কম্বোডিয়ার সঙ্গে এফটিএতে লাভ হবে বাংলাদেশের
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : কম্বোডিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) থেকে সরাসরি খুব বেশি সুবিধা পাওয়ার আশা কম। কারণ দেশটি বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের উল্লেখযোগ্য বাজার নয়। এমনকি কম্বোডিয়া থেকে আমদানিও খুব বেশি নয়।
তবে ভূরাজনৈতিক কারণে কম্বোডিয়ার সঙ্গে এফটিএর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এর মাধ্যমে ১০ দেশের জোট অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশন্স (আসিয়ান) এবং ১৬ দেশের জোট রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপে (আরসিইপি) প্রবেশের সুযোগ তৈরি হবে বাংলাদেশের।
জোট দুটিতে চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ডের মতো বড় বাজার রয়েছে। এ বিবেচনায় ব্যাপক অর্থে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে।
বাণিজ্য বিশ্নেষক এবং গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশেন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কম্বোডিয়ার সঙ্গে এফটিএ হলে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে। এর মাধ্যমে আসিয়ান এবং আরসিইপিসহ অন্যান্য আঞ্চলিক জোটে প্রবেশ সহজ হতে পারে। এতে লাভবান হবে বাংলাদেশ।
তবে বেশি লাভবান হওয়ার জন্য বড় রপ্তানি বাজারগুলোর সঙ্গেই এফটিএ করা প্রয়োজন। এতে রপ্তানি ব্যাপক হারে বাড়বে। এছাড়া প্রতিযোগী দেশগুলো যে সব দেশের সঙ্গে এফটিএ করছে, সেসব দেশকে টার্গেট করা প্রয়োজন।
জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ অনুবিভাগের প্রধান অতিরিক্ত সচিব নূর মো. মাহবুবুল হক বলেন, ২০১৮ সালের পর থেকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এফটিএ করা হবে এমন দেশের তালিকায় কম্বোডিয়াও রয়েছে। সরকারপ্রধান কম্বোডিয়ার সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে পরবর্তী কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।
বাণিজ্য সহযোগিতা জোরদারে এফটিএ চুক্তি সইয়ে সম্মত হয়েছে ঢাকা-নমপেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী সামদেক তাক্কা মোহা সেনার পাদেই টেকো হুন সেনের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ ব্যাপারে সম্মত হন দুই নেতা।
বাংলাদেশ-কম্বোডিয়ার মধ্যকার বর্তমান বাণিজ্য বাংলাদেশের অনুকূলে। ২০২০ সালে কম্বোডিয়া ৯২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশে। ওই বছর বাংলাদেশ ১ কোটি ১০ লাখ ডলারের মতো পণ্য রপ্তানি করেছে কম্বোডিয়ায়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছর বাংলাদেশ ১ কোটি ৮২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে কম্বোডিয়ায়। এর মধ্যে ১ কোটি ৫৭ লাখ ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।
বিজিএমইএর পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, এফটিএ হলে রপ্তানি বাড়বেই। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ভূরাজনীতি। বাজার হিসেবে কম্বোডিয়ার সম্ভাবনা খুব উজ্জ্বল না হলেও সম্ভাবনাময় অন্যান্য দেশের বাজার বা জোটে প্রবেশাধিকারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। ফলে কম্বোডিয়ার সঙ্গে এফটিএর একটা রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।
পোশাকের বাইরে কম্বোডিয়ায় রপ্তানি হয় বাংলাদেশের এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে- হোমটেক্সটাইল, পাদুকা ও চামড়াপণ্য, ওষুধ, ময়দা, দুধ, বিভিন্ন ধরনের মসলা, পাট ও পাটজাত পণ্য, সিরামিক, প্রসাধনী ইত্যাদি। অন্যদিকে কম্বোডিয়া থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে তুলা, ভোজ্যতেল, সার, সিমেন্টের ক্লিংকার ইত্যাদি।
বর্তমানে বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়া একে অন্যকে বাণিজ্য ক্ষেত্রে মোস্ট ফেভারড নেশন (এমএফএন) মর্যাদা দিচ্ছে। ২০১০ সালে একটি যৌথ কমিশন গঠনে সম্মত হয় দুই দেশ। ২০১৩ সালে করা আরেক চুক্তির ফলে দু’দেশের কূটনীতিকদের সফরে আলাদা ভিসার প্রয়োজন হচ্ছে না।