বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংরক্ষণে আড়াইশো কোটি টাকার প্রকল্পে যা আছে

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২২; সময়: ৪:২০ অপরাহ্ণ |
বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংরক্ষণে আড়াইশো কোটি টাকার প্রকল্পে যা আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংরক্ষণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির একনেক। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর আগে ‘সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প-দ্বিতীয় পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রস্তাব গ্রহন করে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার ১০ হতে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা এবং খাল ও পুকুরপাড়ে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এমটিবিএফের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যয়ন করা হয়।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ১৭ দশমিক ৮২ লাখ ঘনমিটার খাল, বিল ও পুকুর পুনঃখনন, ১৩টি সাব মার্জড ওয়্যার নির্মাণ, ১৩২ সেট সোলার পাম্প ক্রয় ও স্থাপন, একটি পাইপ হোল্ডিং স্ট্রাকচার নির্মাণ, একটি বক্স কালভার্ট, ৫৩ দশমিক ১০ কিলোমিটার পাইপ লাইন ডিসমেন্টলিং, ২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রাস্তা পুনঃনির্মাণ, বিটুমিন কার্পেটিং এবং ২২০ দশমিক ৭০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করা হবে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সেচ সাব-সেক্টরের অন্যতম উদ্দেশ্য টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের সঙ্গে প্রকল্পটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট ৬ দশমিক ১ এ সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গেও প্রকল্পটি সঙ্গতিপূর্ণ। জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ এর ৫.৪.৩.২ এ উল্লেখিত ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা তৈরির মাধ্যমে পানির উত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার সাথেও প্রকলপটি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় ভূ-উপরিস্থ পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে সেচ সুবিধা এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, দেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত শুষ্ক, তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি, বৃষ্টিপাত হয় অনিয়মিত এবং ভূ-উপরিস্থ পানির স্বল্পতাও রয়েছে।

অন্যদিকে পদ্মা, মহানন্দা, পুনর্ভবা, রাণী ও বারনই নদীতে বর্ষাকালে প্রচুর পানি থাকে। এসব নদীর পানি সংরক্ষণ করে সেচকাজে ব্যবহার করা গেলে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার সীমিত করা সম্ভব হবে। বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রথম পর্যায় প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমি ইতোমধ্যে সুনিয়ন্ত্রিত সেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

এ প্রকল্পের সফলতা বিবেচনায় নিয়ে বিএমডিএ পদ্মা, মহনন্দা, পুনর্ববা, রাণী, আত্রাই ও বারনই নদীর বাস্তব পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করে সারা বছর পানি থাকে এবং সেচ কাজে ব্যবহার উপযোগী এমন এলাকাগুলো চিহিৃত করা হয়েছে। এসব নদী থেকে পানি উত্তোলন করে খালে সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনে মৌসুমে খালের পানি ব্যবহার করে ৩ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমি পরিকল্পিত সেচের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে