপুল সংখ্যায় কর্মচারী একযোগে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেওয়া হলেও এ ধরণের কোনো পদের অস্তিত্ব রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে আগেও ছিল না এবং এখনো নেই। পদটি ছিল দ্বিতীয় শ্রেণীর।

এদিকে পদোন্নতির পর তাদের দায়িত্ব, সুবিধাদি, কর্মপরিধি, ও নিজ বেতন স্কেল অপরিবর্তিত রাখার কথাও বলা হয় ওই আদেশে। পদোন্নতি ঘোষণার পর এসব কর্মচারি জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেড পাওয়ার অধিকারী ছিলেন। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদারকির অভাবে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের অধিকাংশই ইচ্ছামতো একধাপ উপরের অষ্টম গ্রেডে উঠে পড়েন।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের জনবল কাঠামো ও অর্গানোগ্রাম প্রণয়নে গঠিত কমিটি সম্প্রতি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর নুরল আলম জনবল কাঠামো প্রণয়ন কমিটির আহবায়ক।

এ কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চলমান জনবলের পদোন্নতি, জ্যেষ্ঠতা, বেতন- সুবিধাদি ইত্যাদি বিষয়ে বিদ্যমান ব্যাপক অসঙ্গতির বিষয়; যা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে।

উল্লেখ্য, দেশের অন্য শিক্ষা বোর্ডগুলির মতো রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড একটি অধ্যাদেশ দ্বারা পরিচালিত স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধি-বিধানের আওতায় নিয়ন্ত্রিত। যে কোনো সিদ্ধান্ত বোর্ড সভা ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।

জনবল কাঠামো প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ৮৯ কর্মচারীকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল ২০০২ সালের ৩০ অক্টোবর তৎকালীন মুখ্য সচিব কালাম সিদ্দিকীর একটি পত্রের ওপর ভিত্তি করে। ওই পত্রটি তৎকালীন মুখ্য সচিব সংস্থাপন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বিভাগে প্রেরণ করেন।

পত্রটিতে তিনি উল্লেখ করেন- মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে নিম্ন ও উচ্চমান, শাখা সহকারী, স্টেনো টাইপিস্ট কাম সাঁট মুদ্রাক্ষরিক ইত্যাদি ধরণের পদ এখনো বিদ্যমান আছে। কিন্তু প্রযুক্তির প্রসার ও ব্যবহার বাড়ায় পদগুলোর ধরন পরিবর্তন করা দরকার। এতে কম জনবল দিয়ে অধিক মাত্রায় কার্য সম্পাদন করা সম্ভব।

সাবেক মুখ্য সচিবের ওই পত্রে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়কে বলা হয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত সাঁট মুদ্রাক্ষরিক, নিম্নমান ও উচ্চমান সহকারী, সাঁটলিপিকার, অফিস ও হিসাব সহকারী প্রভৃতি পদের নাম পরিবর্তন করে কম্পিউটারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পদ সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আলোচিত পত্রটি রাজশাহী বোর্ডেও যায় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে।

এদিকে ওই পত্রটির নির্দেশনা মোতাবেক রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড পুরানো পদগুলোকে কম্পিউটারের সঙ্গে মিল রেখে নতুন পদের নাম জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত না করে চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণীর নিম্নমান ও উচ্চমান সহকারীসহ সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক ও সাঁটলিপিকার অফিস ও হিসাব সহকারী পদগুলোতে কর্মরতদের এক আদেশে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নামে অস্তিত্বহীন পদে পদোন্নতির আদেশ জারি করেন।

ফলে এই পদোন্নতিপ্রাপ্তরা পুরনো সব পদে আগের মতোই কাজ করলেও তাদের সবাই নিজেদের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিতে থাকেন। এতে রাজশাহী বোর্ডে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এখনো সেই বিশৃঙ্খল পরিবেশ বিদ্যমান সেখানে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে- সাবেক মুখ্য সচিবের আধাসরকারি পত্রটিকে পুঁজি করে পদোন্নতি ও জ্যেষ্ঠতার আদেশ জারি ও কার্যকর করা হলেও ওই পত্রটির সঙ্গে রাজশাহী বোর্ডের এসব পদোন্নতির কোনো সম্পর্কই ছিল না। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিরীক্ষা করলে বিষয়টিতে ব্যাপক অসঙ্গতি ও ত্রুটি অনিয়ম ধরা পড়ার কথা; কিন্তু বছরের পর বছর তাও করা হয়নি।

কমিটির প্রতিবেদনের মতামত ও মন্তব্যে বলা হয়েছে- রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের জনবল কাঠামোতে কোনোদিনই প্রশাসনিক কর্মকর্তা নামে কোনো পদ ছিল না এবং এখনো নেই। ফলে এই পদটি প্রস্তাবিত জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তির কোনো সুযোগ নেই।

পদোন্নতি পাওয়া ৮৯ কর্মকর্তার মধ্যে এখনো যে ১২ জন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন তাদের চাকরির অবস্থা পরিবর্তন, জ্যেষ্ঠতা, সুযোগ সুবিধা ও আর পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই। তারা চাকরি জীবন শেষ, চাকরি পরিত্যাগ অথবা মৃত্যুবরণ করলে প্রশাসনিক পদ নামের পদটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষাবোর্ড থেকে বিলুপ্ত হবে।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১০ সালে পদোন্নতির সময় কারো যোগ্যতা যাচাই করে দেখা হয়নি। ওই পদোন্নতির কারণে শিক্ষা বোর্ডের জনবল কাঠামোতে এখনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নতুন করে একটা জনবল কাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। এর মাধ্যমে বোর্ডের জনবল কাঠামোয় শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশা করেন তিনি। সূত্র- যুগান্তর

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে