উত্তাল মহাসাগরের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা জানালেন মিথিলা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২; সময়: ১:৪৪ অপরাহ্ণ |
খবর > বিনোদন
উত্তাল মহাসাগরের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা জানালেন মিথিলা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : অভিনেত্রী হিসেবেই ব্যাপক পরিচিতি রাফিয়াত রশিদ মিথিলার। তিনি একজন সমাজকর্মীও। ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। সম্প্রতি অফিসের কাজেই গিয়েছেন উগান্ডায়।

সেখানে বিভিন্ন রকম ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, ফিল্ড ভিজিট শেষে পৌঁছান পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে। উদ্দেশ সেখানকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে একটা আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা। সেই কর্মশালা ভালোভাবেই শেষ হয়। তবে বিপদে পড়েন ফেরার পথে। ভারতের কলকাতায় ফেরার জন্য বিমান ধরবেন। তখনই বিপত্তি। শুরু হয় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি। সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রিটাউনের ভৌগলিক অবস্থান আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে। ঝড়ের মুখে কীভাবে বিপদে পড়তে হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতাই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছেন মিথিলা।

কী লিখেছেন মিথিলা

এই অভিনেত্রী জানান, যারা সাধারণত তার অফিসিয়াল ট্যুরের সুন্দর ছবি দেখে ‘আহা, উহু’ করেন এই পোস্ট আসলে তাদের উদ্দেশেই। জানিয়েছেন, সুন্দর ছবির পেছনে আসল অভিজ্ঞতাটা তিনি শেয়ার করছেন। লেখেন, ‘আমার কর্মশালা গতকাল শেষ হয় এবং গতকাল রাতেই আমার সিয়েরা লিওন থেকে কলকাতায় যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। আয়রাকে যেহেতু বাড়িতে রেখে এসেছি, কাজের বাইরে আর একদিনও আমার থাকতে ইচ্ছা করে না বাইরে। তো যাই হোক, কালকে বিকেল বেলা থেকেই প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি। সিয়েরা লিওনের রাজধানী, ফ্রিটাউন, আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে। সিয়েরা লিওনের এয়ারপোর্টটা ফ্রি টাউন থেকে দূরে একটা বিচ্ছিন্ন জায়গায় অবস্থিত, যার নাম ‘লুংগি’। ফ্রি টাউন থেকে ১ ঘণ্টা একটা ছোট ফেরিতে আটলান্টিক পার হয়ে লুংগি এয়ারপোর্টে যেতে হয়। ঝড় বৃষ্টির কারণে আমি একটু বেশিই চিন্তিত ছিলাম। কারণ আমার সমুদ্র যেমন ভালো লাগে, তেমনি উত্তাল সমুদ্র ভয়ও লাগে৷ আমার ফেরি, যেটাকে ‘sea coach’ বলা হয়, সেটার টাইম ছিল রাত ২টায়। আমি সন্ধ্যা থেকে আশায় ছিলাম যে আবহাওয়া রাতে হয়ত ভালো হবে। কিন্তু যত রাত বাড়ছে ততই ঝড়ও প্রকট আকার ধারণ করছে। শেষ পর্যন্ত ভয়ে ভয়ে রাত ১টায় sea coach টার্মিনালে গেলাম। লোকজন খুবই কম। আমার ফ্লাইট ছিল ভোর ৫:৩০টায় সিয়েরা লিওন থেকে মরক্কোর কাসাব্লানকায়। সেখান থেকে দুবাই হয়ে কলকাতায় ফেরার কথা। যাই হোক তার আগে তো সমুদ্রটা পাড়ি দিতে হবে।’

>>>মিথিলার পোস্ট দেখুন এখানে ক্লিক করে<<<

মিথিলা লিখেছেন, ‘রাত ২টায় যখন sea coach এ উঠে বসলাম তখন বোট ভীষণভাবে দুলছিল। তারপর মাঝ সমুদ্রে যাওয়ার পর দুলুনির সঙ্গে সঙ্গে মাথাটাও ঘুরতে শুরু করল। বিশাল বিশাল পানির ঝাপটা আসছিল। মনে মনে বিভিন্ন ধরনের দোয়া পড়তে পড়তে ঘড়িতে সময় যেন এগোচ্ছিলই না। শেষ পর্যন্ত ১ ঘণ্টা কে এক জীবন ভাবার আগ মুহূর্তে ফেরি ওপাড়ে পৌঁছাল। ফেরি থেকে নেমে টার্মিনাল অব্দি বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে যেতে যেতেই ভেজা কাক হয়ে গেলাম। তারপর একটা বাসে চড়ে লুংগি এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে বাজল ভোর ৪টা। তারপর ইমিগ্রেশনের বহু কসরত শেষ করে প্লেনে উঠতে গিয়ে আরেকটু ভিজলাম কারণ বাসে করে রানওয়ের কাছাকাছি গিয়ে প্লেন এ ওঠার সময় অবশ্যই কোনো ছাতার ব্যবস্থা ছিল না। যাক ওই ঝড়ের মধ্যে সমুদ্রে ডুবে না গিয়ে প্লেন পর্যন্ত যে যেতে পেরেছি সেটাই চৌদ্দ গুষ্টির ভাগ্য মনে হচ্ছিল! আমার ফ্লাইটটা ছিল ‘এয়ার মারোক’ যেটা লাইবেরিয়ার রাজধানী ‘মনরোভিয়া’ হয়ে কাসাব্লানকা যাবে। এই বিষয়টা আফ্রিকায় খুব কমন যে একটা প্লেন লোকাল বাসের মতো মাঝখানে দু-একটা জায়গায় থেমে যাত্রী তুলবে আর নামাবে। এই সময়ে বাকি যাত্রীদের কিন্তু প্লেন থেকে নামতে হবে না। প্লেনেই বসে থাকবে। তো মন্রোভিয়াতে ঘণ্টাখানেক থামাসহ সবমিলিয়ে ৮ ঘণ্টার মতো জার্নি করে দুপুর ২টায় কাসাব্লাংকায় পৌঁছানোর পর আরেক বিপদ হলো। আমার কাসাব্লাংকা থেকে দুবাইয়ের ফ্লাইটটা আমি মিস করলাম। এবার পরের ফ্লাইট আছে পরের দিন, আর এদিকে কাসাব্লাংকায় এয়ারপোর্টে কোনো হোটেল নেই, আর বাইরে ভিসা ছাড়া বের হওয়া যাবে না (অন অ্যারাইভাল ভিসা বাংলাদেশিরা পাবে না)। তো আমি আমার অফিসে যোগাযোগ করে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বুক করালাম যেটা বিকেলে ছাড়বে কিন্তু ঢাকায় যাবে। শেষ পর্যন্ত টার্কিশে চড়ে রাত ১টায় ইস্তানবুল পৌঁছানোর পর দেখলাম আমার ইস্তানবুল থেকে ঢাকায় যাওয়ার ফ্লাইটটাও সাড়ে ৫ ঘণ্টা ডিলেইড।

ঘুম চোখে ইস্তানবুল বিমানবন্দরে বসে পুরো ঘটনা শেয়ার করেন মিথিলা। লেখেন, ‘আপাতত আমি ইস্তানবুল এয়ারপোর্টে ঘুম চোখে এই রচনাটি লিখছি। আচ্ছা এর মধ্যে আমার লাগেজটা যে কোন ফ্লাইটে কোথায় চলে গেছে সেটা কিন্তু আমি এখনও জানি না, জানার চেষ্টা করারও শক্তি নেই। এই গল্পটা তাদের জন্য লিখলাম যারা শুধু সুন্দর ছবিগুলোই দেখে, তার পেছনের কঠিন সময়ের গল্পগুলো জানে না। এই যে গত তিন সপ্তাহ ধরে মেয়েকে বাড়িতে রেখে, হাজার হাজার মাইল বিভিন্ন দেশে, শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে, জার্নি করে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করা, সেটা নিতান্তই জীবিকার তাগিদে; আমোদ ফুর্তির জন্যে না। সবসময় সুন্দর ছবি আর ভালো কথাগুলো শেয়ার করি কারণ আমি যা কিছু ভালো, আর পজিটিভ সেটাই ভাগ করে নিতে চাই। একজন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কর্মী হিসেবে আমার কাজ এবং বিভিন্ন দেশে ব্র‍্যাকের কন্ট্রিবিউশান নিয়ে আমি ভীষণ গর্ববোধ করি। তাই পেছনের কঠিন সময়গুলোকেও অভিজ্ঞতা হিসেবেই দেখি। যাই হোক, আরও কম হলেও ১২ ঘণ্টার মতো জার্নি বাকি আছে। সবমিলিয়ে কত ঘণ্টা হলো সেটা হিসাব করার মানসিক অবস্থা আপাতত নেই। আমি দোয়া প্রার্থী।’

শুধু লম্বা পোস্টই নয়, সঙ্গে সেখানকার বেশ কয়েক টুকরো ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেছেন এই সমাজকর্মী।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে