সিংড়ায় মুয়াজ্জিন নিয়োগ কেন্দ্র করে বাড়ি ঘরে হামলা ভাংচুর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২; সময়: ৯:০৫ অপরাহ্ণ |
সিংড়ায় মুয়াজ্জিন নিয়োগ কেন্দ্র করে বাড়ি ঘরে হামলা ভাংচুর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, নাটোর : নাটোরের সিংড়া উপজেলার পাকুরিয়া গ্রামে স্থানীয় আওয়ামীলীগের দু’টি পক্ষের মধ্যকার পূর্ব বিরোধ ও স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন নিয়োগ দেয়াকে কেন্দ্র প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার সন্ধ্যায় পাকুরিয়া বাজারে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে প্রায় দুই শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এই হামলা চালায় বলে জানা গেছে। আর এই ঘটনার নেতৃত্ব দেন সাবেক ইউপি সদস্য আলিফ হোসেন ও ইটালী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আরিফুর রহমান আরিফেরে হুকুমে এই হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি সহ ২টি বাড়ি ও ৮ দোকান ভাংচুর সহ লুটপাট করেছে। ঘটনার সময় দেশীয় অন্ত্রের ঝলকানিতে গ্রামজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে রাতেই সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সিংড়া) সার্কেল জামিল আকতার ও পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অপরদিকে মঙ্গলবার দুপুরের পর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ,পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান, জেলা পুজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি ও নাটোর পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি এবং সিংড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা আৗয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক জান্নতুল ফেরদৌস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তারা ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলেন।

এদিকে এই হামলার ঘটনায় সাবেক ইউপি সদস্য ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তা লাল চক্রবর্তী বাদি হয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান আরিফ সহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে প্রায় আড়াইশ জনের বিরুদ্ধে সিংড়া থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন।

অপরদিকে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় স্থানীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এর সহধর্মিনী সিংড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আরিফা জেসমিন কণিকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে দেয়া একটি পোস্টকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনার ঝড় শুরু হয়েছে। তিনি তার পেইজে লিখেছেন, নাটোরের সিংড়ায় ৩নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ এর নেতৃত্বে পাকুরিয়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ২টি বাড়ি ও ৬টি দোকান ১৯৭১ও ২০০১ এর মত ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

লুটপাটের মালপত্র ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যায়। একই সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র দিয়ে মারপিট ও মেম্বারের অফিসঘর ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক আরিফুর ইসলাম আরিফ এর বিরুদ্ধে। জাহাঙ্গীর আলমের পিতা নজরুল ইসলাম ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

পোষ্টে কনিকা আরো লিখেছেন , সোমবার বিকাল ৪টার পর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আরিফ চেয়ারম্যান নিজে উপস্থিত থেকে তার সমর্থকরা এ তান্ডব চালায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই আরিফ চেয়ারম্যান নৌকার বিরুদ্ধে ৭ টি ইউনিয়নে ঘোড়া মার্কার বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেছে। ঘটনার সুত্রপাত সেখান থেকেই। প্রতিটি ইউনিয়নেই তারা একইভাবে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের উপর দমন, নির্যাতন, নিপীড়ন চালাচ্ছে। দল এবং প্রশাসন এই সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে জিম্মি। ভুক্তভোগীরা ৯৯৯ ফোন করে আধা ঘন্টা ধরে চেষ্টা করেছে।

কিন্তু সিংড়া থানা পুলিশ ফোন রিসিভ করেনি। লুটপাটের পরে সন্ধ্যায় পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ নিউজ করারও সাহস পায়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং প্রশাসনের কাছে আমি এই সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।

এদিকে এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মনোনিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর ভোট করাকে কেন্দ্র করে পাকুরিয়া গ্রামে স্থানীয় আওয়ামীলীগের দুটি পক্ষের জন্ম হয়।

আর এর পর থেকেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও বিভিন্ন সরকারি পুকুর দখল এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কমিটি গঠনে সংঘাত-দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রুপ নেয়। এছাড়া সম্প্রতি স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম এর কাছে ভোটে হেরে যান সাবেক ইউপি সদস্য আলিফ হোসেন। এরপর থেকেই নতুন করে এলাকায় সংঘাতের সৃষ্টি হয়। চলতি মাসের ২৫ সেপ্টেম্বর বাদ আছর পাকুরিয়া বাজার জামে মসজিদের মুয়াজ্জিম নিয়োগ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে নতুন করে বিরোধের সৃষ্টি হয়।

সোমবার পাকুরিয়া বাজারে অবস্থিত ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের কার্যালয়, সাবেক ইউপি সদস্য ও সাবেক ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তা লাল চক্রবর্তীর মার্কেট এবং অ্যাডভোকেট মানিক লাল চক্রবর্তী চেম্বারসহ ৮ থেকে ১০টি দোকানে ভাংচুর ও লুটপাট চালায় প্রতিপক্ষ সাবেক ইউপি সদস্য আলিফ হোসেন ও ইটালী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সহ তাদের কর্মী সমর্থকরা। এসময় পাকুরিয়া বাজারে দেশীয় অস্ত্র উচিয়ে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে স্থান ত্যাগ করে হামলাকারীরা।

এবিষয়ে ইটালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী এবং সাবেক ইউপি সদস্য ও সাবেক ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তা লাল চক্রবর্তী বলেন, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মনোনিত প্রতীকে ভোট করার অপরাধে আওয়ামীলীগের নিবেদিত নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়তই হামলা ও মামলার শিকার হচ্ছে। এর জেরে সোমবারও হাইবিড আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে পাকুরিয়া বাজারে তান্ডব চালানো হয়েছে।

এবিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য আলিফ হোসেনের সাথে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবী করে বলেন, পূর্ব বিরোধের জের ধরে ইটালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের লোকজন এসে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে তিনি এই ঘটনার সাথে কোন ভাবেই জড়িত নন ।

ইটালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। ঘটনাটি দুঃখজনক। এবিষয়ে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তবে এই ঘটনায় আমাকে জড়ানোর ফেসবুকে যে পোষ্ট দেওয়া হয়েছে তা কেন দিয়েছেন তিনি তা তিনিই ভাল বলতে পারবেন। আমার রাজনৈতিক সুনাম ক্ষুন্ন করতে একটি গোষ্ঠি এধরনের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে আমাদের শ্রদ্ধেয় কনিকা ভাবীকে ভুল বুঝিয়েছে।

উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ও সিংড়া পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন,পাকুরিয়া গ্রামের দু’টি পক্ষের মধ্যেকার পুর্ব বিরোধ নিয়ে নিজেদের মধ্যে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা শুনেছেন। এবিষয়ে দলীয়ভাবে তদন্ত করে ব্রবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জন্য বলা হয়েছে।

নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে বলেন, সাবেক ও বর্তমান দুই জন ইউপি সদস্যের মধ্যেকার পুর্ব বিরোধের জেরে এই হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এব্যাপারে একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে। জড়িতরা কেউ রেহায় পাবেনা।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ঘটনাটি ব্যক্তিগত রেষাশেীতেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছ্।ে আমি ও পুলিশ সুপার সরেজমিন এলাকা পরিদর্শন করেছ্। যারা এর পিছনে দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কাঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য যত ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন সেটা আমি এবং পুলিশ সুপার গ্রহণ করব।

এদিকে নাটোরে অবস্থানরত আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছে তার সহধর্মিনী সিংড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আরিফা জেসমিন কণিকার ফেসবুক আইডিতে এই ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতাকে দায়ী করে পেষ্ট দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে প্রতিমন্ত্রী সমকাল প্রতিনিধিকে বলেন,এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়।

তিনি যেটি পোষ্ট করেছেন তার নিজের কথা। এবিষয়ে তিনি কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি বলেনে কেউ যদি মনে করেন তার মান ক্ষুন্ন বা মানহানিকর কোন বিষয় রয়েছে তাহলে তিনি আইনের আম্রয় নিতে পারেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে