চাল নিয়ে বিশ্ববাজারে আতঙ্ক চায় না ভারত

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২২; সময়: ৩:২৪ অপরাহ্ণ |
চাল নিয়ে বিশ্ববাজারে আতঙ্ক চায় না ভারত

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ভাঙা চাল রপ্তানিতে ভারতের সম্ভাব্য লাগাম টানার পদক্ষেপে বিশ্বের শীর্ষ এই রপ্তানিকারক দেশটি যে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি ছাড়াই অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সেটি দেখা যাচ্ছে।

ভারতের সরকার ভাঙা চালের রপ্তানির লাগাম টানার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। বিশ্ববাজারে যে পরিমাণ চাল রপ্তানি করে ভারত, তার প্রায় ২০ শতাংশই ভাঙা চাল।

ভারত এই চালের রপ্তানিতে বিধি-নিষেধ আরোপ করলে তা বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের বাজারে আরও বিশৃঙ্খলা এবং ক্ষুধা সংকটকে আরও গুরুতর করে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সব ধরনের চাল রপ্তানি সীমিত করা হলে বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব ভয়ানক হবে।

বিশ্বব্যাপী চালের বাণিজ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ রপ্তানি করে ভারত। যে কারণে দেশটির রপ্তানি নীতিতে যেকোনও ধরনের পরিবর্তন আনা হলে তা ভাতের ওপর নির্ভরশীল বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জন্য বড় সংকট তৈরি করবে।

২০০৭-০৮ সালের বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের সময় ভারত চালের রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল। পরে ভিয়েতনামের মতো বিশ্বের অন্যান্য প্রধান প্রধান চাল উৎপাদনকারী দেশ ভারতকে অনুসরণ করে।

এর ফলে আতঙ্কিত হয়ে লোকজনের কেনাকাটা বেড়ে যায়। সেই সময় প্রতি টন চালের দাম বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার মার্কিন ডলারও ছাড়িয়ে যায়। যা বর্তমান সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

সেই সময় খাদ্য সংকট মোকাবিলায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকারের নেওয়া নীতিমালা নিয়ে কাজ করেছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক পিটার তিমার। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে তিনি বলেন, ভাঙা চালের রপ্তানির ওপর ভারতের সম্ভাব্য বিধি-নিষেধে ২০০৭-০৮ সালের মতো সংকট তৈরির সম্ভাবনা নেই।

পিটার তিমার বলেছেন, ‘আসলে আমার মনে হয়, ভারতের কাজ করার জন্য এটি অত্যন্ত দায়িত্বশীল একটি উপায়। আমার সন্দেহ, ভারত যদি এই কাজ করে তাহলে বিদেশে প্রচুর সমালোচনা হবে।’

চলতি বছর বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি মোকাবিলায় ভারত চিনি এবং গমের রপ্তানি সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, তার দেশ বিশ্বকে খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

কিন্তু নরেন্দ্র মোদির এই ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ পরই বিশ্ববাজারে খাদ্য সরবরাহে ভারতের গতিপথ পাল্টে যায়। কারণ অভ্যন্তরীণ সরবরাহ সুরক্ষায় গত মে মাসে গম রপ্তানিতে বিধি-নিষেধ আরোপ করে ভারত।

এর ফলে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭ এর কৃষিমন্ত্রীরা ভারতের তীব্র সমালোচনা করেন। তারা বলেন, ভারতের এমন পদক্ষেপ বৈশ্বিক খাদ্য সংকটকে আরও গুরুতর করবে।

ভাঙা চালের ওপর সম্ভাব্য বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞায় ভারতের চাল রপ্তানির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ প্রভাবিত হবে। প্রক্রিয়াকরণের সময় এই ধরনের চাল ভেঙে যায়। আর এই ভাঙা চালের প্রধান ক্রেতা হলো চীন।

ভারতের কাছ থেকে কেনা এই চাল প্রাণীর খাবার হিসেবে ব্যবহার করে চীন। তবে আফ্রিকার কিছু দারিদ্রপীড়িত দেশ দামে সস্তা হওয়ায় ভারতের ভাঙা চালকে খাদ্যশস্য হিসেবে আমদানি করে।

আহমেদাবাদে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক সতীশ দিওধর বলেছেন, ভাঙা চালের ওপর কোনও বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলে তা অল্প কয়েকটি দেশে প্রভাব ফেলবে।

তবে তা বৈশ্বিক বাজারে পুরোমাত্রার সংকট তৈরি করবে না। অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং রপ্তানি বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখতে চায় ভারত।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে