নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে সরকার বদ্ধপরিকর : প্রধানমন্ত্রী
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তার সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার। লন্ডনে রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য বাবাসহ পরিবারের ১৮ সদস্যকে হারিয়েছি। এরপর ২১ বছর দেশে গণতন্ত্র ছিল না। প্রায় ২০ বার দেশে মিলিটারি ক্যু করা হয়েছে বা চেষ্টা করা হয়েছে। আর্মি থেকে রাজনৈতিক দল হয়েছে। তারা তো মানুষের কাছে কখনোই ভোটের জন্য যেত না। সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আমার সংগ্রাম ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার এটা নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে।
বাংলাদেশে গুম ও জাতিসংঘের উদ্বেগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এই প্রশ্ন তোলে, তাদের দেখা উচিত নিজেদের দেশে কত মানুষ গুম হচ্ছে। অভিযোগ না করে সঠিক তথ্য নিয়ে কথা বলা উচিত।
প্রায় সাড়ে ৭ মিনিটের সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের স্মৃতি ও কমওয়েলথে রানির ভূমিকাও তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি শুধু রানিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন মমতাময়ী মা। তার সঙ্গে যতবার দেখা হয়েছে, আমি সেটাই অনুভব করেছি। বিবিসির রোববারের জনপ্রিয় শো ‘সানডে উইথ লরা কুইন্সবার্গ’-এ শেখ হাসিনা এই সাক্ষাৎকার দেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ৭ বার কমনওয়েলথ সামিটে অংশ নিয়েছি। এছাড়া ২০১২ সালে রানির দাওয়াতে অলিম্পিকে যোগ দিয়েছি। প্রত্যেকবারই দেখা হয়েছে। উনার অসাধারণ স্মরণশক্তি ছিল। একবার কমনওয়েলথ সম্মেলনে আমাকে দেখতে না পেয়ে রানি খোঁজ করেন হাসিনা কোথায়, ওকে দেখছি না কেন!’
রানিকে নিয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা জানান, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে তিনি প্রথম দেখেন ১৯৬১ সালে। রানি ওই বছর বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছিলেন।
শেখ হাসিনা জানান, তখন তিনি শিশু ছিলেন এবং বাবা শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে রানিকে দেখেছিলেন।
রানির শেষকৃত্য উপলক্ষে লন্ডনে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রানির শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এখন তাকে ওয়েস্টমিনস্টার হলে রাখা হয়েছে। বিশ্বের বহু রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে এরইমধ্যে রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বোন শেখ রেহানা ও লন্ডনে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমকে সঙ্গে নিয়ে ঐতিহাসিক ওয়েস্টমিনস্টার হলে যান শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম সাংবাদিকদের জানান, তারা দুইজনই (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন এবং দুঃখ ভারাক্রান্ত ছিলেন পুরোটা সময়। রানি উনাদের দুই বোনকেই খুব ভালোবাসতেন। একজনকে দেখলে আরেক জনের কথা জিজ্ঞেস করতেন।
এদিন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নসহ বিশ্বনেতাদের অনেকেই ব্রিটিশ রানির কফিনে শ্রদ্ধা জানান। সাইদা মুনা তাসনিম জানান, রানির কফিনে শ্রদ্ধা জানানোর পর সেখানে দাঁড়িয়ে কিছু সময় নীরবতা পালন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে তাকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতরের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ল্যাঙ্কাস্টার হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে রানির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে খোলা শোকবইয়ে সই করেন প্রধানমন্ত্রী।
শোকবইয়ে শেখ হাসিনা বাংলায় লেখেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ, আমার পরিবার ও আমার ছোট বোন রেহানার পক্ষ থেকে গভীর শোক জ্ঞাপন করছি।’ শেখ রেহানা শোকবইয়ে স্বাক্ষর করে লিখেছেন, ‘তিনি ছিলেন আমাদের হৃদয়ের রানি, চিরদিন তাই থাকবেন।’