বাজারে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২২; সময়: ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ |
বাজারে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে বেড়েছে মোটা ও চিকন চালের দাম। যেখানে কেজি প্রতি পাইকারী বাজারে তিন থেকে চার টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেশি দিয়ে। এই দাম আরও বাড়ার শঙ্কা করছে ব্যবসায়ীরা।

চালের বাজারে এমন অবস্থার জন্য জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করছে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। অন্যদিকে খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন-কিছু সংখ্যক রাইস মিল মালিক ও মজুদদারদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণের কারণে দেশে সব ধরনের চালের দাম বাড়ছে।

এছাড়াও পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্যার প্রভাবে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে বলছেন কেউ কেউ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে যেখোনে বিঘাপ্রতি ২ থেকে ৪ মণ কমেছে বলছেন তারা।

পাল্লা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা। এই পরিস্থিতিতে চাল আমদানির অনুমতি থাকলেও ডলার সংকটে গতি হারিয়েছে আমদানিতেও।

শুক্র ও শনিবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাবুবাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। অন্যদিকে নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৯০ টাকা দরে। মাঝারি মানের চাল পাইজাম ও হাস্কি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। ছাড়াও আটাশ ৬, স্বর্ণা ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যেখানে গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

পাইকারী বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতিকেজি মিনিকেট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকা। নাজিরশাইল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৪ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। এছাড়াও আটাশ ৫৩ থেকে ৫৯ টাকা, পাইজাম এবং লাস্কি ৫০ থেকে বেড়ে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহ থেকে বেড়েছে ৩-৪ টাকা।

কারওয়ান বাজারে পাইকারী চাল বিক্রেতা পারভেজ বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। দুদিন আগে মিনিকেট চালের বস্তা (৫০ কেজি) কিনেছি তিন হাজার ২৫০ টাকায়। আজ সেই চালই তিন হাজার ৪০০ টাকা চাইছে। বস্তায় বেড়েছে ১৫০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বর্তমানে চলা লোডশেডিং উৎপাদনে ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। সামনে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলছেন তারা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের কারণে যে শুধু ভাড়া বেড়েছে তা নয়। চাল প্রক্রিয়াকরণের খরচও বেড়েছে। সেজন্য মিলগেটে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সামনে দাম আরও বাড়বে। বাজারে সবচেয়ে কম দামের চাল গুটি স্বর্ণা। এই মোটা চালও প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৭ থেকে ৪৮ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি বস্তা দুই হাজার ৩৫০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা। দ্রুত চাল আমদানি না করলে আরও সংকট বাড়বে বলছেন তারা।

বাবুবাজার পাইকারী চাল বিক্রেতা ইব্রাহিম জানান, প্রতিদিন মিলগেটে চালের দাম বস্তাপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়ছে। তিন থেকে চার দিনের ব্যবধানে সেটা ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ভালো মানের ব্র্যান্ডের মিনিকেট এখন বস্তাপ্রতি তিন হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্র্যান্ড বাদে ১০০ থেকে ২০০ টাকা কম মূল্যে মিলছে। বর্তমানে পাইকারীতে প্রকারভেদে প্রতিকেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকায়। রশিদ ব্র্যান্ডের চাল কয়েকদিন আগেও তিন হাজার ২২০ টাকায় বিক্রি করতাম, এখন সেটা তিন হাজার ৪৭০ টাকায় বিক্রি করছি। তারপরও অনেকের কাছে এই চাল নেই। এলাকা খুঁজে দু’একটা দোকানে পাবেন।

এর আগে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, গত বছর যেখানে আম্পানে ফসলের ক্ষতি হয়েছে, প্রকিউরমেন্ট হয়নি, জাতীয় পর্যায়ে খাদ্যের মজুদ ছিল ৪ লাখ মেট্রিক টন সেখানেও চালের মূল্যবৃদ্ধি করতে দেওয়া হয়নি। আর বর্তমানে খাদ্য পণ্যের মজুদ ২০ লাখ টন। তারপরও এ বছর চালের দাম বাড়ছে। যারা অবৈধ মজুদ করে চালের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এজন্য মিল মালিকরা ধান ৩০ দিন ও চাল ১৫ দিনের বেশি মজুদ করে রাখতে পারবে না। যারা অবৈধভাবে মজুদ করে রাখবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে