রাজশাহীর ৪২০ প্রাথমিকে প্রধানের পদ শূন্য

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২; সময়: ১১:৪১ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীর ৪২০ প্রাথমিকে প্রধানের পদ শূন্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : সকল প্রতিষ্ঠানের একজন অভিভাবক বা মাথা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে অভিভাবক কিংবা মাথাই না থাকে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান অবস্থা কী রূপ হতে পারে তা অনুমেয়। আর এমনি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে রাজশাহীর ৪২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ফলে অবকাঠামোগত, খেলার মাঠসহ নানা সংকটে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্যতার কারণে অধিকাংশ বিদ্যালয় সহকারী দিয়ে চলছে। অনেকগুলোতে নেই সহকারী প্রধান শিক্ষক। এছাড়া বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকেরও সংকট রয়েছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সমস্যা দেখা দিয়েছে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডেও।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে রাজশাহীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৪টি। যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৭টিতে। এর মধ্যে ৪৩৮টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক থাকলেও পদ শূন্য রয়েছে ৪২০টিতে।

আর ১৯৩টি বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া আদালতে মামলা জটিলতায় ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব স্থগিত রয়েছে।

নগরীর বোয়ালিয়া থানায় প্রধান শিক্ষক নেই আটটি প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া গোদাগাড়ীর ৩১টি, চারঘাটের ৪৫টি, তানোরের ৭২টি, দুর্গাপুরের ৩১টি, পুঠিয়ার ৩৯টি, পবার ৩৩টি, বাগমারার ১০১টি, বাঘার ৩০টি ও মোহনপুরের ৩০টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শুধু প্রধান শিক্ষকই নয়, নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষ ট্রেনিংপ্রাপ্ত শিক্ষকের সংকটও রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মাত্র ছয় দিনের ট্রেনিং দিয়েই সঙ্গীত ও শরীরচর্চার ক্লাস নিতে হচ্ছে অন্য শিক্ষকদের। অনেক প্রতিষ্ঠানেই নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য নেই মাঠ। এতে শিক্ষা পরিবেশ আনন্দের না হয়ে একঘেয়েমি হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অভিভাবক-শিক্ষকরা।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যার ব্যবধান অনেক। এরমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকটও প্রকট। একজন শিক্ষককে একাধিক দায়িত্ব নিয়েও কাজ করতে হচ্ছে। এতে শিক্ষকরা চাইলেও ক্লাসে সবার প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন না। ফলে শিক্ষার্থীরাও ভালো শিখতে পারে না।

এছাড়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা পুরোটাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ভর। অধিকাংশ পরিবারের বাইরে কোচিং কিংবা প্রাইভেটে দেওয়ার আর্থিক সক্ষমতা নেই। আবার অভিভাবকরাও তেমন সচেতন না। এতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংকটগুলো বিশেষভাবে প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বেশি। যেটা শহর ও গ্রামের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার বৈষম্যকেও স্পষ্ট করছে। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংকট দূরীকরণে কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় উদ্যোগের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হেলেনা পারভীন বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। আমিই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক না থাকায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে গিয়ে বেগ পোহাতে হচ্ছে।’

নগরীর গোলজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজা খাতুন বলেন, ‘আমিসহ চারজন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস পরিচালনা করছি। এখানে আরও অন্তত দুজন শিক্ষক দরকার। সেটা নেই। এ কারণে দুই শিফটে ক্লাস নিতে হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিকের এক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট প্রতি মাসেই বাড়ছে। প্রতি মাসেই কেউ না কেউ অবসরে যাচ্ছেন। কিন্তু নিয়োগ হচ্ছে না। বিদ্যালয়গুলো থেকে চাহিদা আসছে। নানা সমস্যার কথা বলছে। কিন্তু এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ ছাড়া তেমন কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, শিক্ষক সংকট আর থাকবে না। প্রায় ৬০০ সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দ্রুতই হচ্ছে। আর যারা সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে আছেন, তাদের পদায়নও দ্রুতই হবে। অবকাঠামোগত সমস্যা নেই বললেই চলে। যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে আছে সেখানে প্রকল্প প্রস্তাবনাও চলে গেছে। আর শহরের কিছু প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব খেলার মাঠ নেই। জায়গা না থাকায় সেটা এখন সম্ভবও হচ্ছে না। এছাড়া গ্রামের প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ নিয়েও তেমন সমস্যা নেই।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে