সেন্টুর কথামতো বাচ্চাও হলো সেই মহিষের

প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২২; সময়: ১:৫৭ অপরাহ্ণ |
সেন্টুর কথামতো বাচ্চাও হলো সেই মহিষের

নিজস্ব প্রতিবেদক : পদ্মার চরে চরাতে গিয়ে হয়েছে মহিষের বাচ্চা। সেটি নিয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরেছেন কৃষক সেন্টু। নিলামে মহিষ কেনার পর কৃষক সেন্টু বলেছিলেন, নিজের মহিষ তিনি নিজেই কিনলেন। বাড়ির রাস্তায় ছেড়ে দিলে এই মহিষ সোজা তাঁর বাড়িতেই যাবে। সেন্টুর সে কথা সত্য হয়েছিল ২২ সেপ্টেম্বর। সেন্টু আরও বলেছিলেন, তাঁর কেনা ১৫ টা মহিষের মধ্যে দুটি পাড়া, ১৪ টিই পাড়ি । এর মধ্যে ৯টিই গর্ভবতী। ১০ দিনের মধ্যে ৪ টার বাচ্চা হবে।

সেন্টুর এ কথাও সত্য হয়েছে। কেনার ৯ দিনের মধ্যে একটি মহিষের বাচ্চা হয়েছে। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নীলবোনা চরে একটি মহিষ বাচ্চা দিয়েছে। বিকেলে সেন্টু চর থেকে মহিষগুলোকে বাড়ি আনেন। সেন্টুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়। সেন্টু মা মহিষটিকে ‘বৈশাখী’ নামে ডাকছিলেন। আর বাচ্চাটির নাম রেখেছেন ‘রাজা’। সেন্টু বললেন, তিনি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন ১০ দিনের মধ্যে চারটি মহিষের বাচ্চা হবে। এর মধ্যে একটার হলো। দু’পাঁচ দিনের মধ্যে বাকি তিনটারও হবে।

লীলবোনা গ্রামের এই কৃষক বাড়িতে মহিষ পালন করেন। বাড়ির সামনে দিয়েই বয়ে গেছে পদ্মা নদী। নদীর চরে মহিষগুলো চরে বেড়ায়। আগে চরের বাথান ঘরেই রাতে থাকত মহিষগুলো। গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে ওই বাথান থেকেই নদীতে নেমে যায় ১৬ টি মহিষ। ভাসতে ভাসতে হারিয়ে যায়। এ নিয়ে ৮ সেপ্টেম্বরই পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ করেন সেন্টু। ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহিষগুলো উদ্ধার করে।

সেন্টু বিজিবির কাছে গিয়ে মহিষের মালিকানা দাবি করেন। কিন্তু তাঁকে পাত্তা দেওয়া হয়নি। অথচ সীমান্ত এলাকা বলে কার বাড়িতে কয়টা গরু-মহিষ আছে তার হিসাব রাখে বিজিবি। বিজিবির খাতাতেই সেন্টুর ২১টি মহিষ থাকার হিসাব আছে। তারপরও বিজিবি মহিষগুলোকে কাস্টমস বিভাগের শুল্ক গুদামে হস্তান্তর করে। সেন্টু সেখানে গিয়েও মালিকানা দাবি করেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল প্রত্যয়নও দেন। তাঁর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি করা হলেও এসব মহিষ সেন্টুর নয় বলে প্রতিবেদন দেয় কমিটি।

পরে ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজশাহী নগরীর দাসপুকুরে শুল্ক গুদামে ১৫টি মহিষের প্রকাশ্যে নিলাম শুরু হয়। তখন সেখানে আসেন মহিষের মালিক দাবিদার সেন্টুও। ৮টি মহিষ নিলাম দিয়ে কার্যক্রম ওই দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। পরদিন দুপুরে আবার ৭টি মহিষ নিলামে বিক্রি করা হয়। প্রথম দিন যাঁরা মহিষগুলো কিনেছিলেন তাঁদের কিছু লাভ দিয়ে সেগুলো কিনে নেন সেন্টু। দ্বিতীয় দিন তিনি নিজেই নিলামে অংশ নিয়ে মহিষ কেনেন। মোট ১৫টি মহিষ কিনতে সেন্টুকে গুনতে হয় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। পরে সেদিন মহিষগুলো বাড়ি নেওয়া হয়।

সেদিন বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে মহিষগুলোকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় ২০ মিনিট চেনা পথ ধরে হেঁটে মহিষের পাল সেন্টুর বাড়ি চলে যায়। এ সময় বাড়ির নারীরা কাঁদতে শুরু করেন। আদর-যত্নে খাওয়াতে শুরু করেন। মহিষগুলোকে তাঁরা পাগলি, ঘন্টি, যমুনা, ময়ূরী, ফুতনসহ নানা নামে ডাকতে থাকেন। এসব ডাকে সাড়াও দিচ্ছিল মহিষগুলো। এ নিয়ে আজকের পত্রিকার প্রিন্ট এবং অনলাইনে সচিত্র সংবাদ প্রকাশ হয়।

নিজের ১৫টি মহিষ নিলামে কিনে মালিকানা প্রমাণ করলেন কৃষকনিজের ১৫টি মহিষ নিলামে কিনে মালিকানা প্রমাণ করলেন কৃষক। সেন্টু দাবি করছেন, তাঁর হারিয়ে যাওয়া সব মহিষই উদ্ধার হয়েছিল। কিন্তু একটি নিলামে আনা হয়নি। ওই মহিষটার নাম ফুরকানি। ফুরকানিও গর্ভবতী। কয়েক দিনের মধ্যে তারও বাচ্চা হবে। তিনি জানান, এখন হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে আর পদ্মার চরে রাতে মহিষ রাখেন না। সারা দিন চরিয়ে বিকেলে বাড়ি নিয়ে আসেন। চারপাশ ঘিরে নিরাপদে মহিষ বেঁধে রাখেন।

সেন্টু আরও জানান, মহিষগুলো তাঁর সন্তানের মতো। সেগুলো হারিয়ে ফেলার ভয়ে নিলাম থেকে নিজেই কিনেছেন। তবে টাকা ফেরত পেতে তিনি কাস্টমস অফিসে আবেদন করেছেন। কাস্টমস কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে আবার শুনানি করে তাঁর বক্তব্য শুনতে চেয়েছেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সেন্টুর লিখিত আবেদন জমা দেওয়ার পর একদিন অফিস হয়েছে। তাই শুনানির কার্যক্রম এগোয়নি। তবে শুনানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে সেন্টু নিজে অথবা তাঁর মনোনীত ব্যক্তি এসে বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। তারপর সিদ্ধান্ত হবে।’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে