নবীযুগে অনুমোদিত কিছু খেলাধুলা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২২; সময়: ১২:৪৭ অপরাহ্ণ |
খবর > ধর্ম
নবীযুগে অনুমোদিত কিছু খেলাধুলা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ইসলামে মানব জীবনের কোনো বিষয়কে উপেক্ষা করা হয়নি। বাদ পড়েনি শরীরচর্চার নানা দিক ও উপকরণ। মানসিক ও শারীরিক বিকাশ সাধনের জন্য একাধিক খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতায় উৎসাহিত করেছেন প্রিয়নবী (স.)। তেমনই কিছু অনুমোদিত খেলাধুলার বিবরণ এখানে তুলে ধরা হলো—

১) তীর নিক্ষেপ
রাসুলুল্লাহ (স.) তীর নিক্ষেপকে উৎসাহিত করে বলেন, ‘আল্লাহ একটি তীরের ওসিলায় তিনজন লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন—তীর নির্মাতা যে নির্মাণকালে কল্যাণের আশা করেছে, এই তীর নিক্ষেপকারী এবং তা নিক্ষেপে সাহায্যকারী। তিনি আরো বলেন, তোমরা তীরন্দাজি করো ও ঘোড়দৌড় শিক্ষা করো। তবে তোমাদের ঘোড়দৌড় শেখার তুলনায় তীরন্দাজি শেখা আমার কাছে বেশি পছন্দনীয়।’ (সুনানে তিরমিজি: ১৬৩৭)

২) সাঁতার
রাসুলুল্লাহ (স.) সাঁতার শিখতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেক এমন জিনিস, যাতে আল্লাহর স্মরণ নেই তা অর্থহীন বা ভুল, তবে চারটি বিষয় ছাড়া। তা হলো, দুই লক্ষ্যের মাঝে চলা, ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, স্ত্রীর সঙ্গে হাসি-কৌতুক করা, সাঁতার শেখা।’ (সুনানে কুবরা লিল-নাসায়ি: ৮৯৪০)

৩) ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা
রাসুলুল্লাহ (স.) স্বয়ং ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা করিয়েছেন। এই প্রতিযোগিতা হাফয়া থেকে শুরু হয়ে সানিয়্যাতুল বিদায় শেষ হতো। বর্ণনাকারী বলেন, আমি মুসা (রা.)-কে বললাম, এর দূরত্ব কী পরিমাণ হবে? তিনি বললেন, ছয় বা সাত মাইল। আর প্রশিক্ষণহীন ঘোড়ার প্রতিযোগিতা শুরু হতো সানিয়্যাতুল বিদা থেকে এবং শেষ হতো বনু জুরাইকের মসজিদে। আমি বললাম, এর মধ্যে দূরত্ব কত? তিনি বললেন, এক মাইল বা তার তদ্রূপ। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-ও এই প্রতিযোগীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। (সহিহ বুখারি: ২৮৭০)

৪) মল্লযুদ্ধ
ইসলামের সোনালি যুগে একটি বহুল প্রচলিত খেলা ছিল মল্লযুদ্ধ। এমনকি দীন প্রচারের স্বার্থে মহানবী (স.) নিজেও একবার মল্লযুদ্ধে অংশ নেন। মক্কার একজন বিখ্যাত মল্লযোদ্ধা ছিল রুকানা বিন ইয়াজিদ। একদিন মহানবী (স.) তাঁকে দীনের দাওয়াত দিলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে। তখন রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁকে বলেন, আমি যদি মল্লযুদ্ধে তোমাকে পরাজিত করি, তবে কি তুমি আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে? রুকানা তাতে সম্মত হলো। অতঃপর মহানবী (স.) তাঁকে মল্লযুদ্ধে পরাজিত করেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম: ১/৩৯০)

৫) দ্রুত হাঁটার প্রতিযোগিতা
দীনের দাওয়াত, যুদ্ধের অভিযান ও জীবিকার অনুসন্ধানে বের হওয়ার পর তখনকার মানুষের ভেতর দ্রুত হাঁটার প্রতিযোগিতা হতো। দীনি কাজে বের হয়ে এমন প্রতিযোগিতা করাকে মহানবী (স.) উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুই গন্তব্যের মধ্যে হাঁটে তাঁর প্রতি পদক্ষেপে আছে প্রতিদান।’ (সুনানে তিবরানি: ২/১৮০)

৬) পশুর প্রশিক্ষণ
রাসুলুল্লাহ (স.) বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয় এমন পশুকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেক এমন জিনিস, যাতে আল্লাহর স্মরণ নেই তা অর্থহীন বা ভুল, তবে চারটি বিষয় ছাড়া। তা হলো, দুই লক্ষ্যের মাঝে চলা, ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, স্ত্রীর সঙ্গে হাসি-কৌতুক করা, সাঁতার শেখা।’ (সুনানে কুবরা লিল-নাসায়ি: ৮৯৪০)

৭) ভারোত্তোলন
তৎকালীন আরব সমাজে ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতাও ছিল। বলা হয়ে থাকে, সাহাবি জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)-এর মাথায় এই খেলার ধারণা প্রথম আসে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর এমন একদল মানুষের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা পাথর উত্তোলন করছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তাদের কী হয়েছে? একজন বলল, তারা পাথর উত্তোলন করছে এবং দেখছে তাদের মধ্যে কে বেশি শক্তিশালী। তিনি বলেন, আল্লাহর পথের কর্মীরা তাদের চেয়ে শক্তিশালী। (ইরওয়াউল গালিল: ৫/৩৩৩)

উল্লেখ্য, খেলা বৈধ হওয়ার কিছু মূলনীতি রয়েছে। যেমন- ১) আল্লাহর স্মরণ ও শরিয়তের মৌলিক বিধিবিধান পালনে বাধা না থাকা ২) আকিদা বা বিশ্বাসগত ত্রুটি-বিচ্যুতি না থাকা ২) জুয়া, বাজি ও শিরকের উপকরণ না থাকা ৩) অধিক সময় ব্যয় না করা ৪) প্রসিদ্ধি বা সুনাম কুড়ানোর চেষ্টা না থাকা ৫) খেলাকে পেশা বানানো যাবে না ৬) জীবনের ঝুঁকি না থাকা ৭) পর্দার বিধান ও শালীনতা বজায় রাখা।

আলেমদের মতে, এসব মূলনীতিগুলো মেনে যেসব খেলাধুলায় চিত্তবিনোদন সম্ভব, সেগুলো জায়েজ। তবে রাসুলুল্লাহ (স.) কিছু খেলাকে সরাসরি নিষিদ্ধ করেছেন। ওসব খেলাধুলা জায়েজ নেই। যেমন- ১) পাশা খেলা ২) কারো নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তুকে খেলার সামগ্রী বানানো ৩) কবুতর নিয়ে খেলা করা। (সহিহ মুসলিম: ২২৬০; তিরমিজি: ২১৬০; আবু দাউদ: ৪৯৪০)

উল্লেখিত খেলাধুলা ছাড়াও আরো অনেক নিত্য নতুন খেলা রয়েছে, যেগুলোর প্রকৃতি ও ধরন বিস্তারিত জেনে হুকুম প্রদান করতে হয়। সুতরাং সেগুলো সম্পর্কে বিজ্ঞ আলেম থেকে জেনে নিতে হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শরিয়তের অনুমোদন নেই—এমন খেলা থেকে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে