মহাদেবপুরে মাদ্রাসায় গোপনে কর্মচারী নিয়োগের চেষ্টার অভিযোগ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২; সময়: ৫:০৬ অপরাহ্ণ |
মহাদেবপুরে মাদ্রাসায় গোপনে কর্মচারী নিয়োগের চেষ্টার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, মহাদেবপুর : নওগাঁর মহাদেবপুরের সদ্য এমপিওভুক্ত সমাসপুর দারুল উলুম ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে গোপনে তিনজন কর্মচারী নিয়োগের পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতির বিরুদ্ধে।

ওই মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হওয়ার পর মাদ্রাসায় পিয়ন, আয়া ও নিরাপত্তা প্রহরী পদে নিয়োগের জন্য সমাসপুর গ্রামের তিনজন প্রার্থীর সাথে গোপন ৩০ লক্ষ টাকায় সমঝোতা হয়। মাদ্রাসার সুপার আয়া পদের জন্য পদের জন্য ৮ লক্ষ টাকা, নিরাপত্তা প্রহরী পদের জন্য ১০ লক্ষ টাকা এবং পিয়ন পদের জন্য ১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তিনজনকে নিয়োগের সমঝোতায় নাম সর্বস্বহীন দুটি দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমান মোবাইল ফোনে সুপারের নিকট কোন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছেন জানতে চাইলে অনেক চেষ্টার পর একটি পত্রিকার নাম বলতে পারলেও অপরটির নাম বলতে পারেননি তিনি। তবে গত সোমবার আবেদনের তারিখ শেষ হয়েছে বলে জানান। বিধি মোতাবেক বহুল প্রচারিত পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে নাম সর্বস্ব পত্রিকায় প্রকাশ ও মাদ্রাসার নোটিশ বোর্ডে না টাঙিয়ে শুধুমাত্র নিয়োগের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রার্থীদেরকে কপি দিয়ে তাদের কাছ থেকেই আবেদন গ্রহণ করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। ওই পদগুলোর জন্য আবেদনে ইচ্ছুক ব্যক্তিগণ প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কপি, পত্রিকার নাম বা প্রকাশের তারিখ জনতে চাইলে মাদ্রাসার সুপার আবুল কালাম আজাদ তাদের সাথে অত্যন্ত খারাপ আচরণও করেন এবং পত্রিকার নাম ও প্রকাশের তারিখ বলবেন না জানিয়ে তাদেরকে পত্রিকা খুঁজে নিতে বলেন।

তিনি কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা বললেও ওই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির কোন সদস্যই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ বা পত্রিকার নাম জানেন না বলে জানান। এমনকি বিষয়টি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যদের নিকটও গোপন রাখা হয় বলেও সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তারা। আবেদনের তারিখ শেষ হওয়ার পর কয়েকদিন পর বিষয়টি প্রকাশ হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য অভিযোগ করে বলেন, কাউকে না জানিয়েই মাদ্রাসার সুপার মোঃ আবুল কালাম আজাদ ও সভাপতি মোঃ আব্দুল মান্নান গোপন সমঝোতায় প্রায় ৩০ লক্ষ টাকায় আয়া, পিয়ন ও নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। পিয়ন পদের জন্য আবেদনে ইচ্ছুক সমাসপুর গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে মোঃ আব্দুর রহমান বলেন, মাদ্রাসার সুপার আবুল কালাম আজাদ পিয়ন পদে নিয়োগের জন্য তার সাথে ১১ লক্ষ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন।

পরে তার চেয়েও বেশি টাকা পাওয়ায় তাকে না নিয়ে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্যজনকে নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। আয়া পদের জন্য আবেদনে আগ্রহী মোছাঃ উম্মে হানির মা অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে নেয়ার জন্য ৮ লক্ষ টাকা চুক্তিবদ্ধ হলেও পরে গোপনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্যজনকে নেয়ার পাঁয়তারা করছেন মাদ্রাসার সুপার। মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান গোপনে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হওয়ার সময় কোন ঘর ছিল না। তিনি বিভিন্ন দোকানে ও ইটের ভাটায় প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা বাঁকী করে মাদ্রাসায় কয়েকটি ঘর নির্মাণ করেছেন।

সেগুলো টাকা পরিশোধের জন্য ওই তিনজনকে নিয়োগের মাধ্যমে কিছু টাকা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকাশ্যে বিজ্ঞপ্তি দিলে অনেকেই আবেদন করবেন, তারা তাদের মনোনিত ব্যক্তিকে নিতে পারবেন না। তাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়নি। তবে কত তারিখে এবং কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তা মাদ্রাসা সুপারই ভালো বলতে পারবেন। ওই মাদ্রাসার সুপার আবুল কালাম আজাদকে কত তারিখে এবং কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।

বিজ্ঞপ্তি আমরা কেন দিয়েছি, কোন পত্রিকায় দিয়েছি, আবেদনের শেষ তারিখ কবে? তা আপনাদেরকে কেন জানাবো, এটা আপনাদেরকে খুঁজে নিতে হবে। বিজ্ঞপ্তি আমরা কোথায় দিয়েছি, কেন দিয়েছি তা যেখানে বলার দরকার সেখানেই বলব। সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে কোন কিছুই জানাবেন বলে জানিয়ে দেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ভালো কাজ করিছে, সুপার খুব ভালো কাজ করিছে। আপনারা কেন নিউজ করবেন? অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব প্রতিষ্ঠানই টাকা নেন। এটা কমিটির উপর নির্ভর করে। তিনি এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের ডিজি মহোদয়ের সাথে কথা বলতে বলেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে