মোহনপুরে উচ্ছেদকৃত পরিবারের অবস্থা পরিদর্শনে উপজেলা প্রশাসন

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২২; সময়: ৮:২৪ অপরাহ্ণ |
মোহনপুরে উচ্ছেদকৃত পরিবারের অবস্থা পরিদর্শনে উপজেলা প্রশাসন

রায়হানুল হক রিফাত : মোহনপুর উপজেলার ১নং ধুরইল ইউপির পোল্লাকুড়ি গ্রামে সরকারি জমির উপর অবস্থিত বৃদ্ধের পরিবারের বাড়ি উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে মতৈক্য দেখা দিলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন উপজেলা প্রশাসন।

জানা যায়, গত ১ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে মোহনপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রিয়াংকা দাস উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ভূমিহীন কাজেম উদ্দিন টুকুর সরকারি ও অন্য ব্যক্তির মালিকানা জমির উপরে অবস্থিত টিন সেডের বাড়িটি ভাংচুর করেন। এ নিয়ে এলাকা জুড়ে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টার দিকে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমাতুজ জোহরা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রিয়াঙ্কা দাস, ধুরইল ইউনিয়ন ভূমি কর্মকতা শামিমা খাতুন ও ধুরইল ইউপির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ঘটনাস্থাল পরিদর্শন করেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পোল্লাকুড়ি গ্রামের উচ্ছেদকৃত ঐ বাড়িতে কাজেম উদ্দিন টুকু, তার স্ত্রী নুরেদা বিবি তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৩৫/৪০ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছিলেন। ছেলে মেয়েরা আর্থিক উপার্জনের মাধ্যমে ও চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় বিভিন্ন স্থানে বসবাস শুরু করে আর বৃদ্ধ কাজেম উদ্দিন টুকু (৮২) ও তার স্ত্রী নুরেদা বিবি (৭০) ঐ টিনসেডের বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। এমন সময় ঐ গ্রামের কিছু ব্যক্তি চলাচলের রাস্তার দাবিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগে বৃদ্ধ টুকুর বাড়িটি উচ্ছেদের দাবি জানায়। অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারি খাস জায়গা হওয়ায় সহকারি কমিশনার (ভূমি) তাদের সেখান থেকে সরে যেতে নোটিশ প্রদান করেন ও পরে থানা পুলিশের সদস্যদের নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বাড়িটির ৮৫ ভাগ অংশ ভেঙ্গে দেন। কিন্তু গ্রামবাসি অসহায় বৃদ্ধা পরিবারের বাড়িটি সেখানে রাখার দাবি জানায়।

এলাবাসিরা বলেন, এ অসহায় পরিবার বয়স্কো ভাতা ও ভিজিপির চাল নিয়ে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করেন। তাদের অনেক সময় বাড়িতে খাবার না থাকলে আমরা গ্রামবাসি তাদের খাবার দিয়ে থাকি। আর বাড়ি ভাংচুর করতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) প্রিয়াংকা দাসকে অনুরোধ জানালেও তিনি আমাদের কথা শোনেন না। আপাতত তাদের এখানেই থাকার ব্যবস্থা হোক এটা আমাদের দাবি।

ধুরইল ইউপির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, অসহায় বৃদ্ধা পরিবারের বাড়ি ভাংচুর করায় আমি মর্মাহত, এমন খাস জায়গায় অনেকেই বসবাস করছেন। কাউকে বিতারিত না করে এমন অসহায় পরিবারের বাড়ি উপর অভিযান চালানো আমার কাছে সঠিক বলে মনে হয়নি। বৃদ্ধ কাজেম উদ্দিন শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছেন, ফাঁকা স্থানে থাকার কারনে তার মৃত্যুও হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমি তাদের জন্য খাবার ও ঔষধের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমি বিষয়টির দ্রুত সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।

মোহনপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) প্রিয়াংকা দাস বলেন, এ বিষয়ে আমাদের নিকট সুনিদিষ্ট লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তফশীলদারকে সরজমিনে পরিদর্শন করে লিখিত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়। পরে তফশীলদার লিখিত প্রতিবেদনে জানান জমিটি আমাদের ১নং খাস খতিয়ান ভুক্ত। এরপর জনগনের চলাচলের বিগ্ন ঘটার সমাধানের লক্ষে কাজেম উদ্দিন টুকু ও নুরেদাকে বাড়িটব সরানোর জন্যে নোটিশ প্রদান করার পরেও সেখানে রয়ে যায়। তাই আমরা আইনগত ভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালায়।

এবিষয়ে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের পর বিভিন্ন ধরনের আলোচনা শুরু হলে আমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে বৃদ্ধ পরিবারের খোঁজ খবর নিয়ে এবং তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অন্য স্থানে অনুদানের বাড়িতে বসবাস করেছে, সেখানে তাদের ছেলে ব্যবস্থা করে ও নাতি সেনা সদস্য বলে জানতে পারি। তারা বাবা মাকে নিজের সাথে না রেখে আগের জায়গায় রেখেছেন। তাই তাদেরকে বলেছি তাদের খেয়াল নিতে। আর তাদের যেন থাকার সুব্যবস্থা হয় সেজন্য আমি আলোচনা/পর্যালোচনা করে আগামী সপ্তাহে সুষ্ট সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে