জয়পুরহাটে দুই দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম আবার বেড়েছে হালিতে ৫ ও৭ টাকা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২; সময়: ৮:১৬ অপরাহ্ণ |
জয়পুরহাটে দুই দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম আবার বেড়েছে হালিতে ৫ ও৭ টাকা

এস এম শফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট : দুই দিনের ব্যবধানে জয়পুরহাটের বাজারে আবার ডিমের দাম বেড়েছে হালিতে ৫ থেকে ৭ টাকা। স্থানভেদে কোথাও কোথাও হালিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। চাল,ডাল,চিনি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্যের দাম বাড়তি। খুচরা ৩৫ টাকা হালির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা হালি।

কয়েকদিন আগে স্থান ভেদে ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা হালি বিক্রি হয়েছিল। তখন এই ঊর্ধ্বমুখী দামে ক্রেতাদের আরও কঠিন অবস্থায় পড়তে হয়েছিলো।আবার দুই দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম আবারও বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়েছে। খামারি ও ডিম ব্যবসায়ীদের দাবি, মাংস ও মাছের দাম বাড়ায় ডিমের ওপর চাপ বেড়েছে। জেলায় প্রতিদিন প্রায় এক লাখ পরিমাণ লাল ডিম ও সাদা ডিমের প্রয়োজন হলেও অল্প কিছু পরিমাণ স্থানীয়ভাবে পূরণ হয়। এজন্য জেলার বাইরে থেকে ডিম আমদানি করতে হয়।

মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর ) সকালে জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফার্মের লাল ডিম যা অন্য সময় প্রতি হালি ৩৪ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হতো, দাম বেড়ে তা এখন ৪০ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাদা ডিম প্রতি হালি ৪২ টাকা, সোনালি মুরগির ডিম ৩৩ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় ডিম কেনা থেকে বিরত থাকছেন অধিকাংশ ক্রেতা। ডিমের দাম বাড়ায় সাধারণ ক্রেতাদের সাথে সাথে বিপাকে পড়ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরাও। মাছুয়া বাজারে গত ২০ বছর ধরে পাইকারিভাবে ডিম বিক্রি করছেন আসলাম হোসেন বাবু ।

তিনি বলেন, গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা থেকে লাল ডিম ও রাজশাহীর তাহেরপুর থেকে সাদা ডিম আসে। সেখানকার সমিতিগুলো যেভাবে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় আমরা সেভাবে বিক্রি করি। আমরা ১০০ পিস লাল ডিম ৯০০ টাকায় কিনছি। ১০০ পিস এ পরিবহন খরচ আগে ছিলো ২০ টাকা এখন ৩০ টাকা। বিক্রি করছি ৯৪০ থকে ৯৫০ টাকা। একইভাবে সাদা ডিম কিনছি ৯৩০টাকায়। পরিবহন খরচ ৩০ টাকা। বিক্রি করছি ৯৮০ টাকায়।

ডিমের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পাইকারি এ ব্যবসায়ী বলেন, আমরা যেসব ডিমের খামারিদের কাছ থেকে ডিম কিনছি তারা বলছেন, পোলট্রি ফিড তৈরির ৮০ শতাংশ উপাদান আমদানি করে আনতে হয়। আন্তর্জাতিক মার্কেটে এসব উপাদানের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফিডের দাম বেড়েছে। ফলে খামারিরা লোকসান থেকে বাঁচতে ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

ডিমের দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারন জানতে জেলার জামালগঞ্জের খামারি আমজাদ সরদার এর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন,গ্রামে ছোট ব্রয়লার মুরগির খামারগুলো লোকসানে পড়ে গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে মুরগির খাদ্যের বস্তা ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ৬০০ টাকা। যে কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে ডিমের দাম।

এদিকে খুচরা ব্যাবসায়ীরা বলছেন, দুই দিনের ব্যাবধানে হালি প্রতি থেকে৫ থেকে ৭ টাকা বৃদ্ধি হওয়াতে ক্রেতাদের সাথে প্রচুর কথা বলতে হচ্ছে। তাদের সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। অনেক ক্রেতা দাম শুনে ডিম না নিয়েই চলে যাচ্ছেন।

বেশি দামে বিক্রি করে বেশি লাভ হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তারা বলেন, আমাদের লাভ কমে গেছে। দাম কম থাকলে আমাদের বেশি লাভ হয়। কিন্তু দাম বাড়তি থাকলে আমাদের লাভ কম হয়। কারণ দাম বেড়ে গেলে বিক্রি কমে যায়। আর বিক্রি কম হলেই তো লাভ নেমে যায়।

অন্য দিকে ক্রেতারা বলছেন, মাছ, মাংসের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল ডিম। কিন্তু সেই ডিমের দামও এখন আকাশ চুম্বি। ৪০ -৪২ টাকার কমে বাজারে লাল মুরগির ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। যা আগে ৩৪ টাকা ৩৫ টাকা করে হালি বিক্রি হতো।

সদরের মাছুয়া বাজারে বাজার করতে আসা গৃহিণী শাম্মী আক্তার বলেন, দামের কারণে কত দিন ধরে মাছ, মাংসের বাজারে যাওয়াই হয় না। আমার স্বামী বেসরকারি ছোট একটা জব করে। দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসাতে থাকি। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষেরা ভাতের সাথে ডিম ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ার ক্ষমতা থাকে না। কিন্তু এখন ডিমের দামও যেভাবে বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে আর কিছু দিন পর ডিমও খাওয়া যাবে না।

জয়পুরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছোট-বড়-মাঝারি রকমের প্রায় ১০ হাজার মুরগির খামার, ১০০টি হ্যাচারি ও ১১টি ফিডমিল রয়েছে। কিন্তু ক্রমাগত লোকসানের কারণে প্রায় ৫০ ভাগ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। করোনা মহামারির সময় সবচেয়ে বেশি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে কোনো খামার তৈরি হয়নি।

সূত্র আরও জানায়, জেলার খামারগুলো থেকে বছরে প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন সোনালি মুরগির মাংস ও প্রায় ৪০ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। তবে এ ডিম শুধু হ্যাচারির বাচ্চার জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে অল্প কিছু খামারি হাঁসের ডিম ও লাল ডিম উৎপাদন করেন।

জয়পুরহাট সোনালি পোলট্রি ফার্মার্স সমিতির যুগ্ম-আহ্বায়ক একরামুল হক বলেন, নানা কারণে বিশ্বব্যাপী ভুট্টা ও গমের দাম বেড়ে গেছে। পোলট্রি ফিড তৈরি করতে এ দুটি উপাদান লাগে। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফিডের দাম বেড়েছে আর এর সরাসরি প্রভাব ডিমের দামে পড়েছে।আগে দেখা যেত ছোট ছোট অসংখ্য মুরগির খামার। কিন্তু পোলট্রি ফিডের দামের কারণে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহফুজার রহমান বলেন, বিদেশি কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে পোলট্রি খাদ্যের দাম বাড়ছে। ফলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওপরও প্রভাব পড়েছে। পোলট্রি খাদ্যের দাম কমলে ডিমের দামও কমে যাবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে