ঝুলন্তপাড়ার বাসিন্দাদের জীবনও ঝুলন্ত

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২; সময়: ১২:৫৫ অপরাহ্ণ |
ঝুলন্তপাড়ার বাসিন্দাদের জীবনও ঝুলন্ত

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : কালাবগি গ্রামের জেলে মুনসুর আলী শেখের বয়স ৬৫ বছর। স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকেন শিবসা নদীতীরে ঝুলন্তপাড়ার ঝুপড়ি ঘরে। মাছ শিকার করে চলে তাঁর সংসার। তিনি বলেন, ‘নিজের জমি না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করি।

শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, অমাবস্যা-পূর্ণিমার গোনে জোয়ারের ঘরের পাটাতনে পানি উঠে যায়। তখন বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী পণ্ডিতচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠতে হয়। এভাবেই চলছে দিনের পর দিন।’

একই এলাকায় স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে বসবাস করেন জেলে আবদুল জলিল গাজী (৫৭)। তিনি জানান, বড় ছেলে তোরাব গাজীকে নিয়ে নদীতে মাছ শিকার করে কোনোমতে চলে সংসার। ধারদেনা করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। জমি কেনার মতো টাকা না থাকায় এখানে বসবাস করেন তিনি।

মুনসুর আলী ও আবদুল জলিলই নন; তাঁদের মতো ৫ শতাধিক পরিবারের বসবাস এখানে। প্রায় ২ হাজার মানুষ রয়েছেন এসব পরিবারে। প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারান তাঁরা। আবার ঝুপড়ি ঘর তোলেন সেখানে।

১৯৮৮ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর এই এলাকায় ঝুলন্ত ঘর তৈরি শুরু হয়। তারপর থেকে এর নাম হয় ঝুলন্তপাড়া। কয়েক দফা নদীভাঙনে বসতি ও জমি চলে গেছে শিবসা নদীতে। সিডর ও আইলার আঘাতে বসতভিটা আর রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় পাড়াটির পরিধি আরও বেড়েছে।

তাঁদের ঘরগুলো কাঁকড়া গাছের খুঁটি, শিরিষ কাঠের পাটাতন এবং গোলপাতার বেড়া দিয়ে তৈরি। ঘরেই চলে রান্না-খাওয়া, ঘুমানো। প্রতিটি ঘরের সঙ্গে রয়েছে ঝুলন্ত শৌচাগার।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন ঝুলন্তপাড়ার ঘরগুলো দুর্যোগ সহনশীল নয়। রাস্তার অবস্থা খুবই বেহাল। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার সময় জলোচ্ছ্বাসে ঝুলন্তপাড়া থেকে ফকিরের কোনা দ্বীপ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

দ্বীপটিতে যাওয়া-আসার মাধ্যম হলো নৌকা। নেই বিদ্যুৎ। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। অভাব-অনটন তাঁদের নিত্যসঙ্গী। নদী থেকে মাছ শিকার এবং সুন্দরবন থেকে বিভিন্ন সম্পদ আহরণ করে চলে সংসার।

শহিদুল গাজী বলেন, ‘শিবসা নদীর মোহনায় ভাঙন ও জোয়ারের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। একদিকে দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ, আরেক দিকে জীবিকার জন্য যুদ্ধ। চিকিৎসা নিতে নদীপথে যেতে হয় প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরে।’

ইউপি সদস্য নিমাই রায় বলেন, ঝুলন্তপাড়ার বাসিন্দাদের প্রধান সমস্যা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা, পানির সংকট, বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ না থাকা।

ইউএনও মিন্টু বিশ্বাস জানান, ঝুলন্তপাড়ার ১৯০টি ভূমিহীন পরিবারের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রায় ৮ একর খাসজমি নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, তাঁদের জীবনমান উন্নয়নসহ সমস্যা নিরসনের জন্য কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। কালাবগিতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে