সিত্রাংয়ে ক্ষতির কবলে ৫৯ হাজার হেক্টর ফসলী জমি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২২; সময়: ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ |
সিত্রাংয়ে ক্ষতির কবলে ৫৯ হাজার হেক্টর ফসলী জমি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশের ১৯ জেলায় ৫৯ হাজার হেক্টর ফসলী জমি ক্ষতির কবলে পড়েছে। এরমধ্যে ৩৩ হাজার ৭০০ হেক্টর আমন ধান ও ২৫ হাজার ২০০ হেক্টর সবজি ও অন্যান্য ফসলের জমি রয়েছে। আক্রান্ত এসব জমির মধ্যে আমন ধান হেলে পড়ছে ও সবজির মাঠে পানি উঠেছে। ফলে এসব ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। তবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সেভাবে প্রভাব ফেলেনি। প্রাথমিকভাবে যা দেখছি তাতে বলা যায়, সেভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অর্থাৎ ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম।’

এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতি তেমন নেই। ১৯ জেলায় ৩৩ হাজার ৭০০ হেক্টর আমন ধানের জমি হেলে পড়েছে। আর অতিবৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে ১৪ হাজার হেক্টর সবজি ক্ষেত।’

তিনি বলেন, ‘কেবল ১৯ জেলা নয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সারাদেশেই কিছু না কিছু ফসল আক্রান্ত হয়েছে। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে ১৯ জেলার তথ্য তৈরি করছি। আগামীকাল ৬৪ জেলার তথ্য আমাদের হাতে আসবে। তবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমবে। ধারণা করা হচ্ছে, ৬ হাজার হেক্টর ধানের ক্ষতি হবে। আর সবজির ক্ষতি হবে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ হেক্টর।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের তথ্যমতে, সিত্রাংয়ে দেশের ১৯টি জেলা আক্রান্ত হয়েছে। বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরগুনা, ভোলা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর।

প্রতিষ্ঠানটির তৈরি করা প্রাথমিক এক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, এই ১৯ জেলায় ১৬ লাখ ৫০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৩৩ হাজার ৭০০ হেক্টর আমনের জমি। এসব জেলায় সবজি ও অন্যান্য ফসলের আবাদ হয়েছে ৪২ হাজার ৬১৮ হেক্টর। সিত্রাংয়ে আক্রান্ত হয়েছে ২৫ হাজার ২০০ হেক্টর। ১৯ জেলায় মোট আক্রান্ত জমির পরিমাণ ৫৮ হাজার ৯০০ হেক্টর।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপকূলীয় ১৯ জেলাসহ দেশের সব জায়গায় কৃষি ফসলের কিছু কিছু ক্ষতি হয়েছে। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়েও ধানের জমি হেলে পড়েছে। ওই এলাকার কৃষক হালিম জানান, যেসব নিচু জমিতে আমন আবাদ করেছি, বাতাসে সেগুলো পানিতে হেলে পড়েছে। ওইসব জমিতে ধান তেমনভাবে হবে বলে মনে হচ্ছে না।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ গ্রামের কৃষকরা জানান, তাদের গ্রামের সবগুলো সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেতে সবজি গাছ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। চর মনসা গ্রামের কৃষক মো. জাহের জানান, তিন একর জমির টমেটো গাছ পুরো মাটির সাথে মিশে গেছে। কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন গ্রামের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুক মুন্সি জানান, তার এলাকায় ১০টি ঘর ভেঙে গেছে। এ সময় পুরো এলাকার অর্ধেকের বেশি ফসল নষ্ট হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার হরশি গ্রামের কৃষক হিমেল কবির বলেন, ‘ধানের বিরাট ক্ষতি হয়েছে। এমন বৃষ্টি সাধারণত হয় না। বাতাস আর বৃষ্টিতে বেশিরভাগ জমির ফসল হেলে পড়েছে। অনেক জমির ধান এখন পানির নিচে। শুয়ে পড়া জমিতে ধান কম হয়।’ আরও বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে কৃষকরা এও বলছেন, ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কমই। এছাড়া ফসলের পাশাপাশি মাছ ও প্রাণিসম্পদের বেশকিছু ক্ষতির হিসেব করেছে সরকার। দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে, খুলনা বিভাগে অন্তত এক হাজার মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে।

এদিকে, আক্রান্ত ফসলের ক্ষতি কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, যেসব ধান হেলে পড়েছে সম্ভব হলে ৫ থেকে ৬টি করে ধানের গোছা একসঙ্গে রশির সাহায্যে বেঁধে দিয়ে খাড়া করে রাখতে হবে। এতে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে ধান যদি আধা পাকা বা পাকার কাছাকাছি থাকে তবে জমি থেকে দ্রুত পানি সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।

তবে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি একটি শঙ্কার কথাও জানিয়েছে। বর্তমান বৃষ্টির কারণে সুগন্ধি জাতে শীষ ব্লাষ্ট ও অন্যান্য কিছু রোগবালাই দেখা দিতে পারে। এই রোগগুলো হয়ে গেলে আর দমন করা যায় না। তাই বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শীষ ব্লাষ্ট রোগের জন্য ট্রাইসাইক্লাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন ট্রুপার প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৮ গ্রাম বা স্ট্রবিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন নাটিভো প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৬ গ্রাম ওষুধ ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এই পরিমাণ মিশ্রণ ৫ শতাংশ জমিতে ৭ দিনের ব্যবধানে ২ বার বিকেলে স্প্রে করতে হবে।

এছাড়া ঝড় বৃষ্টির কারণে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগ দেখা দিতে পারে। ধানের ফুল আসার পর এ রোগটি দেখা দিলে ফলনের তেমন কোন ক্ষতি হয় না বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে