মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরনের চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশসমূহ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২২; সময়: ৯:৪২ অপরাহ্ণ |
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরনের চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশসমূহ

মো: সোহেল রানা : সূর্য্যরে আলোয় রাতের অন্ধকার দূর করে পৃথিবীকে উজ্জ¦ল করার সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে শিক্ষা, যা একটি দেশকে বা একটি জাতিকে নয়-আলোকিত করেছে গোটা বিশ্বকে আর প্রতিফলিত হচ্ছে আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি জাতির মধ্যে ভিন্ন আঙ্গিকে।

প্রাথমিক শিক্ষা মানুষের জীবনের ভিত্তি গড়ে আর তাই প্রাথমিক শিক্ষায় যে দেশ যত সচেতন সে দেশ তত উন্নত। সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষা ক্ষেত্রে বাঁধাগুলোকে চিহ্নিত করা এবং সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সচেতনতা।

রাজশাহী জেলার দূর্গাপুর উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে নিম্নলিখিত চ্যালেঞ্জসমূহ পরিলক্ষিত হয়েছে :

 শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সমস্যা
 ঝরে পড়া
 অভিভাবকদের অসচেতনতা
 শিক্ষকদের মোটিভেশনের অপর্যাপ্ততা
 দারিদ্র্য
 যাতায়াত ব্যবস্থা
 সামজিক নিরাপত্তা
 শুদ্ধ ভাষা চর্চায় পর্যাপ্ত আগ্রহের অভাব
 জনবল সংকট
 নৈতিক শিক্ষার অপ্রতুলতা
 ভৌগলিক অবস্থান
 সাংস্কৃতিক অংশগ্রহণ

উল্লিখিত চ্যালেঞ্জসমূহ নিরশনে সুপারিশসমূহঃ

সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে বিদ্যালয়ের পরিবেশ আর্কষণীয় ও আনন্দময় করার পাশাপাশি অভিভাবক সমাবেশ, মিড-ডে মিল কার্যক্রম জোরদারকরণ, শিশুশ্রম বন্ধ ও পর্যাপ্ত মনিটরিং এবং হোম ভিজিটের মাধ্যমে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে।

অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে উদ্বুুদ্ধ করে বিভিন্ন কার্টুন বা নাটিকার মাধ্যমে শিক্ষার সুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে হবে। সেই সাথে বিদ্যালয়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অভিভাবকদের আমন্ত্রণ জানানো ও পুরস্কৃতকরণ অব্যাহত রাখতে হবে।

দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি শ্রেণী কক্ষে অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সহায়তা প্রদানের জন্য স্থানীয় ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও শতভাগ শিক্ষার্থীকে সরকারিভাবে উপবৃত্তির আওতায় নিয়ে আসা।

সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুরুতেই সমাজের সকল শ্রেণীর জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন আনায়নে বিভিন্ন সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন:-১। বিভিন্ন উঠান বৈঠকের আয়োজন ২। সভা সেমিনার ৩। গণমাধ্যমে শিক্ষামূলক প্রচারণা।

প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে কর্মকর্তা এবং শিক্ষকসহ যে সকল শূণ্যপদ রয়েছে তা পূরণে দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ। শুদ্ধ ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে তদারকি কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকসহ সকলকে আরো মনোযোগী হতে হবে।

শ্রেণী পাঠ দানের পাশাপাশি নিয়োমিত নৈতিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে যাতে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীরা নৈতিক শিক্ষা লাভ করে ভবিষ্যতে আলোকিত মানুষ হতে পারে। প্রাপ্ত প্রশিক্ষণ শ্রেণিকক্ষে সফলভাবে যথাযথ বাস্তবায়নের জন্যে তদারকি জোরদার করতে হবে। শিক্ষকদের মোটিভেশন বাড়ানোর জন্য প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।

সীমান্তবর্তী এলাকায় শিশুরা যেন মাদক এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

পড়াশোনার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক সাংস্কৃতিক চর্চাই শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করতে বিদ্যালয়গুলোতে এককভাবে কিংবা গুচ্ছ পদ্ধতিতে একাধিক বিদ্যালয় একত্রিত হয়ে সাংস্কৃতিক সংঘ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তিসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সহজেই পদার্পন করতে পারবে।

সর্বোপরি এসডিজি’র ৪ নম্বর লক্ষ্য অনুযায়ী সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে উপর্যুক্ত চ্যালেঞ্জসমূহ নিরসনে প্রস্তাবিত সুপারিশসমূহ সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে অনায়াসেই অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এজন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সকলেরই সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা।

লেখক- মো: সোহেল রানা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দূর্গাপুর, রাজশাহী

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে