কুষ্টিয়ায় পুলিশে দেওয়ায় পিয়নকে কুপিয়ে হত্যা, আহত ৮

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২; সময়: ৫:৪৮ অপরাহ্ণ |
কুষ্টিয়ায় পুলিশে দেওয়ায় পিয়নকে কুপিয়ে হত্যা, আহত ৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চোর ধরাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে একজন নিহত ও অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন। শনিবার সকালে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি বাজারে এঘটনা ঘটে।

নিহত ওই ব্যক্তির নাম আব্দুর রাজ্জাক (৫৫)। তিনি কোমড়কান্দি গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে ও খোকসার গোপগ্রাম ভূমি অফিসের পিয়ন হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আহতরা হলেন নিহত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাশেদ (২৫), মেয়ে রোজিনা ও তাঁর স্ত্রী রেবেকা খাতুন (৪০), মৃত আতর আলীর ছেলে জাফর, আজেদ আলী (৬৫), আজেদ আলীর ফারুক (৪০),আমদ শেখ ও মজনু শেখ। তাঁরা নিজবাড়ি, কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ।

এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আসামীপক্ষের বেশকিছু ঘরবাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায় এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে তাঁদের নাম পরিচয় এখনো প্রকাশ করেনি পুলিশ। বর্তমানে কোমড়কান্দি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও ডিবি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

শনিবার সকাল ১১ টার দিকে কোমড়কান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও ডিবি পুলিশের অবস্থান। বেশকিছু ঘরবাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাটের চিহৃ রয়েছে। আসামীপক্ষের বাড়িতে নেই কোনো পুরুষ। আতঙ্কে পালাচ্ছে মহিলারাও। কয়েকজনকে গরু-ছাগল নিয়ে যাচ্ছে।

নিহতের স্বজনরা ও এলাকাবাসী জানায়, গত শুক্রবার রাতে এলাকায় চোর ঢুকেছিল। ৫ নং ওয়ার্ডের পরাজিত মেম্বর ফিরোজ খাঁর লোকজন চোরকে ধাওয়া করেছিল। ধাওয়া খেয়ে চোর বর্তমান মেম্বর আব্দুস সাত্তারের সমর্থক নিহত রাজ্জাকের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল। এমময় রাজ্জাক ও তার লোকজন চোরকে মারপিট করতে বাঁধা প্রদান করে এবং পুলিশের কাছে সোপার্দ করে। এনিয়ে ফিরোজা খাঁ আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে বসাবসির কথা বলে রাজ্জাককে কোমড়কান্দি বাজারে ডেকে আনে।

এরপর রাজ্জাক কোমড়কান্দি বাজারে পৌছালে প্রতিপক্ষের সুরদ্দিন তাঁকে ছুরিকাঘাত করে এবং প্রতিপক্ষরা রাজ্জাকসহ তাঁর সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায়। এতে নিহতের ছেলে, স্ত্রীসহ অন্তন ৮ জন আহত হয়েছেন।

পুলিশ জানায়, চোর ধরাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহত হয়েছেন। বেশকয়েকজন আহত হয়ে রয়েছে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

ঘটনার পর থেকেই পরাজিত মেম্বর ফিরোজ খাঁসহ তাঁর লোকজন পারিয়েছে। এবিষয়ে তাঁর সমর্থক মন্টুর স্ত্রী খালেদা খাতুন বলেন, সাত্তারের মেম্বর অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে ভাংচুর চালাচ্ছে। টাকা, স্বর্ণ, গরু বাছুর সব লুট করে নিয়ে গেছে।

নিহতের মেয়ে শামিমা খাতুন বলেন, সকালে বসাবসির কথা বলে ফিরোজ, শহিদুল, লিমনরা বাবা ডেকে নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে। পরে বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। আমার মা, ভাই, বোন সবাইকে কুপিয়েছে। আমি হত্যার বদলে হত্যা চাই।

৫ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার আব্দুস সাত্তার জানান, শুক্রবার রাতে চোরকে আশ্রয় দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে শনিবার সকালে বৈঠকের কথা বলে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে শত শত লোকের সামনে ছুরিকাঘাত করে আব্দুর রাজ্জাককে হত্যা করা হয়েছে। হামলায় আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, তু্চ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।’

তিনি আরো বলেন, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই নাম পরিচয় বলা যাচ্ছেনা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে