বীরের বেশে ঘরে ফিরলো চ্যাম্পিয়ন নারীরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২; সময়: ১১:৩৭ অপরাহ্ণ |
বীরের বেশে ঘরে ফিরলো চ্যাম্পিয়ন নারীরা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : প্রথমবারের মতো নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ইতিহাস পড়া বাংলাদেশকে বরণ করা হলো ইতিহাস সৃষ্টি করা আয়োজনে। একেবারে রাজসিক সংবর্ধনায় স্মরণীয় করে রাখো হলো নারী দলের দেশে ফেরা। উচ্ছ্বাসে ভরপুর ছিলো শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবন।

১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নেপালকে হারিয়ে অনন্য ঐতিহাসিক বিজয় ছিনিয়ে দেশে ফেরেন বাংলার দামাল মেয়েরা। ছাদখোলা বাসে চড়ে আনন্দ-উল্লাসে ফিরেছেন তারা বীরের বেশে, দেশের পতাকা উড়িয়ে। বিমানবন্দরে রাজসিক সংবর্ধনা পেয়েছেন সাবিনারা।

বুধবার বেলা পৌনে দুইটায় বাংলাদেশে পা রাখে নারী ফুটবল দল। শাহজালাল বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে ছাদখোলা বাসে করে বাফুফে ভবনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন ফুটবলাররা। যা ছিলো দেশের ইতিহাসে প্রথম এমন আয়োজন।

চ্যাম্পিয়নদের আসার খবর দুপুর থেকেই বিমানবন্দর ও এর আশেপাশে জড়ো হতে শুরু করেন হাজার হাজার মানুষ। বিমানবন্দর ছাড়িয়ে সেই ভিড় ছড়িয়ে পড়ে প্রধান সড়কে। এ যেনো জনস্রোতের জোয়ার। ক্যামেরার চোখও ছিলো ভীষণ ব্যস্ত।

সাম্প্রতিককালে কোনো খেলার ইভেন্ট কাভার করতে সংবাদমাধ্যমের এমন ভিড় বিমানবন্দরে আর হয়নি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। স্বপ্ন কন্যাদের বরণ করে এমনই উন্মাদনা এই বাংলায়।

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর সংবাদকর্মীদের মধ্যে যেন হুল্লোড় বেধে গেলো। টিভি ক্যামেরা আর ক্যামেরা। অসংখ্য সংবাদকর্মী। সবাইকে ঠিক সংবাদকর্মীও বলা যায় না, প্রচুর ইউটিউবারও ছিলেন সেখানে।

কাঠমান্ডু থেকে ফেরার পথে ফ্লাইটের দৃশ্যও একই রকম।। সেখানেও উৎসবের আবহ। বাংলাদেশ বিমানের পক্ষ থেকে সাফের শিরোপা জেতা দলকে অভিনন্দন জানান সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার ও বিমানের ক্রু সানোয়ার হোসেন।

জীর্ণ ফুটবলে জাগিয়ে আশা। জয়ের গৌরবে, নতুন দিনের আলো ফুটিয়ে, নেপালে ইতিহাস গড়া মেয়েদের দেশে ফেরা। দুপুরে দেশের মাটি স্পর্শ করে সাফ শিরোপা জয়ী দল। বিমানবন্দরে সাবিনা-মারিয়া-কৃষ্ণাদের বরণ করে নেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং বাফুফের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মানিক।

শুরুতেই কেক কাটা হয়। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী কেক তুলে দেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের মুখে। ফুলেল শুভেচ্ছায় চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের বরণ। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী একে একে দলের প্রত্যেক খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের গলায় পরিয়ে দেন ফুলের মালা।

দু’হাতে ট্রফি উঁচিয়ে মুখে চওড়া হাসি এঁকে এগিয়ে যান অধিনায়ক সাবিনা। তাকে অনুসরণ করে গোটা দল। বিমানবন্দরের বাইরে তখনও অপেক্ষায় হাজারও জনতা। অনেকের হাতেই জাতীয় পতাকা, নানা রকম ব্যানার। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত চারপাশ।

ট্রফি উঁচিয়ে গায়ে চ্যাম্পিয়ন লেখা রিবন জড়িয়ে মেয়েরা যখন বেরিয়ে আসছিলেন, তখন অনেকের চোখমুখের অভিব্যক্তিতে অবিশ্বাস। গোলকিপার ঋতুপর্ণা চাকমা বলছিলেন, আমরাও ভেবেছিলাম, অনেক মানুষ থাকবে। কিন্তু এত বেশি হবে, সেটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত।

শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাবার সময় অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ছোট্ট করে বলেন, সবাইকে ধন্যবাদ, আমাদের জন্য দোয়া করবেন। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ বলুন বা ১৮ কোটি কিংবা ২০ কোটি, এই ট্রফি বাংলাদেশের সব মানুষের।

বিমানবন্দরের বাইরে বাঘিনীদের অপেক্ষায় ওদের স্বপ্নযাত্রার বাহন, ছাদখোলা বাস। যাকে ঘিরে মানুষেরও আগ্রহ ছিলো সবচেয়ে বেশি। শহরের বুক চিরে নাগরিক কোলাহলে গৌরবের সুরভী ছড়িয়ে ছুটে যায় সাবিনা ও তার দল। আশার জীবন্ত ভাষায় ওরাই যেন প্রাণের মোহনা।

বিমানবন্দর থেকে চ্যাম্পিয়নদের ছাদখোলা বাস বেরিয়ে আসতেই দেখা গেলো রাস্তার দুই ধারে মানুষের ঢল। শুধু তাই নয়- বড় বড় ভবনের ছাদ, বারান্দায় দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন অনেকে। বিমানবন্দর সড়ক থেকে মহাখালী সড়কের সবগুলো ওয়াকওয়ে ছিলো মানুষে ঠাসা।

মেয়েদের ছাদখোলা বাস দেখেই কাজকর্ম বন্ধ করে সারিবদ্ধ হয়ে হাততালি দিতে অভিনন্দন জানাতে থাকেন সবাই। ধীর লয়ে এগোতে থাকা বাসটা যতক্ষণ না পর্যন্ত দৃষ্টিসীমার বাইরে গেলো, ততক্ষণ পর্যন্ত চলে সবার অভিনন্দন।

সাবিনারাও হতাশ করেননি। ট্রফি উঁচিয়ে, হাত নেড়ে সাড়া দিচ্ছিলেন তাঁরা। অনেকে তো গানের তালে তালে নেচেছেন মন খুলে। ছাদখোলা বাসের পেছনেই সমর্থকদের একটা ট্রাকে বারবার বেজে উঠছিল ‘জ্বলে ওঠো, বাংলাদেশ’ গান।

ছাদখোলা বাসে সাফজয়ীরারও হতাশ করেননি। রাস্তায় ভক্তদের অভিবাদনে সাড়া দিচ্ছিলেন হাত তুলে বা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে। ফুটবলাররা কেউ বসে, কেউ বা দাঁড়িয়ে উল্লাস করতে করতে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাদের বাসের সামনে ও পিছনে বিভিন্ন মিডিয়ার গাড়ি দেখা যায়।

বিমানবন্দর থেকে ছাদখোলা বাসটি যাত্রা শুরু করে কাকলি হয়ে। এরপর মহাখালী ফ্লাইওভার ব্যবহার করে জাহাঙ্গীর গেট, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অফিসের পর বিজয় সরণীতে আসে।

সেখান থেকে তেজগাঁও হয়ে পুনরায় ফ্লাইওভার দিয়ে মৌচাক হয়ে কাকরাইলে আসে বাসটি। কাকরাইল থেকে হাতের বাঁয়ে- ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং মতিঝিল ও শাপলা চত্বর হয়ে বাফুফে এসে পৌঁছেছে সাফজয়ী মেয়েরা।

সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে এসে পৌঁছায় দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা হাতে নিয়ে দেশে ফেরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী মেয়েরা।

যে ভবনটি তাদের আবেগ-ভালবাসা, পেশাদারিত্বের অন্যতম মাধ্যম, যেখানে বছরজুড়ে থাকা-খাওয়া, অনুশীলন, জিম-নিজেদের সেই চেনা ঠিকানায় পা রেখে অন্য এক ভালো লাগা অনুভূতি ছিল মেয়েদের চোখে-মুখে।

বাফুফে ভবনে পৌঁছানোর পর দলটিকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নিয়েছেন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সবার আগে ফাইনাল সেরা স্বপ্না। তার পেছনে সাবিনারা। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ট্রফি জয়ী দলকে বাফুফের কনফারেন্স রুমে। সেখানেই তাদের ধন্যবাদ জানায় বাফুফে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে