এক বছরেই লাফিয়ে বাড়লো কোটিপতির সংখ্যা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২; সময়: ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ |
এক বছরেই লাফিয়ে বাড়লো কোটিপতির সংখ্যা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নানা সমস্যা পরও দেশে বাড়ছে ধনীদের সংখ্যা। আর এতে আয় বৈষম্য চরম আকার ধারণ করছে। সাশ্রয়ী হতে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনা করে জানা গেছে, গেল একবছরে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ৮ হাজার ৫৩৯টি। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি সমাজের উচ্চবৃত্তদের মাধ্যমেই হচ্ছে। এর ফলে সমাজে আয় বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২২ সালের জুন ভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা এক লাখ ৮ হাজার ৪৫৭টি। তিন মাস আগে যা ছিল এক লাখ ৩ হাজার ৫৯৭টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে এর সংখ্যা ছিল এক লাখ এক হাজার ৯৭৬। ২০২১ সালের জুনে কোটি টাকার বেশি হিসাবের সংখ্যা ছিল ৯৯ হাজার ৯১৮টি।

সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে ৮ হাজার ৫৩৯টি। ছয় মাসে বেড়েছে ৬ হাজার ৪৮১টি ও তিন মাসে বেড়েছে ৪ হাজার ৮৬০টি। অর্থাৎ গত এক বছরে কোটিপতি বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৩১৫ শতাংশ (ছয় মাসে) ও ৩০০ শতাংশ (গত তিন মাসে)।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ কোটি ৯৫ লাখ ১৪ হাজার ৫১৩টি। যাদের হিসাবে জমা ছিল ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৭৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৩টি।

তাদের হিসাবে জমা ছিল ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৬টি। সে সময় তাদের হিসাবে জমা ছিল ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৭৬৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।

২০২২ সালের জুন পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৮৪১টি। যাদের হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ এক লাখ ৭৬ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটির মধ্যে রয়েছে ১১ হাজার ৮৬৫টি হিসাব। তাদের অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ ৮৪ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।

এছাড়া ১০ কোটি এক টাকা থেকে ১৫ কোটির টাকার হিসাব রয়েছে তিন হাজার ৭৬৩টি, ১৫ কোটি এক টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে এক হাজার ৭১৯টি, ২০ কোটি এক টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ১৫১ টি, ২৫ কোটি এক টাকা থেকে ৩০ কোটির মধ্যে হিসাব রয়েছে ৮৮৩ জনের, ৩০ কোটি এক টাকা থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫০২টি এবং ৩৫ কোটি এক টাকা থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩০৭ আমানতকারীর হিসাব। ৪০ কোটি এক টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৬২১টি। আলোচিত সময়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৮০৫ টিতে দাঁড়িয়েছে।

দেশে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা বাড়ার বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মানুষের আয় বৈষম্যের মাত্রা অসহনীয় হয়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি যে হারে বাড়ছে সে অনুপাতে আয় বাড়ছে না। যেকারণে অনেকে সঞ্চয় টাকা ভেঙে জীবন চালাচ্ছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির অসহনীয় চাপের মধ্যেও দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, আমাদের যে গ্রোথ বা পারকেপিটা ইনকাম বাড়ছে তা ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি সমাজের উচ্চবৃত্তদের মাধ্যমেই হচ্ছে। যে কারণে বৈষম্য দূর করা দরকার। নয়তো এই বৈষম্য সামনে আরো প্রকট হবে।

ড. আইনুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা মহামারির সময়ে বৈশ্বিক সংকটের সময় দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজের বড় অংশই পেয়েছে বড় ব্যবসায়ীরা। সবকিছু মিলিয়ে উপর লেভেলের লোকজনের আয় বেড়েছে। মোটা দাগে আমাদের আয় বৈষম্য কমাতে কর্পোরেট ট্যাক্স, সম্পদ ট্যাক্স না বাড়ালে অর্থনীতির যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তার সুবিধা পাবেন ১০/১২ শতাংশ মানুষ। কোটিপতিদের এমন হিসাব সংখ্যা বাড়া সমাজের জন্য ভালো লক্ষণ নয়। আমাদের জব লেস গ্রোথ হচ্ছে। প্রবৃদ্ধি বাড়লেই তাই খুশি হওয়ার তেমন কিছু নেই।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪টি, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালে ডিসেম্বর শেষে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা বেড়ে এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টিতে পৌঁছায়। আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান আমলে (২০০৮-২০২২ পর্যন্ত) কোটিপতি অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৮৯ হাজার ২৯৪টি। এর আগে বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া ও চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে ৬১০৫টি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে