আবুল কালাম আযাদের “বাংলাদেশ পুলিশের ইতিবৃত্ত”

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২২; সময়: ৭:৫৪ অপরাহ্ণ |
আবুল কালাম আযাদের “বাংলাদেশ পুলিশের ইতিবৃত্ত”

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ পুলিশের ইতিবৃত্ত গ্রন্থটি লিখেছেন আবুল কালাম আযাদ। গ্রন্থটিতে মানব সভ্যতার উষালগ্ন থেকে পুলিশের জন্মক্ষণ ও উৎপত্তিগত অর্থ অন্বেষণ থেকে শুরু করে মানব সভ্যতায় পুলিশের বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা ও লেখক আবুল কালাম আযাদ।পেশাদারিত্বের পাশাপাশি লেখালেখিও করেন।পুলিশের বাস্তব বিষয়বস্তু আলোকপাত করে দীর্ঘ সময় পরে সম্প্রতি এই বইটি প্রকাশিত হয়েছে৷

সুশীল ও সজ্জনের স্বাধীনতা রক্ষা, অসহায় ও পীড়িতদের অধিকার ও সম্পদ হরণে তস্করের প্রতিরোধ, দুষ্টের দমন, পাপাচার, নিবারণ করাই পুলিশ সৃজনের কারণ। তবুও পুলিশের ভূমিকায় সেবাপ্রত্যাশীর তুষ্টি যেন এক দুষ্প্রাপ্য বিষয়। আলোচিত-সমালোচিত, বিধি-বিধায়কের রাঙ্গা চোখ, রাজা-প্রজার বিপরীত চাওয়া-পাওয়া, নির্মমতার প্রতীক অথবা ঠোলা যেভাবেই তাচ্ছিল্য করে ডাকা হোক না কেন, পুলিশ রাষ্ট্রের বড়ই অপরিহার্য প্রশাসনিক অঙ্গ।
সেই পুলিশের ক্রমবিকাশের সুদীর্ঘ ইতিবৃত্ত স্ববিস্তারে আলোচিত হয়েছে গ্রন্থটিতে।

গ্রন্থটি ছাত্র-শিক্ষক, গবেষক-সমালোচক, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্য, আগামী দিনে যারা পুলিশ সংস্কারে ভূমিকা রাখবেন, পুলিশ পরিচালনা করবেন এবং যারা পুলিশকে গালি দেবেন তাদের সবার কাছে বইটি সমাদৃত হওয়ার দাবি রাখে । লক্ষ্য করি, শান্তিপূর্ণ সামাজিক অবস্থান যে ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে তা হলো আইন শৃঙ্খলা, যার অপরিহার্য অনুষঙ্গ হলো পুলিশ। ইতিহাসে উপেক্ষিত তথাপি মানব সভ্যতার মানদণ্ডের অন্যতম নিয়ামক হলো পুলিশিং, চার্লস রেইথের এই কথার সুরে সুর মিলিয়েছেন লেখক আবুল কালাম আযাদ তার বাংলাদেশ পুলিশের ইতিবৃত্ত’ বইটিতে । যুগে যুগে দেশে দেশে শাসকের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে পুলিশ বিবর্তিত হয়েছে মানুষকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে। ডিহি কলকাতার সেই পুলিশি ব্যবস্থার কালানুক্রমিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের আধুনিক বাংলাদেশী পুলিশ গড়ে ওঠার ইতিহাস বর্ণনায় বৈশ্বিক পুলিশিং এর বৈচিত্র্যময় নানাদিক লেখকের কাগজে কলমে স্ফরিত হয়েছে অনবদ্যভাবে।

‘বাংলাদেশ পুলিশের ইতিবৃত্ত’ শুধু উপমহাদেশের উপনিবেশিক পুলিশের কথা বলে না, মানব ইতিহাসে পুলিশি ব্যবস্থার সূত্রপাত থেকে শুরু করে কালানুক্রমিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বরকন্দাজ পুলিশ থেকে আজকের জনতার পুলিশ হয়ে ওঠার কথা বলে। চার্লস রেইথ ইতিহাসের পাতায় পুলিশকে যেমন অন্ধকারে খুঁজে পেতে হাতড়ে বেড়িয়েছেন, তেমনি বইটির লেখক ইতিহাসের হারিয়ে যাওয়া সকল খণ্ডসমূহ একসাথে করে জোড়া দিতে যার পরনাই সচেষ্ট হয়েছেন। মানব সভ্যতায় পুলিশি ব্যবস্থার অনুপস্থিতি যেন এক অলীক কল্পনা, অর্বাচীনতা। যুগে যুগেই সমাজ বিনির্মাণে, পরিশীলিত জীবনাচরণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ছিল, আছে, থাকবে। তবে জনতার তরে আত্মোৎসর্গকারী চাকুরে পুলিশের এই ধন্যবাদ-বিহীন নিরলস শ্রমের অবমূল্যায়ন যেন লেখকের সুরে অনেকটা আক্ষেপের ব্যঞ্জনায় ধ্বনিত হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধে বুক চিতিয়ে দেয়া এই সুমহান বাহিনী যেমন নন্দিত তেমনি জনতার আদালতে জবাবদিহীতার লক্ষ্যে দন্ডায়মান।

এসবকে পাশ কাটিয়ে পুলিশি ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে নির্মোহভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। তথ্য উপাত্তের প্রাচুর্যতা ও লেখনশৈলীর সমৃদ্ধ বইটি প্রকাশনার পূর্বে জনাব আবুল কালাম আযাদ রুটিন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এক অদম্য স্পৃহাযুক্ত অধ্যাবসায়কেই নির্দেশ করে। বইটি পাঠক মহলে দারুণভাবে সমাদৃত হবে আমার বিশ্বাস।পুলিশকে জানতে, পুলিশ সম্পর্কে বুঝতে, সমালোচনা করতে, ভেঙে গড়তে, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সকলের চাহিদার আলোকে এই বইটি দারুণ কাজে আসবে। তথ্যবহুল, সুখপাঠ্য বইটির স্রষ্টা জনাব আবুল কালাম আযাদ বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ এবং চৌকস কর্মকর্তা। প্রত্যাশা করি, লেখকের এই যুগান্তকারী সৃষ্টি সর্বমহলে প্রশংসিত হবে এবং মহাকালব্যাপী আলো ছড়াবে।

যারা ভবিষ্যতে পুলিশে চাকরি করবেন, বা যারা আইন বিষয়ে লেখা পড়া করছেন, অপরাধ বিজ্ঞান বা পুলিশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ আছে তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ “বাংলাদেশ পুলিশের ইতিবৃত্ত ” বইটি । আলোচিত এই বইটি প্রকাশিত হয়েছে দিব্য প্রকাশনী থেকে। গ্রন্থ জগতের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রকমারি ডট কমে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে