উত্তরাঞ্চলে সন্দেহভাজন হাইড্রোসিল রোগী ২৫ হাজার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২; সময়: ১০:২২ অপরাহ্ণ |
উত্তরাঞ্চলে সন্দেহভাজন হাইড্রোসিল রোগী ২৫ হাজার

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দেশের উত্তরাঞ্চলের ১০ জেলায় প্রায় ২৫ হাজার সন্দেহভাজন হাইড্রোসিলের রোগী রয়েছেন, যারা সামাজিক ভ্রান্ত ধারণার কারণে স্বাস্থ্যসেবা চাইতে লজ্জা বোধ করেন। চিকিৎসা সেবার বাইরে থেকে যাওয়ার ফলে তারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সমানভাবে অংশ নিতে পারেন না।

সোমবার দুপুরে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) আয়োজিত ‘এনশিওরিং হেলথ ইকুইটি অ্যান্ড ইকোনমিক পার্টিসিপেশন ফর ক্রনিক লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিস পেশেন্টস থ্রম্ন সার্জিক্যাল ইন্টারভেনশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও কালাজ্বর নির্মূল কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ফাইলেরিয়াসিস একটি পরজীবীঘটিত রোগ, যা কিউলেক্স মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত অঙ্গের ফুলে যাওয়া এবং পরে ঘন ঘন জ্বর হওয়া হলো এ রোগের প্রধান উপসর্গ, যা আক্রান্ত ব্যক্তির দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন মাত্রার অক্ষমতার কারণ হতে পারে।

ফাইলেরিয়াসিসে আক্রান্ত পুরুষ রোগীর অন্ডথলি ফুলে যেতে পারে, যা হাইড্রোসিল নামে পরিচিত। অন্ডথলি ফুলে যাওয়া রোগীরা অত্যন্ত অবহেলিত, প্রায়শই সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্নের শিকার। তাদের সহায়তা করা প্রয়োজন।

আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় হাইড্রোসিলে (একশিরা) আক্রান্ত ২০৩ জন রোগীকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালের অস্ত্রোপচার সহায়তা দিয়েছে আইসিডিডিআরবি। এর মধ্যে ১৪৫ জন রোগীকে রংপুর এবং ৫৮ জনকে কুড়িগ্রাম জেলায় অপারেশন করা হয়।

২০২০-২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে অফিসের সহায়তায় আইসিডিডিআরবি ৮৩৮ জন হাইড্রোসিল রোগীকে অপারেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করেছিল।

আইসিডিডিআরবির গবেষকরা একটি ফলাফল মূল্যায়ন কার্যক্রমও পরিচালনা করেছেন, যাতে দেখা যায়, অপারেশন এ রোগীদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের ওপর উলেস্নখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। অস্ত্রোপচারের এ কার্যক্রম অত্যন্ত সাশ্রয়ী, যার অর্থ অস্ত্রোপচারের অর্থনৈতিক সুবিধা সার্জারির খরচ অপেক্ষা ১৫ গুণ বেশি। অধিকন্তু, এ রোগীরা এখন আগের চেয়ে বেশি ঘণ্টা কাজ করতে সক্ষম।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাস্টেনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক লিয়াকত আলী, উপ-পরিচালক রাগীব ইবনুল আসিফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সাবেরা সুলতানা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইসিডিডিআর,বির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ডক্টর সামস এল আরেফিন।

এ সময় অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম তার বক্তব্যে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করার উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, হাইড্রোসিলসহ অন্যান্য নেগলেক্টেড ট্রপিক্যাল ডিজিসে আক্রান্ত মানুষেরা নানা ধরনের সামাজিক বৈষম্যের শিকার হন, যা তাদের জীবনমানকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। এ মহান কার্যক্রমের মাধ্যমে আইসিডিডিআর,বি ও বাংলাদেশ ব্যাংক সেসব ভুক্তভোগী মানুষদের সহায়তা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে চৌধুরী লিয়াকত আলী হাইড্রোসিল আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং বলেন, এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। বাংলাদেশ ব্যাংক হাইড্রোসিল আক্রান্ত রোগীদের অস্ত্রোপচার করার এ কর্মযজ্ঞে সহায়তা করতে পেরে গর্বিত এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের মহৎ উদ্যোগে আমাদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

আইসিডিডিআরবি-র ল্যাবরেটরি সায়েন্সেস অ্যান্ড সার্ভিসেস ডিভিশন (এলএসএসডি)-র ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র ডিরেক্টর ডক্টর দীনেশ মন্ডল উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে