মানবিক নেতা বঙ্গবন্ধু

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২২; সময়: ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ |
মানবিক নেতা বঙ্গবন্ধু

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু এমন একজন নেতা ছিলেন, সাধারণ মানুষের কল্যাণই ছিল যাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য। তাঁর তৈরি সংবিধান, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, নানা প্রতিষ্ঠান, তাঁর প্রতিটি বক্তৃতা, প্রশাসনিক নির্দেশনাই প্রমাণ করে তিনি কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্বে বিশ্বাস করতেন। তাঁর ভাবনা ও কর্মই প্রমাণ করে তিনি কতটা মানবিক ছিলেন। তিনি সত্যি সত্যি বিশ্বাস করতেন এ দেশ সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে।

বঙ্গবন্ধু বারবারই মানুষের দুর্দশায় তাদের পাশে ছুটে গেছেন। তাদের সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি তাদের মাথা তুলে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল জায়গায় ছিল বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়। শাসক শ্রেণি জনগণের ন্যায্য দাবি মানতে অস্বীকার করলে তিনি রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন।

সাধারণ এক কর্মীর কর্তব্যনিষ্ঠায় মুগ্ধ হন বঙ্গবন্ধু

১৯৭৫ সালের ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় গণভবনে পায়চারী করছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর নজর যায় ক্যাবিনেট ডিভিশনের একটি কক্ষে। ছুটির দিনেও সেখানে মৃদু আলো জ্বলছিল। তিনি দেখতে পান—একজন লোক একাগ্র চিত্তে কাজ করছিল। তার গায়ে জামা নেই। বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারেন, তিনি ক্যাবিনেট ডিভিশনের একজন সাধারণ কর্মচারী। নাম আব্দুল জলিল। অনেক কাজ থাকায় তিনি ছুটির দিনেও সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করছেন।

বঙ্গবন্ধু তাঁর সঙ্গে কথা বলে আরও জানতে পারেন, যাতে অতিরিক্ত বিজলী খরচ না হয়, সেজন্য তিনি কক্ষের দুটি বাল্বের একটি জ্বালিয়ে কাজ করছেন এবং ফ্যান না চালিয়ে জানালাটা খুলে খালি গায়ে কাজ করছেন। এই কর্মচারীর কর্মনিষ্ঠা দেখে বঙ্গবন্ধু মুগ্ধ হন এবং তার পদোন্নতির সুপারিশের পাশাপাশি তাকে ৫শ’ টাকা নগদ পুরস্কৃত করেন। ইত্তেফাকে আগস্টের ৩ তারিখ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

দুর্যোগে দুর্ভোগ দেখে কেঁদেছেন তিনি

১৯৭৩ সালের ১৫ এপ্রিলের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, ফরিদপুরের টর্নেডো বিধ্বস্ত এলাকা থেকে ঘুরে এসেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে তিনি মানুষের ‍দুর্ভোগ দেখে কেঁদেছেন। অন্যরা তাঁর স্নেহাস্পর্শে কেঁদেছেন। সম্ভাব্য সবকিছু করার নির্দেশ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। হেলিকপ্টারে করে দুর্গত এলাকায় যাওয়া মাত্রই জনগণ চারদিক থেকে দৌড়ে এসে তাঁকে ঘিরে ধরে।

বঙ্গবন্ধু তাদের দুঃখের কাহিনি শোনেন এবং অভিভূত হয়ে পড়েন। ঝড়ের হাত থেকে বেঁচে আছেন—এমন একজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তাঁর চোখ ছল ছল করে ওঠে। তিনি তাকে বুকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তার জন্য কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু।

দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কালবিলম্ব না করে ব্যাপকভাবে শীতকালীন ফসল উৎপাদনের জন্য দুর্গতদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। ১৯৭৩ সালে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ফসল তুলে তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি তিনি কঠোর ও একনিষ্ঠ পরিশ্রম করার আহ্বান জানান। এই দিন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলার কয়েকটি দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন।

এসব এলাকায় বিপুল জনসমাবেশে বক্তৃতা করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারাক্রান্ত এক আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয় এসে আমাদের খাবারের এক বিরাট অংশ নিয়ে গেছে।’ তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস যদি আর একমাস পরে আসতো, তাহলে এমন বেশুমার ক্ষয়ক্ষতি আমাদের হতো না। কিন্তু আল্লাহ চাইলে আমরা আরও অনেক বেশি ফসল পেতে পারি।’ তবে সে জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, সৎ হতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বঙ্গবন্ধু দুর্গত এলাকার জনগণের জন্য ত্রাণ ও সাহায্য তৎপরতা জোরদারের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যারা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রকৃত গরিব, তাদের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু যারা ক্ষতিগ্রস্ত নয়, সাহায্য পাওয়ার যারা অনুপযুক্ত, তাদের কাছে যেন কোনোভাবেই তা না যায়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু সবসময় স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে কৃষক শ্রমিককে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানাতেন। তিনি সব জনসভায় বলতেন, ‘শ্রমিক ভাইদের কাছে আমার অনুরোধ। তোমাদের বারবার বলেছি এখনও বলছি, প্রোডাকশন বাড়াও’। একই সঙ্গে তিনি বলতেন, ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই।

বাহাত্তরের সংবিধানের যে মূল বিষয়গুলো ছিল, সেগুলোর দিকেও নজর দিলে তাঁর মানবিকতার প্রমাণ মেলে। তার মধ্যে ছিল—গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, বিকেন্দ্রীকরণ, বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন, পল্লি উন্নয়ন, কৃষি বিপ্লব, শ্রমিকের মুক্তি, সমবায় ও ব্যক্তি খাতকে উৎসাহ প্রদান, রাষ্ট্রীয়করণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ, মৌলিক চাহিদা পূরণ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে