জীবন-মৃত্যুর-সন্ধিক্ষণে ছাত্রলীগ নেতা জীবন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২; সময়: ৫:০০ অপরাহ্ণ |
জীবন-মৃত্যুর-সন্ধিক্ষণে ছাত্রলীগ নেতা জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক, নলডাঙ্গা : ফেসবুকে লাইভ করে সালিশে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করার জেরে উপজেলার চেয়ারম্যানের পিটুনিতে জীবন-মৃত্যুর-সন্ধিক্ষণে নাটোরের নলডাঙ্গার ছাত্রলীগ নেতা জামিউল আলীম জীবন (২০)। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইভ সার্পটে রয়েছেন।

জীবনের চাচাতো ভাই আরিফুল ইসলাম বলেন, বুধবার সকালে জীবনকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। এর পর চিকিৎসকরা মৌখিকভাবে জানায় জীবন মারা গেছে। পরে তাকে আবারও আইসিইউতে নেয়া হয় এবং লাইভ সার্পট দেয়া হয়। পরে আমরা আইসিইউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা বলছে, জীবন এখনো জীবিত। তাকে লাইভ সার্পটে রাখা হয়েছে।

কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ প্রতিবেশী ফরহাদ হোসেন (৫৩) ও তার ছেলে জামিউল আলীম জীবনকে (২০) পিটিয়ে জখম করেছেন।

সোমবার রাতে নলডাঙ্গা উপজেলার রামশাকাজিপুর আমতলী বাজারে জীবনকে পিটিয়ে জখম করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ। এ সময় তাকে বাচাঁতে গিয়ে আহত হন তার পিতা ফরহাদ হোসেন। পরে আহত পিতা-পুত্রকে উদ্ধার করে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতাল এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জামিউল আলীম জীবন নলডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও নলডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজের ছাত্র। মসজিদের মাইক চুরির বিচারে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লাইভ করেন। এর জের ধরে তাকে পিটিয়ে জখ করে আসাদুজ্জামান আসাদ।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী জাহানারা বেগম বাদি হয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ, তার বড় ভাই ফয়সাল শাহ ফটিক ও অপর ভাই আলিম আল রাজি শাহের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫ জনের বিরুদ্ধে নলডাঙ্গা থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, গত শনিবার রামশারকাজীপুর আমতলি বাজারে জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজের পর মসজিদের ভিতর থেকে মাইকের যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ওই গ্রামের কয়েকজনকে সন্দেহ করেন। এ নিয়ে সলিশী বৈঠক বসিয়ে সন্দেহ ভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে শাসন গর্জন করেন।

একই সঙ্গে প্রতিবেশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক বর্তমানে কলেজ শিক্ষক এসএম ফিরোজের ভাই ফরহাদ হোসেন ছেলে জামিউল আলিম জীবনকে জোরপুর্বক দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ। কিন্তু জামিউল আলিম জীবন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে লাইভ ও স্ট্যটাস দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন চেয়ারম্যান আসাদ।

সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে জামিউল আলিম জীবন আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদসহ তার লোকজন জীবনকে ডেকে পাঠায়। এক পর্যায়ে জীবনের সাথে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয় এবং জীবনকে পেটাতে থাকে।

এ অবস্থায় তার বাবা ফরহাদ হোসেন এগিয়ে এলে তাকেও মারপিট করতে থাকে। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ একটি বাঁশের লাঠি দিয়ে জীবনের মাথায় আঘাত করেন। এতে জীবন মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন। ছেলেকে উদ্ধারে গিয়ে আহত হন ফরহাদ হোসেনও। এসময় স্থানীয় লোকজনসহ স্বজনরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তাদের অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

আহত ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই এবং স্থানীয় আমতলি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এসএম ফকরুদ্দিন ফুটু জানান, তার ভাই ফরহাদ হোসেন ও ভাতিজা দুইজনেই মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হওয়ায় বেশ অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তার ভাইয়ের অবস্থার উন্নতি হলেও ভাতিজা জামিউল আলিম জীবনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। জামিউল আলিম জীবনের হার্ড ও ফুসফুস ব্লক হয়ে গেছে বলে ডাক্তার তাদের জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ অন্যায়ভাবে তার ভাই ও ভাতিজাকে বেদম মারপিট করেছে। এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চান তিনি।

তবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আজাদ এসব অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে বলেন, ফেসবুকে লাইভে জামিউল ইসলাম জীবন আমার বিরুদ্ধে মানহানিকর মিধ্যা তথ্য দিয়ে অপ্রচার করে। সোমবার সন্ধ্যার পর আমতলি বাজারে ফেসবুকে আমার নামে মিথ্যা ও বানোয়ট তথ্য ছড়ানোর বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তারা বাপ-বেটা আমার ওপর হামলা চালায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমার বিরুদ্ধে অপ্রচার কেন করা হচ্ছে জানতে চাইলে জামিউল ও তার বাবা ফরহাদ হোসেন ও তাদের লোকজন আমার উপর হামলা করে। আমার মাথায় লাঠিসোটা দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এসময় উপস্থিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ওপর চড়াও হয়ে মারপিট করে। এসময় আমি নিজে তাদের রক্ষা করি। তার ওপর হামলার এঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি বলে জানান তিনি।

নলডাঙ্গা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, খবর পাওয়া মাত্র রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। যাতে এই ঘটনা নিয়ে আর কোন বিশৃংখলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পরিবারের লোকজনকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী জাহানারা বেগম বাদি হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত আরো পাঁচজনকে আসামি করে নলডাঙ্গা থানায় একটি এজাহার দাখির করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে