মহাদেবপুরে জাল সনদে ১১ বছর শিক্ষকতা করার অভিযোগ

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২২; সময়: ১:৫৩ অপরাহ্ণ |
মহাদেবপুরে জাল সনদে ১১ বছর শিক্ষকতা করার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, মহাদেবপুর : নওগাঁর মহাদেবপুরে জাল সনদে ১১ বছর ধরে চাকরি ও সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পাহাড়পুর জিতেন্দ্রনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক বিপ্লব কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত শিক্ষক বিপ্লব কুমার মন্ডল গত ২০১১ সালের ২২ আগস্ট তারিখে পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক ২০০৭ সালের বিজ্ঞান বিষয়ের (উদ্ভিদ বিদ্যা) পাশ করা একটি শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিয়ে আবেদন করলে ওই বছরই ১৬ নভেম্বর তারিখে গঠিত নিয়োগ বোর্ডে তার চাকরি হয়। যার নিবন্ধন নং ৭০০০২৫৮/২০০৭, এ নিবন্ধন পরীক্ষায় তার রোল নম্বর ১১১৫০৫৫০ এবং পরীক্ষার ফল প্রকাশের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০০৭ খ্রিঃ।

নিয়োগের পর শিক্ষক বিপ্লব কুমার মন্ডল ১৫ ডিসেম্বর ওই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং তার নিয়োগকালীন নিবন্ধন সনদ দিয়েই ২০১২ সালের ১ নভেম্বরে এমপিওভুক্ত হন। এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সরকারি কোষাগার থেকে বেতন ভাতা বাবাদ প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছেন।

চলতি বছরের ২৪ মে এনটিআরসিএ সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক পত্রে তিনি শিক্ষক বিপ্লব কুমার মন্ডলের নিয়োগকালীন সকল কাগজপত্রসহ তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের কপি চেয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে পত্র প্রেরণ করেন। সে পত্র মারফত জানা যায়, সহকারী শিক্ষক (উদ্ভিদ বিদ্যা) বিপ্লব কুমার মন্ডল, পিতা: বিমল চন্দ্র মন্ডল, রোল নম্বর: ১১১৫০৫৫০; রেজি নম্বর: ৭০০০২৫৮, ৩য় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা-২০০৭ এর শিক্ষক নিবন্ধন সনদের সঠিকতা যাচাই করা প্রয়োজন।

সে প্রেক্ষিতে উক্ত শিক্ষকের শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি, শিক্ষাগত যোগ্যতার অনুলিপি, জাতীয় পরিচয়পত্র, নিয়োগপত্র ও যোগদান পত্রের ফটোকপি সত্যায়ন পূর্বক জরুরি ভিত্তিতে এনটিআরসিএ অফিসে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। কাগজপত্র যাচাই অন্তে শিক্ষক বিপ্লব কুমার মণ্ডল জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদে চাকরি করেছে এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন গত ২৭ জুলাই বুধবার প্রধান শিক্ষককে পাঠিয়েছেন এনটিআরসিএ।

এনটিআরসিএ থেকে গত ২৭ জুলাইয়ে প্রেরিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিপ্লব কুমার মন্ডল যে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিয়ে চাকরি নিয়েছেন এ সনদটি অন্য ব্যক্তির বিপ্লব কুমার মন্ডলের নয়। প্রকৃত সনদধারীর নামঃ খোরশেদা আক্তার, পিতা: মোঃ চাঁন মিয়া, মাতাঃ রোকেয়া বেগম, জেলাঃ কুমিল্লা বিষয়ঃ প্রাণীবিদ্যা, প্রাপ্ত নম্বর: আবশ্যিকে ৫৩ ও ঐচ্ছিকে ৫৩।

এ পত্রে আরও জানা যায় যে, সে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন মর্মে দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। একারণে জাল ও ভুয়া সনদধারীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে থানায় মামলা দায়ের করে তার অনুলিপিসহ এনটিআরসিএ অফিসকে অবহিত করার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, এনটিসিআরএ হতে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাইয়ের নির্দেশ দিলে বিপ্লব কুমার মন্ডল নিয়োগ বোর্ড গঠন ও যোগদানের ১বছর পর ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন। তিনি যে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিয়ে চাকুরী নিয়েছেন সেই সনদের তথ্য যাচাইয়ের জন্য না পাঠিয়ে নিয়োগের ১ বছর পরে পাস করা ১০১১১১১২ নং সিরিয়াল ও রোল নম্বরের শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি যাচাইয়ের জন্য এনটিআরসিএ তে পাঠিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে জানতে বিপ্লব কুমার মন্ডল মুঠোফোনে জাল সনদ ব্যবহার করে চাকরি নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নিয়োগকালীন সময়ে কিছু সমস্যার কারণে ওই সনদ ব্যবহার করে চাকরি নিয়েছিলেন তবে নিয়োগের পরের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং পাশ করা সঠিক সনদপত্র জমা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মায়া রানী সাহা অসুস্থতার কারণে কথা বলতে পারবেন না জানিয়ে মুঠোফোনের সংযোগটি কেটে দেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে